বাড়ির টিনে লাল-গেরুয়া চলবে না! কোন যুক্তিতে এ হেন নিদান মমতার?

Mamata Banerjee: বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরের বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মাত্র পাঁচটা বাড়ি নিয়ে জয়পুর যদি পিঙ্ক সিটি হতে পারে, তাহলে রাজ্যের নিজস্ব রং এখানে কেন মানা হচ্ছে না?"

জমি জবরদখল, বেআইনি পার্কিংয়ের পর এবার বাড়ির রং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কয়েক দিন ধরেই একের পর এক বিষয় নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী, মন্ত্রী থেকে শুরু করে পুরসভা, প্রশাসন বা পুলিশ, মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনার হাত থেকে বাঁচতে পারেননি কেউই। বৃহস্পতিবার সেই নিয়ে ফের বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে উত্তরবঙ্গের বাড়ির ছাদ কেন লাল বা গেরুয়া, সেই নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেন মমতা। এমনকী ছাদে লাগানোর জন্য উত্তরবঙ্গে ভিন্ন রঙের টিন কীভাবে আমদানি হচ্ছে, তা-ও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন মুখ্যসচিবকে।

রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর পরই গোটা রাজ্যের সমস্ত বাড়িঘরকে নীল-সাদা রঙে রেঙে ফেলতে তৎপর হয়েছিল তৃণমূল সরকার। সরকারি প্রশাসনিক ভবনগুলিকে সেই রঙে রাঙানো হয়েইছে। এমনকী ব্যক্তির বাড়িতে ওই রং করা হলে বিশেষ করছাড়ের কথাও ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে মানুষ সরকারের সেই রায় মেনে তাদের ব্যক্তিগত বাড়িঘর নীল-সাদা করতে বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। তবে এত বছর পরে সরকারের সেই নির্দেশিকা কেন সার্বিক ভাবে মানা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: শহর জুড়ে বাড়ছে পার্কিং জুলুম! বিজেপিকে দুষে এবার কড়া সিদ্ধান্ত নিলেন মমতা

বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরের বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মাত্র পাঁচটা বাড়ি নিয়ে জয়পুর যদি পিঙ্ক সিটি হতে পারে, তাহলে রাজ্যের নিজস্ব রং এখানে কেন মানা হচ্ছে না? উত্তরবঙ্গের সব বাড়িতে লাল বা গেরুয়া টিন লাগিয়ে দিয়েছে। যারা ওই টিন সরবরাহ করে তাদের বলতে হবে, এটা আমাদের রাজ্যের রং নয়। মুখ্যসচিব এই কাজ করবেন। যে যেমন খুশি জামাকাপড় পরতে পারে। নিজের ইচ্ছেমতো বাড়িও তৈরি করতে পারে । কিন্তু বাড়ির ছাদ লাল, গেরুয়া করে দেবে কেন?’’ কেন্দ্রকে নিশানা করে মমতা এ-ও বলেন, ‘‘মেট্রো স্টেশন সব গেরুয়া করে দিয়েছে। দলের রং কেন থাকবে? আমার দলের রং তো ব্যবহার করি না!..পূর্ত দফতরকে বলব, নবান্নের রং সবাইকে পাঠাতে হবে। মুখ্যসচিবের মাধ্যমে সব দফতরে যাবে।’’

ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, কলকাতার মতো শহরে ভোট টানতে এবার তবে রঙের কড়া অনুশাসন বসাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের অনেকের প্রশ্ন, তবে কি মুখ্যসচিবকে এমন কোনও পদক্ষেপ করতে বলছেন মুখ্যমন্ত্রী, যাতে তারা টিনেক সরবরাহকারীদের ডেকে নির্দেশ দেন, রাজ্যের নির্ধারিত নীল-সাদা ছাড়া অন্য় কোনও রঙের টিন আনা যাবে না বা ব্য়বহার করাও যাবে না? আদৌ কি তেমনটা সম্ভব।

বৃহস্পতিবার বেআইনি পার্কিং প্রসঙ্গে বিজেপিকে দোষেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন গেরুয়া বা লাল বলতে কি আসলে রাজ্যের দুই মুখ্য বিরোধী দলকেই নিশানা করতে চাইছেন মমতা? এ প্রসঙ্গে বিধানসভায় বিজেপির সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর অমানবিক মুখ খুব দ্রুত প্রকাশ পেয়েছে। যে কোনও দখলদারির পিছনে দিদিমণির দুষ্টু-দামাল ভাইয়েরা। উনি লাল, গেরুয়া বলে কী বোঝাতে চাইছেন? পুরসভা নির্বাচনের আগে পুর-এলাকাগুলো তো বিরোধীমুক্ত করেছিল তৃণমূল। তা হলে সেই নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করা হোক।’’ অন্যদিকে, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন বাড়ির রং নীল-সাদা করলে কর ছাড় মিলবে। লোকে তাতে সাড়া দেয়নি। কে কোন রং পছন্দ করবেন, সেটা মানুষের স্বাধীনতা। কে কী খাবে, বিজেপির সরকার ঠিক করে দিতে চায়, মুখ্যমন্ত্রীও এক রঙে সব রাঙাতে চান!’’

আরও পড়ুন: মমতার বিধান: হকার বসালেই গ্রেফতার, পুনর্বাসন পাবে উচ্ছেদ হওয়ারা?

সোমবার পুরবৈঠকে বেআইনি ভাবে জমিজবরদখল-সহ একাধিক অনিয়ম নিয়ে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ছিল প্রোমোটারিরাজ, পুকুর বোজাইয়ের মতো ইস্যুও। সেই নিয়ে রাজ্যের নেতামন্ত্রীদের বিরুদ্ধে তোপও দাগেন মুখ্য়মন্ত্রী। এমনকী বাংলার পরিচয়-অস্তিত্ব নষ্ট করার চেষ্টা চলছে বলেও মন্তব্য করেন মমতা। এরপরেই শুরু হয়েছিল শহর দখলমুক্ত করার প্রশাসনিক অভিযান। সেই নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই বৃহস্পতিবার বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে বেআইনি পার্কিংয়ের মতো একাধিক বিষয় নিয়ে তোপ দেগে বসেন মমতা। নিশানা করেন বিজেপিকেও। শহর দখলমুক্ত, পরিষ্কার করা, দলদুর্নীতি রুখতে বিভিন্ন রকম চেষ্টাকে মানুষ ভালো চোখে দেখলেও বাড়ির রং বা বাড়ির টিনের রং নিয়ে নিয়মকানুনে বেঁধে ফেলার চেষ্টাকে ভালো চোখে দেখছে না বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

More Articles