তৃণমূলের একাংশ বলছে, টাটার নাম উচ্চারিত হতেই যেভাবে বিক্ষোভ শুরু হয়, তাতে সিপিএমের যোগ স্পষ্ট।
অক্সফোর্ড বিক্ষোভের নেপথ্যে এসএফআই? তাহলে হিন্দুদের রক্ষার প্রশ্ন তুললেন কে?
Mamata Banerjee Oxford University: বিক্ষোভের মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে, “এনিওয়ান ফর হিন্দুস?” জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমি হিন্দু-মুসলমান সকলের জন্য।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ কলেজে ভাষণ দিচ্ছিলেন। হঠাৎই শুরু হিয়ে যায় বিক্ষোভ। বক্তৃতা চলাকালে বিরোধীদের বিক্ষোভ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নতুন কিছু নয়। তবে অক্সফোর্ডের মতো বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন এক মঞ্চে অপ্রীতিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া নিঃসন্দেহে এক ধাক্কা। হ্যাঁ, সেই ধাক্কা সযত্নেই, নিজস্ব ছন্দে সামলে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে প্রশ্ন উঠছে, প্রতিবাদ করলেন কারা? এই প্রতিবাদ কি স্বতঃস্ফূর্ত? না কি রাজনৈতিকভাবেই পরিকল্পিত? নেপথ্যে কারা? বক্তৃতার মাঝে কারা প্রশ্ন তুললেন ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে? আরজি কর দুর্নীতি ও ধর্ষণ ইস্যু তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে বিব্রত করলেন কারা?
হঠাৎ শুরু হওয়া এই প্রতিবাদে কিঞ্চিৎ বিচলিত হয়েছিলেন মমতা। তবে পরে সম্পূর্ণ বক্তৃতা শেষও করেন। আর বক্তব্যের মাঝেই বিক্ষোভকারীদের বলেন, "আপনাদের দলকে আমাদের রাজ্যে শক্তি বাড়াতে বলুন যাতে তারা আমাদের সঙ্গে লড়াই করতে পারে।" 'আপনাদের দল' বলতে কদের কথা বলছেন মমতা? তাহলে তিনি কি নিশ্চিত যে অক্সফোর্ডের বিক্ষোভের নেপথ্যে কারা? তারা তাহলে পশ্চিমবঙ্গেও উপস্থিত?
আরও পড়ুন- অক্সফোর্ডে ধুন্ধুমার! বিক্ষোভকারীদের টানা প্রশ্ন, কী উত্তর ফেরালেন মমতা?
মূল বিড়ম্বনা শুরু হয় মমতার দেওয়া একটি শিল্প বিনিয়োগ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান ঘিরে। মমতা বলেন 'লক্ষ কোটি টাকা' মূল্যের 'বিনিয়োগ প্রস্তাব' পেয়েছে বাংলা। এই সম্পর্কেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করেন এক দর্শক। সেই রেশ ধরে প্রশ্ন তোলেন আরেকজন। পশ্চিমবঙ্গের শিল্প পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার সময়, যখন টাটার টিসিএস কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিষয়টি উত্থাপিত হয়, তখন দর্শকদের পিছনে কিছু বিক্ষোভকারীকে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। রাজ্যে নির্বাচন এবং ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের পাশাপাশি আরজি ধর্ষণ বিষয়ে স্লোগান লেখা ছিল তাতে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এখানে রাজনীতি করবেন না, এটি রাজনীতির প্ল্যাটফর্ম নয়, আমার রাজ্যে যান এবং আমার সঙ্গে রাজনীতি করুন।" যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিককালে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির ধাক্কায় এক ছাত্রের আহত হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গও তোলেন বিক্ষোভকারীরা। মমতা বলেন, ‘‘আমার বাম, অতিবাম, সাম্প্রদায়িক শক্তির বন্ধুদের বলব, আপনাদের আমি চকোলেট দেব। আপনাদের মতাদর্শকেও চকোলেট খাওয়াব।’’ অক্সফোর্ডে গিয়েও সিপিএম কি সত্যিই পিছু ছাড়ল না মুখ্যমন্ত্রীর?
তৃণমূলের একাংশ বলছে, টাটার নাম উচ্চারিত হতেই যেভাবে বিক্ষোভ শুরু হয়, তাতে সিপিএমের যোগ স্পষ্ট। 'যাদবপুর' প্রসঙ্গ ওঠায় অতিবাম যোগও বের করছেন দলের একাংশ। এখানে উল্লেখ্য, সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের ব্রিটেন শাখা জানিয়েছে, তাদের সংগঠনের সদস্যরা বিক্ষোভে ছিলেন। জানা যাচ্ছে, এই বিক্ষোভের আয়োজনের মূল পরিকল্পনা ছিল নিখিল ম্যাথুর। কে নিখিল ম্যাথু? তাঁর ফেসবুক আইডি বলছে, তিনি যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সম্পাদক। SFI-এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এই ছাত্র ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড লেবার স্টাডিজ নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন নিয়ে পিএইচডি করছেন।
তৃণমূলেরই অন্য এক অংশ আবার বলছে, সুচিন্তন দাস এই বিক্ষোভের মূলে। কে সুচিন্তন দাস? রবীন্দ্র ভারতীর ইতিহাসের অধ্যাপক সুস্নাত দাসের পুত্র তিনি। তাঁর বাবা সুস্নাত দাস রাজ্যপাল নিযুক্ত অধ্যাপকের আমলেই ডিন হয়েছেন বলে জানা গেছে। তৃণমূলের একাংশের মত, এই সুচিন্তনই সামগ্রিক জমায়েত ও বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছিল। ধরে নেওয়া গেল, এই বিক্ষোভের মূল চালিকাশক্তি ছিল বামেরাই। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এসএফআই। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, ওই ভিড়ের মধ্যে বাংলায় হিন্দুদের সঙ্গে আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কে?
আরও পড়ুন-মমতার ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশংসা! চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে যা লিখলেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক
বিক্ষোভের মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে, “এনিওয়ান ফর হিন্দুস?” জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমি হিন্দু-মুসলমান সকলের জন্য।” তাহলে বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার (এসএফআই-ইউকে) যুক্তরাজ্য শাখাই কেবল ছিল না? হিন্দু বিষয়ক প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়াতে স্বাভাবিকভাবেই নজর যায় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির দিকেও।
মমতা বলেছেন, "আমি প্রতিটি ধর্মকে সমর্থন করি। আমি হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টানকে সমর্থন করি। একটি জাতির নাম নয়, সবার নাম বলুন। আপনারা যা করছেন তা ঠিক নয়। আপনারা যে রাজনীতি করছেন, আমার অতি-বাম বন্ধু এবং সাম্প্রদায়িক বন্ধুরা তা করেন না।” অতিবাম এবং বিজেপিকে 'বন্ধু' বলে, চকোলেট-মিষ্টি খাওয়াতে চেয়ে অক্সফোর্ডের বিতর্ক আপাতত ধামাচাপা দিয়েই ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিদেশের মাটিতে এই বিক্ষোভের শিকড় আসলে তো বাংলাতেই। বছর গড়াতেই, সিংহাসনের লড়াই। সেই লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতিবাম ও সাম্প্রদায়িক বন্ধুদের সঙ্গে সমীকরণ কী হবে, সেই প্রশ্নই বঙ্গের রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক এখন।