প্রেমের সঙ্গে বাজি লড়ে আগেও হেরেছে মৃত্যু, বাংলা জানে এবারেও জিতে ফিরবেন ঐন্দ্রিলা

Oindrila Sharma: আবারও নতুন যুদ্ধের মুখোমুখি অভিনেত্রী। ভেন্টিলেশনের অত্যাচারে স্বপ্নের হয়ে লড়াই করছেন তিনি।

দেখো আলোয় আলো আকাশ, দেখো আকাশ তারায় ভরা
এত আনন্দ আয়োজন, সবই বৃথা আমায় ছাড়া

একটি বেসরকারি বিনোদন চ্যানেলে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সঞ্চালিত 'দাদাগিরি'-র মঞ্চে তাঁর নাচ মাতিয়ে দিয়েছিল রাজ্য। একের পর এক প্রশংসায় ভেসেছিলেন বাংলার ফিনিক্স পাখি!

অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। বাংলা টিভি ইন্ডাস্ট্রির অংশ তিনি, সততই ফিনিক্স পাখি! যিনি বারবার তীব্র লড়াই আর প্রবল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ফিরে আসেন নতুন করে। ফিরে আসেন নতুন উদ্যোগে আর উদ্যমেও। কিন্তু সেই অভিনেত্রীই ফের মুখোমুখি অগ্নিপরীক্ষার। ১ নভেম্বর থেকে লড়ছেন এক নতুন লড়াই। জীবন আর মৃত্যুর টানাপোড়েনে হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালের বেডে শুয়ে কৃত্রিম যন্ত্রে চলছে তাঁর শরীর, তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাস। হঠাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ তাঁকে কাবু করেছে ফের। আর এই খবরেই সোশ্যাল দুনিয়ায় ঝড় উঠেছে। নজিরবিহীনভাবে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলার জন্য প্রার্থনায় সরব নেটিজেনরা। ফিরে আসেতেই হবে তাঁকে, ঐন্দ্রিলা জিতবেনই, বলছেন প্রায় সকলেই।

আরও পড়ুন: স্টারডমের দুনিয়া ক্ষমাহীন, পল্লবীদের দুঃখ বেড়ে বেড়ে ক্যানসার হয়ে ওঠে সেখানে

কিন্তু কেন? কী কারণে ঐন্দ্রিলার ফেরার প্রার্থনায় মশগুল সোশ্যাল দুনিয়া! এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বসলে পিছিয়ে যেতে হয় এই লড়াইয়ের ইতিহাসে। যে লড়াই শুধু এই রাজ্য বা এই দেশ নয়, প্রতি মুহূর্তে বিবর্তিত করে, বিরচিত করে এক ফিরে আসার কাহিনিকে। ঐন্দ্রিলা আসলে সেই ফিরে আসারই নামান্তরমাত্র।

কে ঐন্দ্রিলা
মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে বেড়ে ওঠা ঐন্দ্রিলার। মা শিখা শর্মা, একটি নার্সিং হোস্টেলের ওয়ার্ডেন। বাবা উত্তম শর্মা, মুর্শিদাবাদের পাঁচ গ্রাম হাসপাতালের চিকিৎসক। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে ইন্দ্রপ্রস্থ মোড় এলাকার শর্মা বাড়ির সদস্যরা বরাবর জড়িত চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে। কিন্তু ঐন্দ্রিলা ছিলেন ছোট থেকেই ভিন্ন। মাত্র তিনবছর বয়স থেকে নাচ শেখা শুরু করেন তিনি। ছোট থেকে পড়াশুনায় মেধাবী ঐন্দ্রিলা বড় নৃত্যশিল্পী হতে চেয়েছিলেন বরাবর। প্রতিমুহূর্তে বাবা-মায়ের সমর্থন এবং অসাধারণ ভালো মনের উপর ভর করে এগোচ্ছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। এলাকায় ভালো মেয়ের গুণে মশগুল তাঁর প্রতিবেশীরাও।

মারণরোগের বিপদ
কিন্তু মেধাবী ছাত্রী ঐন্দ্রিলার জীবন বদলে গেল ২০১৫ সাল নাগাদ। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার মাত্র এক বছর আগে, একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় টের পান মারাত্মক বিপদ! সুখের সংসারে নেমে আসে আকস্মিক বিপদ। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ঐন্দ্রিলার জীবযুদ্ধে এসে হাজির হয় মারণ রোগ ক্যানসার। তাঁর ফুসফুসে ক্যানসার বাঁধে বাসা। তখনও অভিনয় জগতে তেমনভাবে পা রাখেননি তিনি। শুরু হয় নতুন লড়াই। বেঁচে থাকার তাগিদ আর বড় হওয়ার ইচ্ছায় ভোর করে দেড় বছরের টানা লড়াই চালান তিনি। অবশেষে বহরমপুরের হাসিখুশি মেয়েটা ওই যন্ত্রণাময় তীব্র লড়াই-শেষে, কঠিন চিকিৎসা-পর্ব কাটিয়ে ফের ফিরে আসেন নতুন করে।

অভিনেত্রী জীবনে ঐন্দ্রিলা
২০১৭ সালে নতুন মোড় নেয় তাঁর জীবন। ক্যানসার জয় করে ঐন্দ্রিলার স্বপ্নপূরণের পথ খোলে ফের। টেলিভিশন জগতে পা দেন তিনি। ততদিনে বহরমপুরের ঐন্দ্রিলার যাতায়াত বেড়েছে টালিগঞ্জে। একাধিক অডিশনের পর ২০১৭ সাল নাগাদ শুরু করেন 'ঝুমুর' ধারাবাহিকে কাজ। অভিনয়ে দর্শকের মন জয়ে শীর্ষে উঠতে থাকেন প্রথম থেকেই। একদিকে ওষুধ, চিকিৎসার জন্য ভিনরাজ্যে যাওয়া, আবার অভিনয়! জীবনের প্রত্যেক মুহূর্তের লড়াইয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন তিনি। কাছের মানুষ হিসেবে ততদিনে পেয়ে গিয়েছেন 'বামাক্ষ্যাপা' সব্যসাচী চৌধুরীকে। এর সঙ্গেই একাধিক ধারাবাহিকে কাজ করতে থাকেন ঐন্দ্রিলা।

ফের মারণযুদ্ধে অভিনেত্রী
কথায় বলে, অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়! ঐন্দ্রিলার জীবনপথও বিধায় ঠিক সেইরকমই! ভালোই ভালোই সব চলতে থাকার মধ্যেই আবারও ওত পেতে থাকা বিপদের মুখোমুখি হলেন ঐন্দ্রিলা। আবারও ঘিরে ধরল মারণ রোগ ক্যান্সার। ফের আক্রান্ত হলেন অভিনেত্রী। প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরীর সান্নিধ্য, পরিবারের সমর্থনে আবারও লড়াই জিতলেন ঐন্দ্রিলা। ২০২১ সালে মারণরোগ ক্যান্সারকে ফের হারিয়ে পর্দায় ফিরলেন অভিনেত্রী। তাঁর লড়াই আর ফিরে আসার তাগিদ দেখল দুনিয়া। সব্যসাচী, ঐন্দ্রিলা জুটি ততদিনে জনপ্রিয়তার শিখরে। ২৩ বছরের কন্যার লড়াইয়ের কথার প্রকাশ হয়েছে বিশ্বজুড়ে। ঐন্দ্রিলার যুদ্ধের শরিক হয়েছে সোশ্যাল দুনিয়াও।

ফিরে আসা...
একদা শরীরের জন্য ইঞ্জিনিয়ার হতে না পারা মেয়েটাই দু'বার মারণরোগ জয় করে ফিরলেন মূলস্রোতে। চালিয়ে গেলেন অভিনয়। পর্দায় ফিরলেন জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়া জিয়নকাঠির উপজীব্য ঐন্দ্রিলা। সঙ্গে 'জিয়নকাঠি' ধারাবাহিক।

সব্যসাচী-সান্নিধ্য
প্রিয় বন্ধু সব্যসাচী, ঐন্দ্রিলা আবার ফিরছিলেন। প্রেমিকার জন্য নতুন যুদ্ধে জিতছিলেন সব্যসাচী নিজেও। ক্যান্সার আক্রান্তের মানসিক অবস্থানে বারবার বল আরোপ করছিলেন তিনিও। আর ঐন্দ্রিলা? ভালো থাকার রসদ আর অভিনয়কে ভর করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ফের। ওয়েব সিরিজ ভাগাড় এ তাঁদের জুটির তীব্র প্রকোপ পছন্দ করেছিল দর্শকও। কিন্তু আর পারলেন না! বারবার মৃত্যুকে হারিয়ে দেওয়ার পরেও আবার অবতীর্ণ হলেন মৃত্যুর মুখেই! ফের ঐন্দ্রিলাকে যেন ঘিরে ধরলেন যমরাজ। প্রতি মুহূর্তে এক উদীয়মান প্রতিভার বিলুপ্তি আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে দেশজুড়ে। প্রতিটি সেকেন্ডে ঐন্দ্রিলার পরিবার শুধু নয়, হাজার হাজার শুভানুধ্যায়ীর প্রার্থনায় উঠে আসছে এই ফিনিক্স পাখির ফিরে আসার কথা।

নতুন যুদ্ধে নায়িকা
আবারও নতুন যুদ্ধের মুখোমুখি অভিনেত্রী। ভেন্টিলেশনের অত্যাচারে স্বপ্নের হয়ে লড়াই করছেন তিনি। ফের মৃত্যুর সঙ্গে যুঝছেন ঐন্দ্রিলা। আর এখানেই প্রার্থনার সুনামি আজ দিকে দিকে। অভিনয় জগৎ থেকে সাধারণ মানুষ। ঐন্দ্রিলার জয়ের কামনায় সকলেই। আর 'ঐ মেয়েটা ওঠ...' অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের হৃদয় বিদারক এই আবেদনই যেন অনুরণিত করছে, ঐন্দ্রিলা ফিরবেন! তিনি আবারও জয় করবেন যুদ্ধ। মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে উঠবেন আবার। বিশ্বকে দেখিয়ে দেবেন, অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর মনের জোর দিয়ে হারিয়ে দেওয়া যায় সব! কিন্তু কবে? আশঙ্কা আর অশনি সংকতের দোলাচলে ঐন্দ্রিলা আর জীবনযুদ্ধের নয়া উপকরণে এইসব কথকতায় যেন উচ্চারিত হচ্ছে বঙ্গের লড়াই-মুখ ঐন্দ্রিলার নাম!

More Articles