বিহারের মানুষকে ইচ্ছা করে অন্ধকারে রেখেছেন লালু-নীতীশ! চাঞ্চল্যকর দাবি প্রশান্ত কিশোরের

Prashant Kishor: ভোটকুশলীর কাজ অনেকদিন আগেই ছেড়েছেন প্রশান্ত কিশোর। বরং এখন তিনি মন দিয়েছেন নিজের রাজ্যের রাজনীতিতে।

লোকসভা ভোট শেষ। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের প্রায় সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণীই প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এ বছর। ভোটকুশলীর কাজ অনেকদিন আগেই ছেড়েছেন প্রশান্ত কিশোর। বরং এখন তিনি মন দিয়েছেন নিজের রাজ্যের রাজনীতিতে। গোটা বছরটা জুড়েই গোটা বিহার জুড়ে জনসূরজ যাত্রা করেছেন প্রশান্ত। পায়ে হেঁটে নিজের চোখে বিহারের প্রতিটি কোণা দেখেছেন। মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। বাড়িয়েছেন জনসংযোগ।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ, ভোটকুশলী থেকে বহুদিন ধরেই সক্রিয় রাজনীতিতে আসতে চেয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। গান্ধিজীর বিশেষ ভক্ত প্রশান্ত কোন দলে যেতে পারেন, সে নিয়ে জল্পনাকল্পনাও কম হয়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে পথে না হেঁটে একেবারে নিজস্ব এক রাজনীতির পথ বেছে নিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। বিহার জুড়ে জনসূরজ যাত্রার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেখানকার ভূমিপুত্র।

লোকসভা ভোট শেষ। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও এনডিএ জোটের কাঁধে ভর রেখে তৃতীয়বার সরকার গড়েছে বিজেপি। রাজ্যগুলিতে প্রশান্ত কিশোরের কথা না ফললেও দেশে তাঁর কথামতোই ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। কিন্তু প্রশান্ত বলেছিলেন, গত বছরের মতোই কিংবা তার চেয়েও ভালো ফলাফল করবে বিজেপি। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি। কোনও মতে ২৪০টি আসন জিতে মুখরক্ষা করেছে বিজেপি। আপাতত লোকসভা ভোটের চিন্তা বাদ দিয়ে বিহারের বিধানসভা ভোটের কথা ভেবেই নিজের পথরেখা তৈরি করছেন ভোট ময়দানের কৃষ্ণ হিসেবে পরিচিত প্রশান্ত কিশোর। সব ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ অনুষ্ঠিত হতে পারে বিহারের বিধানসভা ভোট। তার জন্য এখন থেকেই জমি ঠিক করতে উঠেপড়ে লেগেছেন প্রশান্ত কিশোর।

আরও পড়ুন: হায় রে উচ্চাশা! প্রশান্ত কিশোর যা বলেছিলেন, আর বাংলার গণনায় যা হচ্ছে

ভোটের মুখে মুখে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের হাত ছেড়ে ফের বিজেপির হাত ধরেছিলেন আরজেডি নেতা নীতীশ কুমার। নীতীশ কুমারের রাজনীতির কেরিয়ারে এ অবশ্য নতুন কথা নয়। এর আগেও একাধিক বার তিনি দল বদলেছেন। সদর্পে এনডিএ ছেড়েছেন, তারপর এ পাড়া ও পাড়া ঘুরে বীরদর্পে ফের এনডিএ-তে ফেরত গিয়েছেন। বিহারের রাজনীতিতে তাই পল্টুরাম নামেও বিশেষ পরিচিত তিনি। আর এ বার দল বদলে রীতিমতো কিংমেকারের জায়গায় চলে এসেছিলেন নীতীশ। বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া এবং বিহারে আরজেডিকে মানুষের ঝুলি ভরে ভোট, কার্যত রাজনীতির সমীকরণটাকেই অনেকটা বদলে দিয়েছে। তার ফলশ্রুতি হিসেবে মোদি মন্ত্রিসভার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক ও দফতর ব্যাগেও ভরেছেন নীতীশ। কম যান না রামবিলাসপুত্র চিরাগ পাসোয়ান ও হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার প্রধান জিতন রাম মাঝিও। মোদি মন্ত্রকে জায়গা পেয়ে গিয়েছে লোক জনশক্তি পার্টি (LJP) ও হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (LHM)। এবার লোকসভা ভোটে নীতীশের দল পেয়েছে ১২টি আসন, লোক জনশক্তি পার্টি পেয়েছে পাঁচটি, আওয়াম মোর্চা পেয়েছে একটি আসন। বিজেপি পেয়েছে ১২টি আসন। অন্যবারের তুলনায় গোবলয়ের রাজ্যগুলিতে ভোট কমেছে বিজেপির। তার মধ্যে অন্যতম বিহারও। শুধুমাত্র নীতীশের সঙ্গ ছিল বলেই বিহারে মুখ রাখতে পেরেছে বিজেপি।

বিহার রাজনীতির অন্য মেরু তথা লালুপ্রসাদ যাদব অবশ্য রয়েছেন কংগ্রেসের সঙ্গেই। ইন্ডিয়া জোটেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন লালু। ছেলে তেজস্বী যাদবকেও দেখা গিয়েছে জোটে সক্রিয় ভূমিকায়। এই লোকসভা ভোটে আরজেডি পেয়েছে চারটি আসন, কংগ্রেস তিনটি এবং বামেরা দু'টি আসন। এই সমীকরণ সামনে রেখেই কি বিধানসভার গুটি সাজাতে বসেছেন প্রশান্ত কিশোর। নাকি তাঁর মাথায় ঘুরছে অন্য অঙ্ক। এখন থেকেই মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানানো শুরু করেছেন তিনি। শুধু নীতীশ নয়, প্রশান্তের নিশানায় রয়েছেন লালুপ্রসাদও। তাঁর মতে, বিহারের এই দুটি ক্ষমতাশালী নেতাই আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে বিহারের মানুষকে অন্ধকারে রেখেছেন। তাঁদের ইচ্ছা করেই ঠেলে দেওয়া হয়েছে দারিদ্রের দিকে। বঞ্চিত করা হয়েছে শিক্ষাদীক্ষা থেকেও। দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সমর্থন সুরক্ষিক করতে বিহারবাসীকে কায়িক শ্রমের উপর নির্ভরশীল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ইচ্ছাকৃত ভাবে তাদের মধ্যে বিভাজনের রাজনীতিকে জাগিয়ে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ প্রশান্ত কিশোরের।

প্রশান্ত মনে করেন, লালুপ্রসাদ ও নীতীশ কুমার, দুই নেতাই এমন একটা ব্যবস্থা বিহারে বজায় রেখেছিলেন, যাতে মানুষকে নিরক্ষরতা ও দারিদ্রের মধ্যে থাকতে হয়। ন্য়ূনতম আর্থিক সাহায্যের জন্যেও যাতে তাঁদের সরকারের উপরেউ ভরসা করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিহারে চারশো টাকা পেনশন নীতি বজায় রয়েছে। এই কৌশল আসলে একটা নির্দিষ্ট সংখ্য়ক ভোটব্যাঙ্ককে অনুগত ও সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা। এই দুই নেতাই চেষ্টা করে গিয়েছেন, যাতে রাজ্যের মানুষ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে। আর এই জায়গাটাই বদলাতে চান প্রশান্ত কিশোর। জনসূরজ যাত্রায় জনসংযোগে নেমে তিনি এই দুই নেতার নীতিরই চূড়ান্ত সমালোচনা করেন। এ ভাবে আসলে রাজ্যের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির সম্ভাবনাকেই নষ্ট করা হয়েছে বলে মত প্রশান্ত কিশোরের।

আরও পড়ুন: দেশের ‘এক্স-রে’ চাইছে কংগ্রেস! নীতীশের ডিগবাজি নিয়ে কী বললেন রাহুল?

কিন্তু কেন এসব কথা বলছেন প্রশান্ত? খেয়াল করলে দেখা যাবে, লোকসভা ভোটে কিন্তু নীতীশ সরকারের হাতেই ক্ষমতার রাশ তুলে দিতে চেয়েছেন একটা বড় অংশের মানুষ? বিজেপির থেকে বেশি আস্থা রেখেছে লালু, নীতীশ বা চিরাগ পাসোয়ানের মতো স্থানীয় নেতার উপরেই। এতদিন ইন্ডিয়া জোটের কড়া নিন্দা করতে দেখা গিয়েছে প্রশান্ত কিশোরকে। কিন্তু বিহারে বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে প্রশান্ত জোট ইন্ডিয়া বা এনডিএ, দু'জনকেই ধুয়েমুছে সাফ করার কথা বলছেন। সত্যিই কি বিহার ভোটে কাজ করবে প্রশান্তের জনসূরজের দাওয়াই? নাকি দেশে লোকসভা ভোটের অঙ্কের মতোই মুখ থুবড়ে পড়বে প্রশান্তের বিহার-অঙ্কও। নীতীশ-লালুর বদলে মানুষ কি ভরসা রাখবেন প্রশান্ত কিশোরে? নাকি এর নেপথ্যে কাজ করছে আরও অন্য সমীকরণ। একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলে দিয়ে যাচ্ছে প্রশান্ত কিশোরের বিহার-পরিকল্পনা।

More Articles