লাল কাঁকড়া আর নির্জনতা, এই সমুদ্রে এলে তাজপুর-মন্দারমণি ভুলতে বাধ্য!

Offbeat Sea Beach: সৈকতের দৈর্ঘ্য তেমন লম্বা নয় মোটেই, বরং কিছুটা যেন খাঁড়ির মত হয়ে সমুদ্র ঢুকে এসেছে। পাশ দিয়ে গিয়েছে ঘন ঝাউ বন, সৈকতেই দেখা মিলবে মাছ ধরার ট্রলার আর ডিঙির সারির। আর চরাচর জুড়ে আছে জনমানব শূন্য নির্জনতা...

সমুদ্রের আমিষগন্ধ ভালোবাসলেই তো হল না, উপযুক্ত সমুদ্রও তো পাওয়া চাই। আর বঙ্গদেশে তেমন সমুদ্রের আজকাল ভারী অভাব। আপনি বলবেন, কেন দিঘা, মন্দারমণি, বকখালি বুঝি ফাঁকি! না ফাঁকি না হলেও ভিড়ে ভিড়ে জনঅরণ্য এই সব গন্তব্যগুলি। ফলে একটু নিভৃতে বসে যে সমুদ্রযাপন করবেন, হাতের উপর হাত রেখে এ 'বিপুল তরঙ্গ'-দের কথা ভাববেন, ওই হইহট্টগোলে সেই ফুরসত কোথায়! তবে কোথায় যাবেন? নীল জলের মায়াবী ঢেউয়ে ভাসতে হবে ভিনদেশে, নিদেন পক্ষে ভিনরাজ্যে। একেবারেই না। 'হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন'- ফলে সমুদ্রের ব্যাপারেও খালি হাতে ফেরাবে না সেই বাংলা। হাতের একদম কাছেই রয়েছে অজানা অচেনা সমুদ্রের খোঁজ, যা আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করবে।

দিঘা, তাজপুর বা মন্দারমণি, পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ সমুদ্রসৈকতের খোঁজ মেলে মেদিনীপুরেই। বকখালি বা পিয়ালি আইল্যান্ডের মতো সৈকত অবশ্য ব্যতিক্রম। তবে ভিড়ভাট্টা ও সৌন্দর্যের দিক থেকে ব্যতিক্রমী যে সমুদ্রসৈকতের কথা আমরা বলছি, তাও কিন্তু রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরেই। কাঁথি স্টেশন থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত এই বগুরান জলপাই।

আরও পড়ুন:দিঘা-পুরী বাসি! বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরে নির্জনে হোক সস্তার সমুদ্রস্নান

ঠিকই শুনেছেন, নামের মতোই সুন্দর এই সৈকত। কলকাতা থেকে খুব বেশি হলে ঘণ্টা চারেকের পথ। চেপে বসতে পারেন ট্রেনে। যেতে পারেন বাসে চড়েও। এমনকী পৌঁছনো যাবে এমনি গাড়িতেও। কাঁথি থেকে জুনপুট সড়ক হয়ে পৌঁছানো যায় আধ ঘন্টায়। এই সৈকতের দৈর্ঘ্য তেমন লম্বা নয় মোটেই, বরং কিছুটা যেন খাঁড়ির মত হয়ে সমুদ্র ঢুকে এসেছে। পাশ দিয়ে গিয়েছে ঘন ঝাউ বন, সৈকতেই দেখা মিলবে মাছ ধরার ট্রলার আর ডিঙির সারির। আর চরাচর জুড়ে আছে জনমানব শূন্য নির্জনতা।

A extraordinary weekwnd trip to offbeat seabeach of West Bengal Baguran Jalpai

লাল কাঁকড়া নিরিবিলি শান্ত সমুদ্র বালিয়াড়ি বাগুড়ান জলপাই। জনকোলাহল ছাড়াই সমুদ্রের জল খেলা করে বেড়ায় সেই বালিয়াড়ি জুড়ে‌। জোয়ারের জল ও রোদের আলোয় অপরূপ রূপ নেয় বাগুড়ান জলপাই বেলাভূমি। তখন দেখলে চিনতে ভুল হয়ে যায়। আসলে এখনও এই সমুদ্র সৈকত মানুষের কাছে ততটা পরিচিত নয়। তাই এই সমুদ্র সৈকত মেলে ধরেছে অপরূপ প্রাকৃতিক রূপ সৌন্দর্য। বালিয়াড়ি জুড়ে অসংখ্য লাল কাঁকড়া দল ও ঝিনুক খেলা করে নিভৃতে।

A extraordinary weekwnd trip to offbeat seabeach of West Bengal Baguran Jalpai

পর্যটকদের ভিড় এখানে নেই বললেই চলে। না, এতে সত্যিই কোনও মিথ্যাচার নেই। কারণ এখানে সমুদ্রের ধার ধরে একা একা হেঁটে বেড়ালেও কেউ আপনার দিকে ফিরেও চাইবে না। সৈকত ভর্তি লাল কাঁকড়ার দল। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন সমুদ্রের বালিতে কে যেন লাল রং ঢেলে দিয়ে গিয়েছে। অন্যান্য সৈকতের থেকে বগুরান জলপাইয়ের সৈকত অনেক বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। হবে নাই বা কেন! লোকজনের ক্যাকাফোনির থেকে অনেক দূরে রয়েছে যে এই একফালি জায়গা।

আরও পড়ুন:জলপ্রপাতের শহর যেতে মাত্র ৭ ঘণ্টা! হাওড়া থেকে নয়া ২ বন্দে ভারত যাবে যে গন্তব্যে… 

এখন তেমন ভাবে প্রচারের আলোয় না আসায় এখানে হোটেলের সংখ্যা তুলনামূলক কম। তবে যাওয়ার আগে যদি বুকিং করে যেতে পারেন, তা হলে কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না। অবশ্য বছরের প্রায় বেশিরভাগ সময়টাই ফাঁকা পড়ে থাকে অনাবিষ্কৃত এই সৈকত। ফলে উঠল বাই বগুরান যাই বলে বেরিয়ে পড়লেও দোষ নেই। সকাল বেলায় সমুদ্রের পাড়ে হেঁটে সূর্যোদয় দেখা আর বিকেলে কব্জি ডুবিয়ে মন মজান টাটকা মাছভাজায়। সপ্তাহান্তে একবার দুবার এমন ছুটি, সমুদ্র, মাছভাজা হলে আর কী-ই বা চাই বলুন তো জীবনে!

More Articles