দিঘা-পুরী বাসি! বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরে নির্জনে হোক সস্তার সমুদ্রস্নান
Offbeat Destination: সমুদ্র এখানে দিগন্তরেখা ছুঁয়ে ফেলেছে। সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে একের পর এক নৌকা। আঁশটে গন্ধ ছুটছে হাওয়ায়। দেখা পেতে পারেন লাল কাঁকড়াদেরও।
দিঘা-পুরী তো অনেক হল। মন্দারমণি, তাজপুর মানেও ঠাসা ভিড়। তবে এই সব ভিড়ভাট্টা ছেড়েও যদি সমুদ্রের আঁশটে ঘ্রাণ নাকে নিতে চান, তাহলে আপনার জন্য রয়েছে সমুদ্রের সুলুক খোঁজ। ছুটি পেলেই টুকটাক বেরিয়ে পড়তে কার না মন চায়। আর যারা সমুদ্র ভালোবাসেন, রাজ্যে তাদের বিকল্প শুধুই কমছে।
দিঘা মানেই উন্মত্ত মানুষের ভিড়। সেই ভিড়ে সমুদ্র ছোঁয়া তো দূর, ভালো করে দেখাও কঠিন বিষয়। ওড়িশার কাছে বেশ কয়েকটি সুন্দর সমুদ্রের ঠিকানা রয়েছে বটে, তবে ওড়িশা পৌঁছতে কম করে হলেও একদিন সময় লাগেই। যদি বা একদিনে পৌঁছেও যান, দিন থাকতে থাকতে সমুদ্রে পৌঁছনো না-মুমকিন। বাকি রইল, মন্দারমণি বা তাজপুর। অধিক পর্যটকদের ভিড়ে এই সব সমুদ্র সৈকতগুলির অবস্থাও তথৈবচ। কিন্তু কুছ পরোয়া নেই। হাতের কাছেই বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রয়েছে অপূর্ব সৈকত। তার জন্য যেতে হবে আপনাকে দক্ষিণ পুরুষোত্তমপুর।
আরও পড়ুন: দিঘা-মন্দারমণি ফেল! এই ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’-ই এখন বাংলার সেরা উইকেন্ড ট্যুরিস্ট স্পট
এখনও তেমন হোটেল বা রিসর্ট গড়ে ওঠেনি এখানটায়। স্থানীয় কয়েক জন মৎস্যজীবীদের বাস। যেদিকে দু'চোখ যায়, নীল সমুদ্র। ঢেউ এসে ছুঁয়ে যাবে পায়ের পাতা। কোনওটা বান ভিজিয়ে দিয়ে যাবে গা। সামান্য কয়েকটি হোটেল ও টেন্ট ক্যাম্প পেয়ে যাবেন থাকার জন্য। নির্জন সমুদ্র সৈকতে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেতে থাকতে পারেন ব্য়াকপ্যাকার্স ক্যাম্পে। চাইলে সেখানেই হয়ে যেতে পারে বারবিকিউ চিকেনের ব্যবস্থা। রাত বাড়তেই আপনার সামনে জ্বলে উঠবে ক্যাম্প ফায়ার। সমুদ্রের মাতাল করা হাওয়ায় সুস্বাদু কাবাবের গন্ধ আর ক্যাম্প ফায়ারের ওম। এই যুগলবন্দি যে সারাজীবন মনে রাখার মতো, তা বলতে দ্বিধা নেই। আর তারপর সমুদ্র থেকে ধরা টাটকা মাছের সুস্বাদু ফ্রাই তো আছেই। তাছাড়া ক্যাম্পেই মিলবে এলাহি আতিথেয়তা। দুপুরে মিলবে পঞ্চব্য়াঞ্জনের স্বাদ।
সমুদ্র এখানে দিগন্তরেখা ছুঁয়ে ফেলেছে। সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে একের পর এক নৌকা। আঁশটে গন্ধ ছুটছে হাওয়ায়। দেখা পেতে পারেন লাল কাঁকড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম অজানা অচেনা পাখিরও। চাইলে ছবিও তুলতে পারেন তাদের। আর সমুদ্রস্নান করতে যারা পছন্দ করেন, তাঁরা চাইলে গা ভেজাতেই পারেন সমুদ্রের লোনাজলে।
ভাবছেন নিশ্চয়ই, ঠিক কতদূরে এই দক্ষিণ পুরুষোত্তমপুর? চিন্তার কিছু নেই, দিঘা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই রয়েছে দুর্দান্ত অফবিট এই সমুদ্র উপকূল। কলকাতা থেকে দিঘাগামী যে কোনও বাসে উঠে চাউলখোলা বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। সেই চাউলখোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাঁদিতে মোটামুটি ১৫-১৬ কিলোমিটার দূরত্বে এই দক্ষিণ পুরুষোত্তমপুর। বাসস্ট্যান্ড থেকে গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য পেয়ে যাবে অটো বা ট্রেকার।
আরও পড়ুন: ড্রোন নয়, সমুদ্রে বেপথুকে খুঁজতে একসময় ব্যবহার হত কবুতর-বাহিনী
এখানে থাকার জন্য এক নম্বর জায়গা ব্যাকপ্যাকারস ক্যাম্প। অটো বা ট্রেকারে উঠে মুখ ফুটে বললেই চালক পৌঁছে দেবেন গন্তব্য। থাকতে পারেন এখানকার রামকৃষ্ণমিশন আশ্রমেও। চাইলে পুরুষোত্তমপুর থেকেই ঘুরে আসতে পারেন দিঘা বা মন্দারমণি থেকে। যেতে পারেন তাজপুরেও। চাইলে যেতে পারেন উদয়পুর, বিচিত্রপুর, তালসারি কিংবা শঙ্করপুরের মতো অন্যান্য অফবিট সমুদ্র উপকূল থেকেও। তবে ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে নির্জন সমুদ্রের আদর উপভোগ করতে আপনার পরবর্তী উইকেন্ড গন্তব্য কিন্তু হতেই পারে পুরুষোত্তমপুর।