৫ দিনে মৃত্যু ছয় শিশুর, বাড়ছে আক্রান্তর সংখ্যা! কী এই চাঁদিপুরা ভাইরাস?

Chandipura Virus: ১৯৬৫ সালে প্রথমবার মহারাষ্ট্রের চাঁদিপুরা গ্রামে এই ভাইরাসের (CHPV) হদিশ মেলে। সে বছর নাকি এই মারণ ভাইরাসের প্রকোপে শতাধিকের মৃত্যু হয়েছিল।

কিছুদিন আগেই মস্তিষ্কের ঘিলুখেকো অ্যামিবা আতঙ্ক ছড়িয়েছিল কেরলে। প্রায় তিনটি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল সেই ভাইরাসের প্রকোপে। এবার গুজরাটে নয়া আতঙ্ক। করোনার আতঙ্ক কাটিয়ে থিতু হতে না হতেই নয়া মহামারীর আশঙ্কা। নয়া এই আতঙ্কের নাম চাঁদিপুরা ভাইরাস, যা গত পাঁচ দিনে প্রাণ কেড়েছে অন্তত ৬টি শিশুর। ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। এর পরই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রুখতে কার্যত ‘অ্যালার্ট মোডে’ চলে এসেছে গুজরাটের স্বাস্থ্যদপ্তর।

জানা গিয়েছে, চলতি মাসে প্রথম চাঁদিপুরা ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় গুজরাটে। সূত্রের খবর, গুজরাতের সবরকণ্ঠা জেলার একটি হাসপাতালে চাঁদিপুরা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে চারটি অসুস্থ শিশুকে ভর্তি করা হয়। গত ২৭ জুন থেকে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে ঘটেছে ঘটনাগুলি। হিম্মত নগরের ওই সরকারি হাসপাতালে গত ১০ জুলাই ৪ শিশুর মৃত্যু ঘটে। চিকিৎসকদের তরফে দাবি করা হয় চাঁদিপুরা ভাইরাসই দায়ী মৃত্যুর পিছনে। যদিও নিশ্চিত হওয়ার জন্য মৃতদেহের রক্তের নমুনা পাঠানো হয় পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে। পরে ওই হাসপাতালেই আরও ৪ শিশুর শরীরে একই রকম লক্ষ্মণ দেখা যায়। এর পরই সতর্ক হয় প্রশাসন।

আরও পড়ুন: মস্তিষ্ক কুড়ে খাচ্ছে অ্যামিবা, পর পর মৃত্যু! ভয়ঙ্কর সংক্রমণ ঘিরে আতঙ্ক

তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ১২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে পাঠানো হয়েছে। চাঁদিপুরা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত মোট ৬টি শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুশিকেশ প্যাটেল খোদ বিবৃতি জারি করে সে কথা জানিয়েছেন। তবে তাঁদের প্রত্য়েকেই এই চাঁদিপুরা ভাইরাসের শিকার কিনা তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এখনও তাদের নমুনার বিশ্লেষণের ফলাফলের হাতে আসেনি। সূত্রের খবর, মৃত ৬ জনের মধ্যে পাঁচটি শিশুই ভর্তি ছিল হিমতনগর সিভিল হাসপাতালে। আক্রান্ত ১২ জনের মধ্যে সবরকণ্ঠে আক্রান্ত ৪ জন, আরাবল্লিতে ৩ জন, মহিসাগর এবং খেদা জেলা থেকে এক জন করে আক্রান্ত হয়েছেন বলে সূত্রের খবর। আরও দু'জন রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা। তবে তাঁদের চিকিৎসা চলছে গুজরাতে।

১৯৬৫ সালে প্রথমবার মহারাষ্ট্রের চাঁদিপুরা গ্রামে এই ভাইরাসের (CHPV) হদিশ মেলে। সে বছর নাকি এই মারণ ভাইরাসের প্রকোপে শতাধিকের মৃত্যু হয়েছিল। চাঁদিপুরা গ্রাম থেকে আবির্ভূত ভাইরাসকে তাই চাঁদিপুরা ভাইরাস বলা হয়। মারাত্মক এই ভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণ হল, তীব্র জ্বর বা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ফ্লু উপসর্গ দেখা যায়। পাশাপাশি এনসেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহ দেখা যায়। অল্প সময়ের মধ্যে তীব্র জ্বর এসে যায়। তারপরই শুরু হয় কাঁপুনি, খিঁচুনি, ডায়ারিয়া, বমি, মাথা যন্ত্রণার মতো লক্ষণ। শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাসের প্রকোপ সাধারণত বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, Rhabdoviridae পরিবারের সদস্য এই ভাইরাস সাধারণত মাছি ও মশার মতো দেখতে বালিমাছি থেকে ছড়ায়। বালিমাছিকে ইংরেজিতে স্যান্ডফ্লাই বলা হয়। এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি শিশুরা। গুজরাত ছাড়া এখনও পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশ, বিহার. অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্য়মন্ত্রী অবশ্য জানাচ্ছেন, এই ভাইরাস ছোঁয়াচে নয়। যেসব জায়গা থেকে আক্রান্তের হদিশ মিলেছে, সেই সব জায়গায় কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। রাজ্যের ৪ হাজারের বেশি বাড়িতে প্রায় ১৮.৬৪৬ জনকে স্ক্রিন করা হয়েছে। গুজরাট স্বাস্থ্য বিভাগ এই রোগ ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: চিনে হু হু করে শিশুরা আক্রান্ত নিউমোনিয়ায়, ফিরছে মাস্ক! নেপথ্যে ফের ‘অজানা ভাইরাস’?

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, চাঁদিপুরা ভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণগুলি হঠাৎ করে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়। আবার বারবার দেখা যায়। প্রাথমিক লক্ষণই হল বমিভাব। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রথমে গা পাক দিয়ে বমি করা শুরু হয়। তার পর শুরু হয় ঘন ঘন বমি। তার সঙ্গে খিঁচুনি ও কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে শুরু করে। ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। অনেক সময় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা অচৈতন্য হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। যেহেতু মশামাছি থেকেই মূলত এই রোগ ছড়ায়, সে কারণে চেষ্টা করলেই এই রোগ থেকে শিশুদের বাঁচানো সম্ভব। গুজরাট প্রশাসনের তরফে নানাবিধ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শুধু রাতে নয়, দিনের বেলায় ঘুমানোর সময়ও মশারি টাঙিয়ে শিশুদের ঘুম পাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেখানে বালিমাছির প্রকোপ বেশি সেখানে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করা উচিত। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। সাধারণ ভাবে স্যান্ডফ্লাই প্রজনন স্থল আবর্জনার স্তূপ, শান্ত জল ও পচনশীল জৈব বর্জ্য, তাই বাড়ির আশেপাশে এইগুলি থাকলে আগে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই নিয়মিত বাড়ি ও বাড়ি চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কথাও বলা হয়েছে সতর্কতায়।

More Articles