৬ জনের মৃত্যু, স্কুল কলেজ বন্ধ! বিক্ষোভের আগুন যে দিকে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশকে
Bangladesh Job Quota Protest: অশান্তির জেরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল বাংলাদেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই মর্মে বিবৃতি জারি করেছে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রক।
আন্দোলনে নেমে শেষ হয়ে গেল ছ'টি তরতাজা প্রাণ। ছাত্রবিক্ষোভে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তাল গোটা বাংলাদেশ। বিচ্ছিন্ন ভাবে দু-এক জায়গায় নয়, বৈষম্য সৃষ্টিকারী কোটা সিস্টেমে সংস্কার আনার দাবিতে গোটা বাংলাদেশই কার্যত আকার নিয়েছে রণক্ষেত্রের। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন দফায় দফায়। আন্দোলনে শামিল হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরাও। সেই আন্দোলনের আঁচে বৃহস্পতিবার থেকেই হাত সেঁকছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার তা চরমে পৌঁছয়। এদিন ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এমনকী আন্দোলনরত পড়ুয়াদের উপর নির্বিচারে ছোড়া হয় গুলিও। সেই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচ পড়ুয়ার। সংঘর্ষে কম করে হলেও চারশো জন জখম হয়েছেন। অশান্তির জেরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল বাংলাদেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই মর্মে বিবৃতি জারি করেছে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রক।
বৃহস্পতিবার থেকেই একের পর এক বিক্ষোভ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশ। ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে সেই আন্দোলনের আগুন। এর মধ্যে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে যে ঘি পড়ে সেই আগুনে। রাজাকারদের নিয়ে দেওয়া স্লোগান নিয়ে আপত্তি করে আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে এই কোটা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান আদালতেই হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বয়ান প্রত্যাহার-সহ একাধিক দাবিতে আন্দোলন আরও জোরদার করার ডাক দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা।
আরও পড়ুন: একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড়! কেন রাস্তায় নামল বাংলাদেশের বিক্ষুব্ধ ছাত্রযুব?
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপরে হঠাৎই হামলা চালায় ছাত্রলীগ। সেই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন পড়ুয়ারা। সেই আন্দোলনের জেরে বন্ধ হয়ে যায় মিরপুর সড়কে যান চলাচল। বেলা ২টার দিকে ওই মিছিলে হামলা চালান ছাত্রলীগ ও ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর থেকে ওই এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সূত্রের খবর, ঢাকা কলেজের ফটকের সামনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হাতে রামদা, রড, লোহার পাইপ, লাঠির মতো সব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চড়াও হন। তাদের থেকে খানিক দূরেই ছিলেন আন্দোলনরত পড়ুয়ারা। হঠাৎই দুই পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার পর বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয় বলে অভিযোগ। আন্দোলনকারীদের দাবি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বস্থান থেকে গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া অনিক, অন্তু, ফেরদৌস জামান, মো. নাসিম এবং কবি নজরুল কলেজের পড়ুয়া হাসিব। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে পাঠানো হয়।
সেই ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই ঢাকা কলেজের সামনে এক বছর পঁচিশের যুবককে বেধড়ক মেরে খুন করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে তাঁর পরিচয় এখনও জানা যায়নি। এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের একদফা দাবিতে আন্দোলন ঘিরে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। সেসব জায়গা মিলে আরও কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন বলেও খবর। এর মধ্যে ঢাকায় একজন, চট্টগ্রামে তিনজন ও রংপুরে একজন রয়েছেন। চট্টগ্রামে নিহতদের মধ্যে মহম্মদ ফারুক (৩২) ও মহম্মদ ওয়াসিম (২২) নামে দুই যুবক রয়েছেন বলে খবর। ফারুক একটি আসবাবের দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। বাকিদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
আরও পড়ুন: ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক হাসিনার দেশে! ভারতকে কেন বর্জন করছে বাংলাদেশ?
এদিকে পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে যাচ্ছে বুঝতে পেরেই অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাংলাদেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সে দেশের শিক্ষা মন্ত্রকের আওতায় থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে। তার মধ্যে রয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোও। এমনকী বন্ধ থাকবে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলিও। মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। বিদ্যালয় ও কলেজের পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে।