কোথায় কোথায় হকার উচ্ছেদ অভিযান? রাশ টানতেই বৈঠক ডাকলেন মমতা?

Evictions across Kolkata: ফুটপাত চত্বরে যে সমস্ত খাবারের দোকানগুলি ছিল সেই খাবারের দোকানগুলিও খালি করার কথা বলা হয়েছে। পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন কোনও নির্দেশিকা না আসা পর্যন্ত হকাররা বসতে পারবেন না ফুটপাথে...

রাজ্যের নিজস্ব পরিচিতি সঙ্কটে। বাঙালিদের জমি জবরদখল হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি পুরবৈঠকে জমি জবরদখল নিয়ে খড়্গহস্ত হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমলা থেকে মন্ত্রী, পুরপ্রতিনিধি থেকে পুলিশ, মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনার হাত থেকে বাঁচতে পারেনি কেউই। সোমবার জমি জবরদখল নিয়ে মমতার ক্ষোভের পর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে দেয় পুলিশ-প্রশাসন। বুধবারও দিনভর চলল সেই অভিযান।

সল্টলেক থেকে শুরু করে হাতিবাগান মার্কেট, এমনকী গড়িয়াহাটেও হকারদের জমি জবরদখল করে ব্যবসা করা নিয়ে রোষপ্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছিলেন, কারওর পেটের ভাত মারতে চান না তিনি। হকারদের জন্য আলাদা দোকানের বন্দোবস্ত করে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সরকারি জমি জবরদখল করে ব্যবসা নয় বলেই সাফ জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। যাদবপুরের প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে সরকারি জমি জবরদখলের অভিযোগ নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন মমতা।

আরও পড়ুন: জবরদখল হয়ে যাচ্ছে বাঙালিদের জমি? কেন ক্ষোভে ফুটছেন মমতা?

আর মমতার কড়া বার্তার পরে সোমবার রাত থেকেই বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে দেয় পুলিশ-পুরসভা। সোমবার রাত থেকেই সল্টলেকের ওয়েবেল মোড়-সহ পাঁচ নম্বর সেক্টরের একাধিক জায়গায় ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকাল থেকে গড়িয়াহাট, বিধাননগর, হাতিবাগান-সহ বিভিন্ন জায়গায় ফুটপাথ দখলমুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। সল্টলেকে সেক্টর ৫-এ পুলিশ ইতিমধ্যেই সময় বেঁধে দিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধে ৬টার মধ্যে ফুটপাথ খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল হকারদের । মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর সক্রিয় ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার পুলিশ। সেক্টর ফাইভে জবরদখল করে রাখা ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে শুরু হয় পুলিশ এবং পুরসভার যৌথ অভিযান। হকার উচ্ছেদ অভিযান চলে নিউ মার্কেট এলাকাতেও। মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ নিউমার্কেট থানার সামনে যে সমস্ত হকাররা ফুটপাত দখল করে বসে আছে, তাঁদের উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়। আধ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয় পুলিশ। এমনকি, বেশ কিছু অস্থায়ী বিক্রেতাদের সঙ্গে হাত লাগিয়ে পুলিশ জিনিসপত্রগুলি কাপড়ে মুড়ে নিউমার্কেট থানার গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।

ফুটপাত চত্বরে যে সমস্ত খাবারের দোকানগুলি ছিল সেই খাবারের দোকানগুলিও খালি করার কথা বলা হয়েছে। পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন কোনও নির্দেশিকা না আসা পর্যন্ত হকাররা বসতে পারবেন না ফুটপাথে। নিউ মার্কেটের রাস্তার ধারে থাকা হকারদের একাংশ ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, অনেকেরই ১৫ থেকে ২০ বছরের লাইসেন্স আছে। কলকাতা পুরসভা থেকে তাদেরকে এই ফুটপাতের উপরেই চিহ্নিত করে দিয়ে যাওয়া হয়েছে বসার জন্য। তারা সেই মতো প্রত্যেকটা দিন সুষ্ঠুভাবেই এই ফুটপাতের উপরে বসেন। গড়িয়াহাট, সল্টলেকের হকারদেরও উচ্ছেদ করা হয়। জানা গিয়েছে, গড়িয়াহাট, সল্টলেকে একাধিক দোকান ভেঙে ফেলা হচ্ছে। গড়িয়াহাটে ৬ জন হকারকে আটক করে এদিন পুলিশ। সল্টলেক ১৬ নাম্বার ট্যাঙ্কের কাছে অস্থায়ী দোকান ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। সূত্রের খবর অনুযায়ী, সেখানেও একজনকে আটক করছে পুলিশ। এসএসকেএম হাসপাতালের উল্টোদিকে ফুটপাতের দোকানগুলি থেকেও প্লাস্টিক খোলার জন্য বলা হয়েছে। কলকাতা মিউনিসিপ‍্যাল কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে মাইকে প্রচার। এমনকী কাউন্সিলার ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন এই প্রচারাভিযানে।

মঙ্গলবারই জমিজবরদখল রুখতে জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছিল ৬ দফা নির্দেশিকা। সেখানে একাধিক বিষয়কে উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক সহ প্রশাসনিক কর্তাদেরও বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, সরকারি জমিতে সাইনবোর্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ যে সরকারি জমিটি রয়েছে সেটা যাতে বোঝা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাইনবোর্ডে লিখতে হবে এই জমির মালিক রাজ্য সরকার। বিলআরও ও ডিএলআরও অফিসের সামনে যাতে দালালরা ঘোরাফেরা না করে সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।  চতুর্থত, কিছুদিন অন্তর সরকারি আধিকারিকরা সরকারি জমিগুলি সম্পর্কে খোঁজখবর নেবেন, সেগুলি পরিদর্শন করে দেখবেন সেগুলি ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে।  পঞ্চমত, যখন তারা পরিদর্শন করবেন তখন সংশ্লিষ্ট জমি ও জলাশয়ের ছবি বিভিন্ন দিক থেকে তুলতে হবে। অর্থাৎ জমিটি যথাযথ রয়েছে কি না সেই সম্পর্কিত তথ্য রাখতে হবে।  পাশাপাশি জেলাশাসক ও এডিএম ল্যান্ডদের কাছে এই সরকারি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভপ্রকাশের পরেই বদলি করা হয়েছে, বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার আইপিএস গৌরব শর্মাকে। একই সঙ্গে বৈঠকের পরে পরেই বদলে ফেলা হয়েছে পুর সচিবকে। রাজ্য়ের নতুন পুর সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হল বিনোদ কুমারকে। ভূমি দফতরের নতুন সচিব হয়েছেন বিবেক কুমার।

আরও পড়ুন: বাঙালি বনাম অবাঙালি: বেছে বেছে সুজিতকেই কেন নিশানা করলেন মমতা?

বৃহস্পতিবার ফের জমি জবরদখলের ব্যাপারে আলোচনা করতে নবান্নে বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা, বিধাননগর-সহ পুর নিগম ও পুরসভার চেয়ারম্যান, সমস্ত জেলার পুলিশ সুপার ও জেলা শাসকদের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্স মারফত সমস্ত পুরসভার মেয়র, পুরনিগমের চেয়ারপার্সনরা। জেলাশাসক, মহকুমা শাসক এবং বিডিওরাও ভারচুয়ালি যোগ দেবেন বৈঠক। জেলা পুলিশ সুপার এবং কমিশনারদের ভারচুয়ালি যোগ দিতে হবে বৈঠকে। শুধু তাই নয়, কলকাতা, হাওড়া ও বিধাননগর কমিশনারেটের অধীনে সমস্ত থানার ওসি, আইসিদেরও নবান্নের বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানেই ফের কেন নতুন করে বৈঠক, তা নিয়ে উদ্বেগ সব মহলে। এদিকে হঠাৎ করে রুজিরুটির উপর আঘাত নামায় যথেষ্ট চাপে রয়েছেন হকারেরাও। অনেককেই বুধবার উচ্ছেদ চলাকালীন কান্নাকাটি করতে দেখা গিয়েছে। কীভাবে সংসার চালাবেন? কোথায় গিয়ে নতুন ব্যবসা করবেন, সে নিয়ে উদ্বেগে অনেকেই। তাঁদের ব্যাপারে কি নতুন কোনও সিদ্ধান্তের কথা উঠে আসতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে? তাঁদের ভবিষ্য়ৎ নিয়ে কোনও পলিসির কথা বেরিয়ে আসবে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে? সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।

More Articles