স্যুপ খেতে ভিড় জমে রেস্তোরাঁয়, কেন এত বিখ্যাত ৮০ বছরের পুরনো এই স্যুপ?

80 Year Old Soup : অন্যদিকে জাপানে টোকিওর আসাকুসা জেলার ওটাফুকু রেস্তোরাঁয় ওডেন নামক একটি স্ট্যু পরিবেশন করা হয়। ১৯৪৫ সালের সেই স্যুপ!

মদ পুরনো হলে স্বাদ বাড়তে পারে, প্রেম পুরনো হলে বাড়ে কিনা তা বহু শতাব্দীর মনীষীর তর্ক। কিন্তু স্যুপ? স্যুপের বয়স বাড়লে কি তা আরও সুস্বাদু হয়ে যায়? এই পৃথিবীতে এমন এক রেস্তোরাঁ রয়েছে যেখানে প্রাচীন কালের স্যুপ বিক্রি হয়। ব্যাংককের ক্রুং থেপ মাহা নাখোনে রয়েছে এক বিশেষ রেস্তোরাঁ। সেই রেস্তোরাঁ এই বিশেষ স্যুপের জন্য এতটাই বিখ্যাত যে বেশ কিছু পুরস্কারও জুটেছে। সেই ওয়াত্তানা পানিচ নামের রেস্তোরাঁয় গেলেই আপনি অর্ডার করতে পারেন প্রাচীন স্যুপ!গরুর মাংস ও ছাগলের মাংসের সেই স্যুপের বয়স প্রায় ৫০, নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ৪৯।

এই স্যুপ নাকি ভীষণই সুস্বাদু এবং সুগন্ধযুক্ত। এই স্যুপের গন্ধ এতটাই মারাত্মক যে নাকে এলেই অবধারিত ইচ্ছা হবে চেখে দেখার। এই রেস্তোরাঁয় কাজ করা তিন প্রজন্মের শেফ এই স্যুপ তৈরি করেছেন। বিক্রি হওয়ার পর প্রতি রাতে, পাত্রে যা অবশিষ্ট থাকে তা তুলে সংরক্ষণ করা হয়। পরের দিন আবার সেই স্যুপ বের করে আনা হয়। স্যুপে আরও কিছু উপকরণ যোগ করা হয় এবং পুরো প্রক্রিয়াটি আবার শুরু হয়। প্রতি দিন, কয়েক দশক ধরে এভাবেই তৈরি হচ্ছে স্যুপ।

আরও পড়ুন- ভুখা পেটের বিকল্প খাবার থেকে জিআই তকমা, যেভাবে বিখ্যাত হল লাল পিঁপড়ের চাটনি

অন্যদিকে জাপানে টোকিওর আসাকুসা জেলার ওটাফুকু রেস্তোরাঁয় ওডেন নামক একটি স্ট্যু পরিবেশন করা হয়। ১৯৪৫ সালের সেই স্যুপ! প্রতিদিন একটু একটু অংশ নিয়ে ৮০ বছরের প্রাচীন সেই স্ট্যু তৈরি করা হয়েছে। ১৯১৬ সালে এই রেস্তোরাঁটি খোলা হয়েছিল, বলা হয় যে এই স্যুপটি ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিমান হামলায় এই রেস্তোরাঁ আর স্যুপ দুইই হারিয়ে যায়। আরেকটি স্যুপ প্রায় ১৫ শতক থেকে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবধি তৈরি হতো, তারও চিহ্ন মেলে না আর। কিন্তু এত পুরনো স্যুপ খাওয়া কি বিপজ্জনক নয়? যারা খেয়েছেন তারা বলছেন এটি নিরাপদ। যদিও বাড়িতে নিজে থেকে তৈরি করে তা রেখে দেওয়ার চেষ্টা মোটেও সুবিধার নয়।

আরও পড়ুন- মাংস মদিরা সহযোগে ‘বর্ধমান স্ট্যু’, আজও যখন তখন ফিরে যাওয়া যায় ঔপনিবেশিক ভারতে

বিষয়টা কিন্তু মোটেও এমন নয় যে আপনি প্রাচীন কালে কাটা ছাগলের বা গরুর মাংসটাই খাচ্ছেন। এই স্যুপে রোজ নতুন করে উপাদানই যোগ হয়। তবে হ্যাঁ, এই স্যুপে এখনও মূল প্রাচীন উপাদানগুলি রয়ে গিয়েছে। স্যুপগুলিকে নিয়মিত গরম করা হয় এবং নিয়মিতই রোলিং সিমারে রাখা হয়। যে কোনও ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলার জন্য এই তাপ যথেষ্ট।

যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কোনও উপকরণ এই স্যুপে যোগ না করা হচ্ছে এবং স্যুপকে ক্রমাগত নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ফোটানো হচ্ছে যাতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া মরে যায়, ততক্ষণ এই স্যুপ নিরাপদ। এই স্যুপ ততকাল ধরেই খাওয়া যাবে। হয়তো একদিন আপনি আপনার বয়সের চেয়েও বেশি পুরনো স্যুপ খেতে পারবেন। শুধু ব্যাংকক বা জাপান যাওয়ার অপেক্ষা!

More Articles