ইডির পর এবার সিবিআই! কোন কোন অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে নতুন করে গ্রেফতার কেজরি?

Arvind Kejriwal: সিবিআইয়ের হাতে ফের একই মামলায় গ্রেফতার হতে হল অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। বুধবার আদালত থেকেই কেজরিকে নিজেদের হেফাজতে নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

গোটা ভোটপর্ব তাঁর কেটেছে জেলেই। দিল্লিতে ভোটের জন্য কয়েকদিনের জন্য জামিনে বাইরে এলেও ভোট মিটতে না মিটতেই ফের তিহাড় জেলে ফিরে যেতে হয়েছিল কেজরিওয়ালকে। ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সম্প্রতি জামিন দেয় দিল্লির একটি আদালত। জামিন মঞ্জুর হওয়ার পরের দিনই আসে ধাক্কা। দিল্লি হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে যায় নিম্ন আদালতের জামিনের সিদ্ধান্ত। ফলে ফের তিহাড় জেলেই থেকে যেতে হয় কেজরিকে। আবগারি নীতি কেলেঙ্কারি মামলায় বারংবার ধাক্কা খেতে হয়েছে কেজরিওয়ালকে। ফের মঙ্গলবার রাতে বড়সড় ধাক্কা খেলেন কেজরিওয়াল। এবার একই মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে তিন দিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। 

গত ২১ মার্চ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট। আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে শেষ পর্যন্ত তিহাড় জেলে ঠাঁই হয় আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। তার আগে অবশ্য বেশ কয়েক দফা ইডি হেফাজতেও থাকতে হয়েছে তাঁকে। ইতিমধ্যে লোকসভা ভোট মিটেছে। ভোটের সময় জামিনে বাইরে এলেও ফের তিহাড় জেলে ফিরে যেতে হয়েছিল কেজরিকে। সম্প্রতি নিম্ন আদালত আশার কথা শোনালেও কার্যত সেই আশা ভরসা সমস্ত শেষমেশ জলেই গেল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। প্রথমেই দিল্লি হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে গেল জামিন। তার পরেই সিবিআইয়ের হাতে ফের একই মামলায় গ্রেফতার হতে হল অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। এর আগে অবশ্য ওই মামলায় কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। বুধবার আদালত থেকেই কেজরিকে নিজেদের হেফাজতে নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

আরও পড়ুন: আবগারি দুর্নীতি মামলায় সামান্য স্বস্তি! যে যে শর্তে জামিন পেলেন কেজরি

দিল্লি হাইকোর্টে সম্প্রতি কেজরিওয়ালের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তার পরেই তিহাড় জেলে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআইয়ের একটি দল। নথিভুক্ত করা হয় তাঁর বয়ানও। বুধবারও তাঁকে আদালতে হাজির করানোর অনুমতি পায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই মতোই বুধবার দিল্লির ট্রায়াল কোর্টে কেজরিওয়ালকে নিয়ে আসেন তিহাড় কর্তৃপক্ষ। সেখানে বিশেষ বিচারক অমিতাভ রাওয়াতের সামনে সওয়াল-জবাব চলে। তার পরেই কেজরিকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করে সিবিআই। তাদের আইনজীবী আদালতে জানান, আবগারি মামলার তদন্তের অগ্রগতির জন্য কেজরীওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। তাই তাঁকে সিবিআই নিজেদের হেফাজতে নিতে চায়। সিবিআইয়ের সেই আবেদনের বিরোধিতা করেছেন কেজরিওয়াল। পাশাপাশি তাঁকে কোনও নোটিস ছাড়াই জেলে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তবে তাতে কাজের কাজ হয়নি। শেষপর্যন্ত সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হতে হয়েছে কেজরিকে।

২০২১ সালের নভেম্বর মাসে মদ বিক্রি নিয়ে রাজ্যে নয়া নীতি কার্যকর করেছিল কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন দিল্লি সরকার । তবে কয়েকদিন পরেই বাতিল করে দেওয়া হয় সেই নীতি। এরই মাঝে অভিযোগ ওঠে, সেই নীতির অধীনে নির্দিষ্ট কিছু মদ ব্যবায়ীর থেকে ঘুষ নিয়ে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। মদ বিক্রির লাইসেন্সের জন্য ডিলাররা আম আদমি পার্টিকে ১০০ কোটি টাকার ঘুষ দিয়েছিল বলেও অভিযোগ। এদিকে এই গোটা ঘটনায় তেলঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ে কে কবিতার সরাসরি যোগ ছিল বলে দাবি। ইডি অভিযোগ করেছে, কবিতার মদতে দক্ষিণ ভারতে অনেক সংস্থা আপ-কে ঘুষ দিয়ে দিল্লিতে মদ বিক্রির লাইসেন্স পেয়েছিল। আর এই গোটা লেনদেনের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বর্তমান রাজসাক্ষী রেড্ডি। এই আবহে দিল্লি আবগারি দুর্নীতি মামলায় আম আদমি পার্টিকে 'কোম্পানি' আখ্যা দিয়েছিল ইডি। ইডির তরফে এ-ও দাবি করা হয়, এই গোটা দুর্নীতির মাথা নাকি অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজেই।

কেজরিওয়ালের জামিনের আবেদন নিয়ে দীর্ঘ সওয়াল জবাব চলেছে আদালতে। দিল্লি আবগারি দুর্নীতি মামলায় অন্যান্য অভিযুক্তদের সঙ্গে কেজরির যোগসূত্র আছে বলে তুলে ধরার চেষ্টা করে ইডি। পালটা কেজরির আইনজীবী দাবি করেন যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণই নেই কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে। সেই সওয়াল-জবাবের পরে প্রাথমিক ভাবে রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারক। পরে বিচারক শর্তসাপেক্ষে কেজরির জামিন মঞ্জুর করেন। তিনি নির্দেশ দেন যে তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনওরকম বাধা তৈরির চেষ্টা করতে পারবেন না কেজরি। কোনও সাক্ষীকে প্রভাবিত করতে পারবেন না। সেইসঙ্গে যখনই প্রয়োজন হবে, তখনই আদালতে হাজিরা দিতে হবে। তদন্তেও কেজরিকে সহযোগিতা করতে হবে বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিল দিল্লির আদালত। তবে দিল্লির নিম্ন আদালতের সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ইডি। যেখানে দিল্লি হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের জামিনের নির্দেশে স্থগিতাদেশও জারি করে।

ইডি-র করা মামলা দুর্বল প্রমাণ হতেই কি এবার সিবিআই জালে জড়িয়ে ফেলা হল কেজরিওয়ালকে? ইডির করা মামলা থেকে কোথায় আলাদা সিবিআইয়ের অভিযোগ? ইডি সাধারণত অর্থনৈতিক দুর্নীতির তদন্ত করে থাকে। বেআইনি লেনদেনের মামলায় ইডি গ্রেফতার করেছিল কেজরিওয়ালকে। বেআইনি অর্থতহবিলকে ব্যবহার করার অভিযোগ আনা হয়েছিল তাঁক বিরুদ্ধে। যার ফলে PMLA-র আওতায় ৩ নম্বর ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছিল কেজরিকে।

আরও পড়ুন:কেজরি ছাড়া পেলেও হেমন্তের কপালে শুধুই ভর্ৎসনা! কেন সুপ্রিম কোর্টে জামিন পেলেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী?

সিবিআই ২০২২ সালে প্রিভেনশন অব করপশন অ্যাক্ট (পিসি অ্যাক্ট)-এর আওতায় মামলা দায়ের করেছিল, তবে তাতে নাম ছিল না কেজরির। ইডি যখন কেজরিকে হেফাজতে নেয়, তখন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু দিল্লি আদালতে জানায়, পিএমএলএ মামলায় অভিযোগ দায়ের করার জন্য বেআইনি আর্থিক লেনদেনই যথেষ্ট। এপ্রিল মাসে সিবিআই প্রথম বার কেজরিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে। সে সময় দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে নামও ছিল না কেজরির। হাইকোর্টে জামিনে ধাক্কা খাওয়ার পরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কেজরি। বুধবার নিম্ন আদালত যখন কেজরির সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিল, ঠিক তখনই সুপ্রিম কোর্টে কেজরির মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতেই দিল্লি হাইকোর্টের মঙ্গলবারের নির্দেশের কথা উল্লেখ করা হয় বিচারপতি সুধীরকুমার জৈন এবং বিচারপতি রবীন্দ্র দুদেজার অবকাশকালীন বেঞ্চের সামনে। সূত্রের খবর, এর পরেই শীর্ষ আদালত কেজরিওয়ালকে তাঁর পুরনো আবেদন তুলে নিয়ে নতুন করে আবেদন করার অনুমতি দিয়েছে। এবার সেখানেও আদৌ জামিন পান কেজরি, নাকি জড়িয়ে পড়েন অন্য কোনও নতুন বিপদে, সেটাই দেখার।

More Articles