গণতন্ত্রে 'রাজদণ্ড' কেন? সংসদ থেকে সরানো হবে মোদির প্রিয় সেঙ্গোল?

Sengol symbol of monarchy: সাংসদ আর কে চৌধুরী লিখেছেন, “সংবিধান গণতন্ত্রের প্রতীক এবং সেঙ্গোল রাজতন্ত্রের প্রতীক। আমাদের সংসদ গণতন্ত্রের মন্দির, রাজত্বের স্থান নয়।"

সেঙ্গোল বা রাজদণ্ড নিয়ে প্রথম চর্চা শুরু হয় নয়া সংসদ ভবন উদ্বোধনের সময়। সেই সময় নরেন্দ্র মোদির হাতে ওই রাজদণ্ড দেখে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে চর্চা শুরু হয় বিরোধী মহলে, চিন্তক মহলে। লোকসভা নির্বাচনের পরে সেই সেঙ্গোল নিয়েই ফের চর্চা। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, এবার বিরোধীদের সংখ্যা বেড়েছে লোকসভায়। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ আর কে চৌধুরী সংসদে ওই রাজদণ্ডের বদলে সংবিধান রাখার দাবি করেছেন। তিনি বলছেন, এই সেঙ্গোল গণতান্ত্রিক ভারতে রাজতন্ত্রের একটি প্রতীক।

সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই আর কে চৌধুরী স্পিকারের চেয়ারের পাশে সেঙ্গোলের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করে মাহতাবের কাছে একটি চিঠি জমা দেন। প্রো-টেম স্পিকার ভর্তৃহরি মাহতাবের কাছে তাঁর চিঠি যেতেই ইন্ডিয়া আর এনডিএ নেতাদের বাকযুদ্ধও শুরু হয়েছে। চিঠিতে মোহনলালগঞ্জের সাংসদ আর কে চৌধুরী লিখেছেন, “সংবিধান গণতন্ত্রের প্রতীক এবং সেঙ্গোল রাজতন্ত্রের প্রতীক। আমাদের সংসদ গণতন্ত্রের মন্দির, রাজত্বের স্থান নয়। আমি সেঙ্গোলকে সরিয়ে সেখানে সংবিধানের একটি বড় প্রতিরূপ রাখার অনুরোধ করছি।”

দলিত নেতা আর কে চৌধুরী স্পষ্ট প্রশ্ন তুলছেন, দেশ সংবিধান অনুযায়ী চলবে নাকি ‘রাজা কা দণ্ড’ (সেঙ্গোল) অনুযায়ী? সেঙ্গোল মানে ‘রাজদণ্ড’। সংবিধান বাঁচাতে সংসদ থেকে সেঙ্গোলকে সরানো তাই আশু কর্তব্য, মনে করছেন তিনি।

আরও পড়ুন- বিফলে গেল ক্যামেরামুখী ধ্যান! বিবেকানন্দের কাছেই হেরে গেলেন নরেন্দ্র মোদি?

 

গত বছর, মে মাসে নবনির্মিত সংসদ ভবনে স্থাপনের আগে এলাহাবাদের জাদুঘর থেকে সেঙ্গোলটি আনা হয়েছিল দিল্লিতে। কেন্দ্র সরকার তামিলনাড়ুর থেভারামের অধিনাম এবং ওদুয়ারদের নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শামিল হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।

আর কে চৌধুরীর তোলা এই প্রশ্নে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন এসপি প্রধান অখিলেশ যাদব। কনৌজের সাংসদ অখিলেশ বলছেন, “আমাদের সাংসদ বিষয়টি উত্থাপন করেছেন কারণ প্রধানমন্ত্রী নতুন সংসদে সেঙ্গোল স্থাপনের সময় মাথা নত করেছিলেন কিন্তু শপথ নেওয়ার সময় তিনি তা ভুলে যান। হয়তো আমাদের সাংসদ তাঁকে সেটিই মনে করিয়ে দিচ্ছেন।” মিসা ভারতী, আরজেডি-র মনোজ ঝা এবং কংগ্রেসের রেনুকা চৌধুরী সহ ইন্ডিয়া জোটের অন্য নেতারাও আর কে চৌধুরীর পাশেই দাঁড়িয়েছেন।

“সেঙ্গোলটিকে জাদুঘরে পাঠানো উচিত। এটি গণতন্ত্রের নয়, রাজতন্ত্রের প্রতীক,” বলছেন মিসা। মনোজ ঝা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর চালচলন, পোশাক, অলঙ্কার খানিক রাজাদের মতোই। তাই সেঙ্গোল সরিয়ে সংবিধানের প্রতিরূপ রাখাই ভালো তাতে দেশ গণতন্ত্রের পথে চলবে। কংগ্রেসের রেণুকা চৌধুরীও বলছেন, “সমাজবাদী পার্টির সাংসদের দাবি অযৌক্তিক নয়। বিজেপি অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি না জেনেই সংসদে সেঙ্গোল প্রতিষ্ঠা করে। এই বিষয়ে কোনও ঐক্যমত ছিল না। অথচ সংসদ চলে ঐকমত্যের মাধ্যমেই।”

বিজেপি স্বাভাবিকভাবেই রাজদণ্ডের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে ফের। বিজেপির মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালার দাবি, সমাজবাদী পার্টি ভারতীয় ‘সংস্কৃতি’-কে আক্রমণ করতে কখনই দ্বিধা করে না। সেঙ্গোলকে সংসদ থেকে সরিয়ে দিয়ে সপা আসলে তামিলনাড়ুকে অপমান করতে চায়। "ডিএমকে এবং স্ট্যালিন কি তামিলনাড়ু থেকে আসা সেঙ্গোলের এমন অপমান মেনে নেবেন?” প্রশ্ন করেছেন শেহজাদ।

আরও পড়ুন- নয়া সংসদ ভবনে নরেন্দ্র মোদির ‘অভিষেক’! কোথা থেকে এল এই রাজদণ্ড?

তামিলনাড়ুর লোকসভা নির্বাচনে দ্রাবিড় মুনেত্রা কাঝগম বা ডিএমকে ৩৯টি আসনের মধ্যে ২২টি জিতেছে। কংগ্রেস ৯টি আসন পেয়েছে। বাকি ৮টি আসনে জয়ী হয়েছে অন্য দলগুলো।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তামিলনাড়ুতে ভোট পেতে কম কসরত করেননি। সেঙ্গোলকে সংসদে ঠাঁই দেওয়া ছিল অন্যতম নির্বাচনী স্টান্ট। ভোটের প্রচারে নয়বার তামিলনাড়ু সফর করেছেন তিনি। শেষ সফরে কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে ৪৫ ঘণ্টার ধ্যান করেছেন। কিন্তু এত করেও একটিও আসন তামিলনাড়ুতে জিততে পারেনি বিজেপি। তবে বিজেপি ১০.৬৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। যে ২৩ টি আসনে বিজেপি লড়ছিল, তার মধ্যে বিজেপি নয়টিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল—কোয়েম্বাটোর, নীলগিরি, চেন্নাই দক্ষিণ, চেন্নাই মধ্য, তিরুনেলভেলি, কন্যাকুমারী, তিরুভাল্লুর, ভেলোর এবং মাদুরাই। ফলে রাজদণ্ড তামিলনাড়ুর ক্ষমতা এনে দেয়নি বিজেপিকে। বরং সংবিধান ইন্ডিয়া জোটকে দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে নতুন মর্যাদা দিয়েছে।

More Articles