সস্তায় বিশ্বদর্শন! এক যাত্রাতেই মিটবে পাহাড়-জঙ্গল-সমুদ্রের স্বাদ
Weekend trip to Odisha: পাহাড় পছন্দ, তা-ও পাবেন। সমুদ্রের নীল জল টানে? হাতের কাছে রয়েছে সেই নীলে পা ডোবানোর সুযোগও। পাশাপাশি জঙ্গলের বুনো গন্ধ চাইলে, তা-ও মিলবে এক ঠিকানায়।
একমুঠো ছুটি পেলেই ঘুরতে যাওয়ার জন্য মন আনচান। তবে সপ্তাহশেষে বেড়াতে যাওয়ার জন্য আদর্শ জায়গা খুঁজে পাওয়াই যেন সবচেয়ে কঠিন কাজ এখন। তবে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। কারণ হাতের কাছেই রয়েছে একগুচ্ছ নতুন ঠিকানা। পাহাড় পছন্দ, তা-ও পাবেন। সমুদ্রের নীল জল টানে? হাতের কাছে রয়েছে সেই নীলে পা ডোবানোর সুযোগও। পাশাপাশি জঙ্গলের বুনো গন্ধ চাইলে, তাও মিলবে এক ঠিকানায়। হ্যাঁ, ঠিক তেমনই এক জায়গার হদিস রইল আপনারই জন্য।
লোকে বলে শ্রীক্ষেত্র, সেই শ্রীক্ষেত্র থেকে সামান্য দূরেই আমাদের গন্তব্য। যে কোনও ওড়িশাগামী ট্রেনে উঠে নেমে পড়তে হবে বালাসোরে। সেই বালাসোর থেকে ঘণ্টাখানেক দূরেই আমাদের গন্তব্য পঞ্চলিঙ্গেশ্বর। পঞ্চলিঙ্গেশ্বর শিবমন্দিরের জন্য বিখ্যাত হলেও এখানকার প্রকৃতির শোভা কিন্তু অনির্বচনীয়। পঞ্চলিঙ্গেশ্বরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেকগুলি হোটেল ও রিসর্ট। পাশেই উঁকি মারছে নীলগিরি পাহাড়। আপনার পঞ্চলিঙ্গেশ্বরে থাকার সর্বক্ষণের সঙ্গী এই পাহাড়। ট্রেনের পাশাপাশি সড়কপথেও আসতে পারেন আপনি। গাড়ি করে বালাসোর হয়ে পঞ্চলিঙ্গেশ্বরের পথ ধরতে পারেন চাইলে। ওড়িশায় আসার রাস্তা বেশ ভালো। ফলে সেই রাস্তাটুকু যে ভালোই লাগবে আপনার, তার গ্যারান্টি রইলই। পঞ্চলিঙ্গেশ্বরের আশপাশটা গ্রাম এলাকা। চারপাশে ছোটখাটো কুঁড়েঘর, মেঠো রাস্তা আর পাখিদের মেলা। আপনার ভালো লাগবেই। বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যান পঞ্চলিঙ্গেশ্বর মন্দিরে।
আরও পড়ুন: নদী-জঙ্গল মাখা রোদের আদর! এই শরতে ডাকছে পাহাড়ি মায়া-গ্রাম
ভারতের আদি ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবেই এখানেও পাহাড়ের কোলে তৈরি করা হয়েছিল হয়েছে অতিজাগ্রত এক শিবমন্দির। কথিত আছে, বনে থাকার সময়ে রামচন্দ্রের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সীতা দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনা শুরু করেন পঞ্চলিঙ্গেশ্বর পাহাড়ে। পরে সেখানেই স্থাপিত হয়েছে এই পঞ্চলিঙ্গেশ্বর মন্দির। অনেকে আবার মনে করেন, প্রাচীনকালে কিরাটরাজ বাণাসুরের স্বয়ম্ভু লিঙ্গ পুজোর মধ্যে দিয়েই প্রোথিত হয়েছিল এই মন্দিরের বীজ যার টানে আজও ছুটে আসেন হাজার হাজার ভক্ত। তবে এই মন্দিরে পৌঁছনোর রাস্তা শক্ত। প্রায় পাঁচশো সিঁড়ি পেরিয়ে দেখা মিলবে মন্দিরের। সেই মন্দিরে শিবের লিঙ্গ ছুঁয়ে নেমে এসেছে ঝর্না। তার স্রোত ভয় ধরাবে বুকে। পাঁচটি শিবলিঙ্গই একত্রে পঞ্চলিঙ্গেশ্বর নামে পরিচিত। স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস, দারুণ জাগ্রত মহাকালের এই মন্দির। মন্দিরের আশপাশের প্রকৃতির শোভা আপনার মন মাতাতে বাধ্য।
ওড়িশার সাদামাটা রান্নাবান্নার স্বাদও যেন অনোন্য। তাই ওড়িশার যে কোনও জায়গায় বেড়াতে আসার ক্ষেত্রে এটা একটা উপরি পাওনা। তার উপর ওড়িশার মনমোহনী মিষ্টি তো রয়েইছে। বহু বিতর্কিত রসগোল্লা থেকে ছানাপোড়া, সবই আপনার স্বাদকোরককে জাগিয়ে তুলতে বাধ্য।
মন্দির দেখা সেরে ঘুরে আসুন খুমখুট ড্যাম, যেখানে জলের ভিতর থেকে মাথা তুলে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে মন্দিরের চুড়ো। একসময় নাকি এই চুড়াই স্থানীয়দের জানাত বন্যার খবর, আর এখন সে নিজেই জলের নিচে। শুধু জেগে রয়েছে চূড়াটুকু। সেখান থেকে ঘুরে দেখতে পারেন চণ্ডীমন্দির। সেই মন্দির দেখতে গেলেও কিন্তু উঠতে হবে তিনশোটি সিঁড়ি।
পঞ্চলিঙ্গেশ্বরের খুব কাছেই কুলডিহার জঙ্গল। এই জঙ্গলে এই ভ্রমণের দারুণ জরুরি স্পট। অসংখ্য পাখি, বিরাটাকার কাঠবিড়ালি যাকে জায়েন্ট স্কুইরেল বলা হয়, তার দেখা মিলবে ভুরি ভুরি। কপাল ভালো থাকলে দেখা মিলতে পারে হাতি বা বাঘেরও। আশপাশে ঘুরতে দেখতে পাবেন অসংখ্য বনমুরগির ঝাঁক। দুর্দান্ত এই জঙ্গলভ্রমণ সেরে ঘুরে আসুন ভিতরকণিকা থেকে।
সুন্দরবনের মতোই ম্যানগ্রোভ এলাকা। অথচ সুন্দরবনের তুলনায় অসংখ্য পশুপাখির দেখা পাবেন এই নদীপথের এই নৌকাবিলাসে। ব্রাহ্মণী ও বৈতরণী নদীর এই সঙ্গমপথ নাকি ভরা অজস্র কুমিরে। শীতকালে নদীর পাড়ে পাড়ে অজস্র কুমিরের রোদ পোহানোর ছবি তা বুঝিয়ে দেবে মর্মে মর্মে। নদীর কোনও বাঁকে এসে উঁকি দিয়ে যাবে হরিণ। দেখা মিলবে বিভিন্ন সাপ ও সরিসৃপের। আর পাখির কথা তো বলে শেষ করা কঠিন। ভিতরকণিকায় বেশ কয়েকরকম মাছরাঙার দেখা মেলে। যা অন্য কোথাও সহজে দেখা যায় না। জানুয়ারি থেকে মার্চের সময়টায় সৈকতে উঠে আসে অসংখ্য অসিভ রেডলি কচ্ছপ। সব মিলিয়ে এ যেন এক আনন্দমেলা। আর তার সঙ্গে নৌকোবিহারের অপরিসীম আনন্দ তো রয়েইছে।
পাহাড়, মন্দির, জঙ্গল, নদী- সবই তো হল! বাকি কেবল সমুদ্রের। তারও দেখা মিলবে এ যাত্রাতেই। আসলে পঞ্চলিঙ্গেশ্বর বা কুলডিহার কাছেই রয়েছে চাঁদিপুর সৈকত। লোকে এই সৈকতকে ভ্যানিশিং বিচও বলেন। মনে করা হয়, সমুদ্রের মনমর্জি না হলে এই সমুদ্রে জলের দেখা পাওয়া শক্ত। গিয়ে দেখবেন সমুদ্র কোথায়। বালিময় সৈকত যেন ধূধূ মাঠ। সমুদ্রের মাঝখানে পৌঁছেও তখন জলের খোঁজ পাওয়া শক্ত। জোয়ারের সময় সেই সমুদ্রই ধেয়ে আসবে এক বুক জল নিয়ে। তখন তাকে চেনা কঠিন। জ্যোৎস্না রাতে নাকি মোহময়ী রূপ ধারণ করে এই চাঁদিপুর সৈকত।
আরও পড়ুন:গভীর জঙ্গলে বাস মহাদেবের, ৫০০০ বছরের পুরনো পোড়ামাটির এই শিব মন্দির আজও বিস্ময়
তবে একসঙ্গে সমস্ত ধরনের ভ্রমণ অভিজ্ঞতার স্বাদ পেতে সপ্তাহান্তে বেরিয়ে পড়তেই পারেন এই আশ্চর্য গন্তব্যের উদ্দেশে। শুধু পঞ্চলিঙ্গেশ্বর নয়, থাকতে পারেন যে কোনও জায়গাতেই। এমনকী ভিতরকণিকাতেও রয়েছে দুর্দান্ত রিসর্ট। সেখানে রয়েছে একটি আকর্ষনীয় সংগ্রহশালাও। ঘুরে দেখতে পারেন তা-ও। তবে আর দেরি কীসের, চট করে ছুটি জোগাড় করে বেরিয়ে পড়ুন দুর্দান্ত এই অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপে। যেখানে এক যাত্রায় মিলবে হাজার ফল।