দুর্বিপাকের রথযাত্রা! পুরীর রথ থেকে পড়েই গেলেন বলভদ্র, মূর্তি চাপা পড়ে জখম সেবায়তেরা

Ratha Yatra Mishap: গুন্ডিচায় মাসির বাড়িতে নামতে না নামতেই রথ থেকে পড়ে গেলেন বলভদ্র। নিমকাঠের তৈরি বিশালাকার মূর্তি। সেই মূর্তির নীচে চাপা পড়ে যান বেশ কয়েক জন সেবায়েত।

এ বার পুরীর রথযাত্রা যেন গোটাটাই দুর্বিপাকে ভরা। রথযাত্রার দিন পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি। কম করে হলেও তাতে ১৩০ জন জখম হয়েছে বলে খবর। ভিড়ের চাপে শ্বাসকষ্টজনীত সমস্যায় মৃত্যু হয়েছে এক জনের। আরেকজন চাপা পড়েন বলভদ্রের রথের চাকায়। সেই দুর্ঘটনার পরে ফের দুর্ঘটনার মুখে ওড়িশার বিশ্ববিখ্যাত রথযাত্রা। গুন্ডিচায় মাসির বাড়িতে নামতে না নামতেই রথ থেকে পড়ে গেলেন বলভদ্র। নিমকাঠের তৈরি বিশালাকার মূর্তি। সেই মূর্তির নীচে চাপা পড়ে যান বেশ কয়েক জন সেবায়েত। গুরুতর জখম হন তাঁরা। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

প্রতিবছর রথযাত্রার দিন পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে গুন্ডিচায় মাসির বাড়ি যান জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রা। তিনটি সুবিশাল রথে চেপে মাসির বাড়ি পাড়ি দেন তাঁরা। এরপরে সাতদিন গুন্ডিচায় মাসির বাড়িতেই থাকবেন তিন ভাই-বোন। পাবেন সেবা। অষ্টম দিন অর্থাৎ উল্টো রথের দিন রথ ঘুরিয়ে বাড়ি তথা পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ফিরবেন জগন্নাথ-বলরাম-শুভদ্রা। তেমনটাই হয়ে আসছে প্রতিবছর। এর মধ্যেই থাকে আরও নানাবিধ নিয়ম-কানুন, উপাচার। সেই অনুষ্ঠান উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে গুন্ডিচা মন্দিরের আদপ মন্দিরে নিয়ে যাওয়ার সময়ই ঘটে যায় দুর্ঘটনাটি। মাসির বাড়ি গুন্ডিচায় রথ পৌঁছনোর পরে 'পাহাণ্ডি' নামে এক উপাচার পালন করা হচ্ছিল। সে সময় সেবায়তরা একে একে জগন্নাথ দেব, বলরাম দেব তথা বলভদ্র ও সুভদ্রা দেবীর মূর্তি দোলাতে দোলাতে মন্দিরের ভিতরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময়েই হঠাৎ পিছলে পড়ে যায় বলভদ্রের মূর্তিটি।

আরও পড়ুন: হাথরাসের ছায়া ওড়িশাতেও! ভক্তদের নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলে দিল পুরীর রথযাত্রা

রথযাত্রার ইতিহাসে এমন বিপত্তি আগে কখনও ঘটেনি। স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপারটিকে ভালো চোখে দেখেননি ভক্তেরা। উদ্বেগ পুরীর মন্দিরেও। পুরী প্রশাসনের অবশ্য দাবি, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বলরাম দেবের রথ 'তালধ্বজ'-এর বিভিন্ন অংশ পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে রথ থেকে যখন বলভদ্রের মূর্তিটি গুন্ডিচা মন্দিরে তোলা হচ্ছিল। সেসময় আচমকা সেবায়তরা পিছলে পড়ে যান রথের উপর থেকেউ। তাঁদের হাতে ধরা ছিল বলরামের ওই সুবিশাল মূর্তিটি। সেটিকে নিয়ে রথের উপর থেকে নীচে পড়ে যেতে থাকেন তাঁরা।

 

প্রতিবছর রথ উপলক্ষে কাঠ দিয়ে নির্মাণ করা হয় রথগুলিকে। তালধ্বজ রথ অর্থাৎ যেটিতে চড়ে মাসির বাড়ি যান বলরাম, সেই রথটির উচ্চটা ৪৪ ফুট। প্রতি আট, বারো বা উনিশ বছর বাদে বাদে এই মূর্তিগুলিকে পাল্টানো হয়। নতুন মূর্তি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয় পুরনো মূর্তিগুলি। নবকলেবরা বলে একটি বিশেষ আচার পালন হয় সে সময়। নির্দিষ্ট নিম গাছ বাছাই করে সেই নিম কাঠ দিয়ে নতুন মূর্তি তৈরি করা হয়। শেষ ২০১৫ সালে নবকলেবরা আচার অনুষ্ঠান হয়েছিল। নিমকাঠের তৈরি এই মূর্তির ওজন যথেষ্ট বেশি। সেই মূর্তিচাপা পড়ে গুরুতর জখম হয়েছেন ৯ জন সেবায়ত। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুণ্যার্থীও জখম হয়েছেন বলে খবর।

আরও পড়ুন: মর্মান্তিক দুর্ঘটনা যোগীরাজ্যে! বাস দু’ টুকরো হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু দেখল উন্নাও

পুরীর রথযাত্রার ইতিহাসে এমন কাণ্ড প্রথম বার। মন্দির কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে অমঙ্গলজনক হিসেবেই দেখছেন। বহু বছর পর এবার ওড়িশায় শাসকের মুখ বদল হয়েছে। ওড়িশার ২৫ বছরের শাসক নবীন পট্টনায়েককে হারিয়ে কুর্সি দখল করেছে বিজেপি। ভোটের আগে মোদি প্রচার করেছিলেন, বিজেডি বা নবীন পট্টনায়েকের হাতে নাকি নিরাপদ নয় দ্বাদশ শতাব্দীতে তৈরি প্রাচীন এই জনগন্নাথ মন্দির। চাবি বিতর্ক নিয়েও নবীনের সরকারকেই দুষেছিল বিজেপি। তার পর ভোটে জিতে ওড়িশায় ক্ষমতায় এসেছে মোদি সরকার। আর তার পরেই রথযাত্রায় এ হেন দুর্ঘটনা। ভক্ত থেকে শুরু করে মন্দির কর্তৃপক্ষ, অনেকেই ব্যাপারটাকে ভালো চোখে দেখছে না। যদিও দুর্ঘটনার খবর শুনেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি। ওড়িশার আইনমন্ত্রী পার্থিরাজ হরিচন্দনকে অবিলম্বে পুরী যাওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। আহত সেবায়েতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে বার্তাও দেন তিনি।

More Articles