আবুধাবির মন্দিরই প্রথম নয়, আরব বিশ্বে কতগুলি হিন্দু মন্দির আছে জানেন?

Hindu Temples in Aram Countries : বলা হচ্ছে আবুধাবিতে স্বামী নারায়ণ মন্দিরটিই আরব বিশ্বের প্রথম হিন্দু মন্দির, অথচ এই তথ্য ভুল।

২০১৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী সফর করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ১৯৮১ সালের পর প্রধানমন্ত্রী মোদিই প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি সংযুক্ত আরব আমিরশাহী সফর করেন। ২০২৪ সালের দু'দিনের সফরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী গিয়ে নরেন্দ্র মোদি একটি মন্দির উদ্বোধন করছেন। ২২ জানুয়ারি এই দেশে রাম মন্দির তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে মুসলিম প্রধান দেশে হিন্দু মন্দিরের উদ্বোধক হয়ে গেলেন মোদি। এই মন্দির যে তৈরি হবে তা ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের শাসনের দায়িত্বে আসার পরেই তৈরি হয়ে গেছিল। ২০১৫ সালে মোদি আবু ধাবির তৎকালীন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ এবং দুবাইয়ের শাসক শেখ মহম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এই সফরের পরই সরকার মন্দিরের জন্য জমি বরাদ্দ করেছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের পর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর সরকার হিন্দু মন্দির নির্মাণের জন্য ১৩.৫ একর জমি উপহার দেয়। ২০১৯ সালে আরও ১৩.৫ একর জমি বরাদ্দ করে। ২০১৮ সালে আরব দেশে নিজের দ্বিতীয় সফরে দুবাই অপেরা হাউস থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই হিন্দু মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। মুসলিম দেশে এটিই যে প্রথম মন্দির তা কিন্তু নয়। আরব দেশে একাধিক হিন্দু মন্দির ও উপাসনালয় আছে।

আবু ধাবির মন্দির আর প্রধানমন্ত্রী মোদির সেই মন্দির উদ্বোধন করাকে এই দেশে বিশেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত করা হবে। বলা হচ্ছে আবু ধাবিতে স্বামী নারায়ণ মন্দিরটিই আরব বিশ্বের প্রথম হিন্দু মন্দির, অথচ এই তথ্য ভুল। শুধুমাত্র সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতেই নয়, ওমান এবং বাহরিনেও মন্দির আছে।

বাহরিনের রাজধানী মানামায় শ্রীনাথজির মন্দির রয়েছে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। ভারত ভাগের বহু আগেই থাট্টা (পাকিস্তান) থেকে এই অংশে চলে এসেছিলেন সিন্ধি সম্প্রদায়ের একাংশ। তাঁরাই এই মন্দির তৈরি করেন।

আরও পড়ুন- কেন আবু ধাবিতে হিন্দু মন্দির উদ্বোধন করছেন মোদি? নেপথ্যে রয়েছে যে আসল কারণ

ওমানের রাজধানী মাস্কাটে দু'টি হিন্দু মন্দির রয়েছে। একটি মতিশ্বর মন্দির, এটি শিব মন্দির। পুরনো মাস্কটের মুত্রাহ এলাকায় অবস্থিত মতিশ্বর মন্দির মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীনতম হিন্দু মন্দিরগুলির মধ্যে একটি। দেড়শো বছরেরও বেশি পুরনো এই মন্দির ওমানের সুলতান তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়। ওমানের সুলতানের সঙ্গে সেখানের গুজরাতি সম্প্রদায়ের বন্ধুত্ব ছিল গভীর। সেই বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবেই এই মন্দির তৈরি করা হয়।

বহুকাল থেকেই দুবাইয়ে দক্ষিণ ভারতীয় ছাড়াও, সিন্ধি, মারাঠি, গুজরাতি, পাঞ্জাবি-সহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের ধর্মাচারণের জন্য প্রার্থনাস্থল রয়েছে। দুবাই ও সংলগ্ন শহরে দীপাবলিও পালিত হয় ধুমধাম করে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে ভারতীয়দের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ভারত এবং অন্যান্য দেশের মানুষ চাকরি করতে বা অন্যান্য কাজে আরব দেশে পাড়ি দিচ্ছেন এবং ভারতের থেকে অনেক বেশি টাকাই উপার্জন করছেন।

অনেকেই নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ইউরোপ বা আমেরিকার মতো দেশে গেলেও, সেই দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার পরেও বেশি টাকা উপার্জনের জন্য আবার আরব বিশ্বেই ফিরে এসেছেন। নির্মাণক্ষেত্রের শ্রমিক হোক বা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র, কর্পোরেট সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মচারী, সকলেরই লক্ষ্য হয়ে উঠেছে আরব দেশ।

এখানে উল্লেখ্য, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী কিন্তু সৌদি আরবের অংশ নয়। সৌদি আরব এখনও নিজস্ব রীতিনীতিতেই চলে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহী অনেক ছোট। এখানে নানা দেশ থেকে নানা ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষ এসেছেন। ফলে এখানে মসজিদ, গির্জা এবং সিনেগগও রয়েছে। মোদির মন্দির উদ্বোধন ভারতের প্রেক্ষিতে এই মুহূর্তে 'বিশেষ' হয়ে উঠলেও, মন্দির আরব বিশ্বে নতুন ঘটনা নয়।

More Articles