সংবিধান আছে তাই নাগরিক বাঁচে
Constitutional Rights: সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বিগত কয়েক দশকে বার বার সংশোধন ঘটানো হলেও, দেশের সমাজ এবং রাজনীতি এখনও সংবিধান নির্ভর।
সংবিধানের মধ্যে নিহিত থাকে রাষ্ট্রের সত্তা। সেই সত্তা থেকে তৈরি হয় আইনকানুন, যা দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। তাই গণতন্ত্র থাকুক বা না থাকুক, অধিকাংশ দেশেরই নিজস্ব সংবিধান রয়েছে। ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, সৌদি আরব, ইজরায়েলের মতো কিছু দেশের লিখিত সংবিধান নেই। কিন্তু নিজস্ব নিয়ম-কানুন রয়েছে তাদের, যার উপর ভিত্তি করে চলে শাসনকার্য। ভারতের যদিও নিজস্ব সংবিধান রয়েছে। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বিগত কয়েক দশকে বার বার সংশোধন ঘটানো হলেও, দেশের সমাজ এবং রাজনীতি এখনও সংবিধান নির্ভর।
একক ভাবে নাগরিকের ক্ষমতা সীমিত। ১৪০ কোটির দেশে বড় কিছু করতে গেলে, একার ক্ষমতায় কুলোয় না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিকাঠামো, সামাজিক সম্প্রীতি, শিল্প, সাহিত্য, সবকিছুই সম্মিলিত প্রয়াস। তাই গণতন্ত্রে সকলের উন্নয়ন, সামগ্রিক কল্যাণের কথা যখন ওঠে, সব নাগরিকের স্বার্থরক্ষার কথাই ভাবাই হয়। কোনও বিশেষ ব্যক্তি বা সম্প্রদায় নয়, নাগরিকদের প্রত্যেকের সমান সুযোগ-সুবিধা, জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের ভাল থাকা, খারাপ থাকা গুরুত্ব পায়, যার মুখপত্র দেশের সংবিধান।
গণতন্ত্রে যেখানে সকলের কল্যাণ প্রাধান্য পায়, স্বৈরতন্ত্রে রাষ্ট্রশক্তি সমাজের কিছু মানুষকেই প্রাধান্য দেয়। সরকারের ঘনিষ্ঠ, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষই যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। যে কারণে সভ্যতার গোড়া থেকেই সম্মিলিত ভাবে শক্তি অর্জনের কথা ভেবে এসেছেন মানুষ। আবার ক্ষমতার অপব্যবহার রোখার রাস্তাও বের করা হয়েছে খুঁজে। সংবিধানের জন্ম সেখান থেকেই। তাই সংবিধান শুধুমাত্র আইন-কানুনের দলিল নয়, স্বৈরতন্ত্র এবং শোষণকারীদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার রক্ষাকবচ।
সংবিধান আসলে সমাজের সম্মিলিত শক্তির ভারসাম্য নির্ধারক। অনাচার এবং নৈরাজ্যের প্রকোপে পড়ে রাষ্ট্র যাতে ভেঙে না পড়ে, একই সঙ্গে রাষ্ট্র যাতে নাগরিকদের প্রতি দমন-পীড়নের নীতি গ্রহণ না করে, মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে না নেয়, তার ব্যবস্থা করে সংবিধানই। ভোটবাক্সে জনগণের সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্র যাতে ক্ষমতার অপব্যবহার না করে, লক্ষ্ণণরেখার মধ্যে থাকে, নিজেকে মানুষের ঊর্ধ্বে মনে না করে, তার জন্যই গণতন্ত্রে প্রহরীর ভূমিকা পালন করে সংবিধান।
পাশাপাশি, রাষ্ট্র এবং নাগরিকের মধ্যেকার দূরত্ব ঘোচানোর মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে সংবিধান। রাষ্ট্রশক্তির সামনে যাঁরা দুর্বল, তাঁদের রক্ষা করতে সংবিধান রাষ্ট্রের হাত-পা বেঁধে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে বিপুল জনসমর্থনে ভর করে সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠকে তুষ্ট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে সংবিধানে স্বীকৃত অধিকার এবং স্বাধীনতা সংখ্যালঘুদের রক্ষা করে। সংবিধানকে সামনে রেখেই সরকারের কাছে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে প়ারেন দেশের অনগ্রসর শ্রেণির মানুষজন।
আবার নাগরিকদের যে সমস্ত খামতি বা দুর্বলতা রয়েছে, তা অতিক্রম করতেও সংবিধানের প্রয়োজন পড়ে। অনেক সময় ভাল-মন্দের বিচার করতে পারেন না মানুষ। সাময়িক সন্তুষ্টির প্রলোভন এড়াতে না পেরে রাগ, আতঙ্গ এবং ঘৃণার বশবর্তী হয়ে মারাত্মক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। সেখানে অভিভাবকের ভূমিকায় রয়েছে সংবিধান। কোন কাজ করা যায়, কোনটা যায় না, কোন কাজের সাজা মারাত্মক হতে পারে, সংবিধানই সংজ্ঞা বেঁধে দেয়। অপরাধী শাস্তি পায়, বিচার পান পীড়িত।
১৪০ কোটির দেশে সাধারণ নাগরিকরা সংবিধান সম্পর্কে কতটা জানেন, সংবিধানে স্বীকৃত নিজেদের অধিকার সম্পর্কে তাঁরা কতটা অবগত, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে যদিও। কিন্তু সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ আশ্রয় হয়ে উঠেছে সংবিধান। সাংবিধানিকের কবচের কথা হয়ত জানেনই না অনেকে। তার পরও, সংবিধান আছে বলেই টিকে রয়েছেন তাঁরা। এক্ষেত্রে কিছু মামলার কথা উল্লেখযোগ্য।
আইসি গোলকনাথ, ওআরএস বনাম পঞ্জাব (১৯৬৭)
পাঞ্জাবের জলন্ধরের বাসিন্দা হেনরি এবং উইলিয়াম গোলকনাথের কাছে ৫০০ একর কৃষি জমি ছিল। নয়া আইনের আওতায় তাঁরা শুধু ৩০ একর জমিই রাখতে পারবেন বলে জানায় সরকার। মামলায় আদালত জানায়, কোনও ভাবেই মৌলিক অধিকার সংশোধন করতে পারবে না কেন্দ্র। পরে যদিও ১৯৭৩ সালে কেশবানন্দ বনাম ভারত সরকার মামলায় সেই রায় উল্টে যায় ১৯৭৩ সালে।
মানেকা গান্ধী বনাম ভারত সরকার-১৯৮০
১৯৭৬ সালের ১ জুন পাসপোর্ট হাতে পেয়েছিলেন মানেকা। ১৯৭৭ সালের ২ জুলাই আচমকাই তাঁকে পাসপোর্ট সমর্পণ করতে বলা হয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে। কোনও কারণও জানানো হয়নি। সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন মানেকা। আদালত জানায়, মানেকার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে সংবিধানে ২১ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করছে সরকার, যা কি না ব্যক্তি স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে। ওই রায়ের পরই একে একে বিশুদ্ধ জল, বিশুদ্ধ বাতাস, শব্দদূষণ থেকে নিষ্কৃতী, উন্নত শিক্ষা, জীবনের অধিকার, খাদ্যের অধিকার, চিকিৎসার অধিকারকে ২১ নম্বর ধারার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মহম্মদ আহমেদ খান বনাম শাহো বানো বেগম এবং অন্যরা-১৯৮৫
১৯৩২ সাল থেকে শাহো বানো এবং মহম্মদ আহমেদ খানের সংসার চলছিল। তাঁদের সন্তানও হয়। ১৯৭৮ সালে শাহো বানো এবং সন্তানদের বের করে দেন আহমেদ। খোরপোষ চেয়ে আদালেত মামলা করেন শাহো বানো। এতে তড়িঘড়ি তিন তালাক দিয়ে শাহো বানোকে ত্যাগ করেন আহমেদ। মুসলিম পার্সোনাল ল অনুযায়ী, ইদ্দতের তিন মাস পর শাহো বানোর প্রতি আর কোনও দায়িত্ব ছিল না আহমেদের। কিন্তু আদালত সাফ জানায়, ইদ্দতের তিন মাসে পরও শাহো বানোকে খোরপোষ দিতে হবে। প্রথমে মাসে ২০ টাকা খোরপোষের কথা বলে নিম্ন আদালত। পরে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট তা বাড়িয়ে ১৭৯ টাকা ২০ পয়সা করে। সুপ্রিম কোর্ট আরও ১০ হাজার টাকা নগদ দেওয়ার নির্দেশ দেয় আহমেদকে। যে কোনও ধর্মেরই মহিলা হোন না কেন, বিবাহবিচ্ছেদের পর তাঁর খোরপোষ প্রাপ্য বলে জানানো হয়। সংবিধানে উল্লেখিত ৪৪ ধারায় যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির উল্লেখ রয়েছে, এই মামলা তাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
সমলিঙ্গের বিবাহ মামলা-২০২৩
সমলিঙ্গের বিয়েতে আইনি স্বীকৃতির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। কিন্তু আদালত জানায়, ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকারের আওতায় বিয়ে পড়ে না। বিয়ে আসলে সামাজিক নীতি, আইনি নয়। যদিও সমলিঙ্গের যুগলদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত দিকগুলি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রকে কমিটি গড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভারতের সংবিধানের খসড়া রচনা করেছিলে বি আর আম্বেদকর। ১৯৪৯ সালের ২৫ নভেম্বর কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রকে যাঁরা বাঁচিয়ে রাখতে চান, তাঁদের উদ্দেশে জন স্টুয়ার্ট মিল বলে গিয়েছেন, ‘যত মহান ব্যক্তিই সামনে হোন না কেন, কখনও তাঁর পায়ে নিজের স্বাধীনতা অর্পণ করবেন না। বিশ্বাস করে তাঁর হাতে কখনও এত ক্ষমতা তুলে দেওয়া উচিত নয়, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলিই ধ্বংস হয়ে যায়’।” আম্বেদকরের বক্তব্য ছিল, “সংবিধান যত ভালই হোক না কেন, খারাপ মানুষের হাতে পড়লে তা খারাপ হয়ে যাবেই। আবার সংবিধান যত খারাপই হোক না কেন, ভাল মানুষের হাতে পড়লে, তা ভাল হতে বাধ্য।”
এখনও পর্যন্ত বার বার ভারতের সংবিধানে সংশোধন ঘটানো হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে সংবিধানের অস্তিত্বরক্ষা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও সংবিধান রাজনৈতিক টানাপোড়েনের বিষয়ে পরিণত হয়। ৪০০-র বেশি আসন পেলে এই সংবিধান পাল্টে নয়া সংবিধান আনা হবে বলে জানাতে থাকেন বিজেপি-র নেতারা। এর পাল্টা বিরোধীরা সংবিধান বাঁচানোর লড়াইয়ের ডাক দেন। সেই নিয়ে টানাপোড়েন চলছে এখনও। লোকসভায় শপথ নেওয়ার সময় বিরোধী সাংসদরা ‘জয় সংবিধান’ বলায় উষ্মা প্রকাশ করেন স্পিকার ওম বিড়লা। সাংবিধানিকে পদে আসীন স্পিকার সংবিধানের জয়ধ্বনিতে কেন আপত্তি তুলছেন, সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা।
এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে ভারতের সংবিধানে স্বীকৃত অধিকারগুলি দেখে নেওয়া যাক-
সাম্যের অধিকার
১৪- আইনের চোখে সকলে সমান। আইনের সমান সুরক্ষা প্রাপ্য সকলের।
১৫(৪)-অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান। সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে যাঁরা, তাঁদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
১৬(১)- নাগরিকদের সকলের সমান সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য। সরকারি চাকরিতে নাগরিকদের সমান সুযোগ দিতে হবে।
১৬(২)-ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ, জন্মস্থানের নিরিখে বৈষম্য নয়। অস্পৃশ্যতা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
১৬(৩)- আইন প্রণয়ন করে কোনও অঙ্গরাজ্য চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার শর্ত আরোপ করতে পারে।
১৬(৪) অনুন্নত শ্রেণির জন্য সংরক্ষণ থাকতে পারে।
১৬(৫) চাকরির ক্ষেত্রে কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
১৭- অস্পৃশ্যতা বিলোপ করা হল। অস্পৃশ্যতাজনিত যে কোনও আচরণ নিষিদ্ধ।
স্বাধীনতার অধিকার
১৯(১)এ- স্বাধীন ভাবে বাক ও মত প্রকাশের অধিকার। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, সার্বভৌমিকতা ও সংহতি রক্ষা, শালীনতা রক্ষা, আদালতের অবমননা অপরাধমূলক কাজে প্ররোচনা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে।
১৯(২)বি- শান্তিপূর্ণ এবং নিরস্ত্র ভাবে সমবেত হওয়ার অধিকার। যুক্তিসঙ্গত কারণে রাষ্ট্র তাতে বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারে।
১৯(৩)সি- জনগণের সমিতি বা ইউনিয়ন গঠনের অধিকার। এখানেও যুক্তিসঙ্গত কারণে রাষ্ট্র পদক্ষেপ করতে পারে।
১৯(৪)ডি- ভারতের সর্বত্র স্বাধীন ভাবে চলাফেরার অধিকার। জনস্বার্থে রাষ্ট্র বাধা দিতে পারে।
১৯(৫)ই- ভারতের ভূখণ্ডের যে কোনও অংশে থাকা এবং বসবাসের অধিকার।
১৯(৬)এফ- জীবিকা স্বরূপ নাগরিকদের যে কোনও কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকার। তবে যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিতে পারে সরকার।
৪৪তম সংবিধান সংশোধনের সময় বিধিনিষেধগুলি যোগ করা হয়।
২০(১)- বেআইনি কাজের জন্য কোনও ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে, যে সময় ওই কার্য ঘটান তিনি, সেই সময়ের আইন অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে, তার বেশি নয়।
২০(২)- একই অপরাধের জন্য এক ব্যক্তিকে একাধিক বার শাস্তি দেওয়া যাবে না।
২০(৩)- নিজের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্যদানে বাধ্য করা যাবে না অভিযুক্তকে।
২১- বেআইনি ভাবে কোনও ব্যক্তিকে জীবন এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। অর্থাৎ নাগরিকদের জীবন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ। হস্তক্ষেপ করা হলে যথাযথ কারণ দেখাতে হবে।
২২(১)-কোনও ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেফতার করা হলে, শীঘ্রই তার কারণ জানাতে হবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে তাঁকে।
২২(২)- আটক বা গ্রেফতারির পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে আদালতে পেশ করতে হবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া তার বেশি সময় আটকে রাখা যাবে না।
২২(৩)-তবে শত্রু দেশের সঙ্গে ষড়যন্ত্র বা সমগুরুত্বের অপরাধের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা যেতে পারে। তবে তার জন্য অনুমতি প্রয়োজন।
ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার
২৫(১)- প্রত্যেক নাগরিকের নিজ নিজ ধর্মপালন এবং ধর্মচর্চার অধিকার রয়েছে। শৃঙ্খলা এবং নৈতিকতার খাতিরে যদিও এই অধিকার নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। সামাজিক মঙ্গল এবং সংস্কারের জন্য হস্তক্ষেপ করতে পারে রাষ্ট্র।
২৫(২)এ-রাষ্ট্র ধর্মীয় আচরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অথবা ধর্মনিরপেক্ষ কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
২৫(২)বি- হিন্দু ধর্মের প্রতিষ্ঠানগুলিতে সকল শ্রেণির হিন্দুদের প্রবেশাধিকার সম্পর্কিত আইন চালু করা যেতে পারে। অর্থাৎ সামাজিক মঙ্গল ও সংস্কারের জন্য রাষ্ট্র ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে।
২৬- ধর্মদানের ব্যাপারে যে কোনও সংস্থা স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের অধিকারী প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং তাদের গোষ্ঠী।
ধর্ম বিষয়ক নিজ নিজ কার্যাবলী পরিচালনার অধিকার।
স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আহরণ করার অধিকারী এবং মালিকানা অর্জনেরও।
আইন অনুযায়ী সেই সকল সম্পত্তি পরিচালনার অধিকারী।
২৭- কোনও বিশেষ ধর্ম বা ধর্মীয় কার্যকলাপের জন্য কাউকে কর দিতে বাধ্য করা যাবে না।
২৪- সম্পূর্ণ ভাবে সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত স্কুলগুলিতে ধর্মশিক্ষা চলবে না।
সরকারের দ্বারা স্বীকৃত অথবা সরকারের আংশিক সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যাবে না।
রাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত এবং কোনও দাতা বা অছির প্রতিষ্ঠা করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দাতা যদি নিজের উইলে বিশেষ কোনও ধর্ম বিষয়ে শিক্ষাদানের কথা উল্লেখ করেন, সেক্ষেত্রে ধর্মশিক্ষা চলতে পারে।
শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার
২৩- মানুষ কেনাবেচা, জোরপূর্বক ভিক্ষা বা শ্রমদানে বাধ্য করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
২৪- ১৪ বছরের কম বয়সি শিশুদের কারখানা, খনি বা বিপজ্জনক কাজে নিযুক্ত করা যাবে না।
সংস্কৃতি ও শিক্ষার অধিকার
২৯ (১)- ভারতীয় ভূখণ্ডে বসবাসকারী নাগরিকরা নিজ নিজ ভাষা, লিপি এবং সংস্কৃতি ব্যবহারের অধিকারী।
২৯ (২)- সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, বংশ, জাতি বা শ্রেণি নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার। রাষ্ট্র কোনও সম্প্রদায়ের উপর জোর করে অন্য সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে পারে না।
৩০ (১)- সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনা করতে পারবেন।
৩০ (১)এ- সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি যদি অধিগ্রহণ করা হয়, তাহলে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
সাংবিধানিক প্রতিবিধান সমূহের অধিকার
৩২(১)- মৌলিক অধিকার আদায় করতে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন নাগরিকরা।
৩২(২)- মৌলিক অধিকারগুলি কার্যকর করতে সুপ্রিম কোর্ট বা রাজ্যের হাইকোর্টগুলি পাঁচ রকমের রিট (Writ) জারি করতে পারে, বন্দিপ্রত্যক্ষকরণ (বন্দিকে সশরীরে আদালতে পেশ), পরমাদেশ (নির্দেশ জারি), প্রতিষেধ (নিম্ন আদালতকে এক্তিয়ারের মধ্যে থাকার নির্দেশ), অধিকার পৃচ্ছা (যোগ্যতার নিরিখে পদের বৈধতা বিচার এবং অপসারণের ক্ষমতা) এবং উৎপ্রেষণ (নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে মামলা সরানো)।