ঈদের আগে ছাই বঙ্গবাজারের হাজার হাজার দোকান, বারবার কেন আগুনের গ্রাসে বাংলাদেশ?

Dhaka Bangabazar Market Fire : কেউ রাস্তায় বসে হাউহাউ করে কাঁদছেন। চোখের নিমেষে ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল সমস্ত স্বপ্ন, দোকান বাজার।

লাইন দিয়ে রয়েছে একের পর এক দোকান। আর সেখানেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে যেন আগুনের গোলা আছড়ে পড়েছে ওই জায়গায়। ঠিক বাইরেটায় সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে দমকলের গাড়ি। সমানে পাইপ দিয়ে জলের স্রোত চালু রাখা হয়েছে। তবুও সর্বগ্রাসী আগুন নেভার নামগন্ধও নিচ্ছে না। যখন সব শেষ হল, তখন ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতা সবার মাথায় হাত। কেউ রাস্তায় বসে হাউহাউ করে কাঁদছেন। চোখের নিমেষে ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল সমস্ত স্বপ্ন, দোকান বাজার।

এমনই ছবি এখন বাংলাদেশের বিখ্যাত বঙ্গবাজার মার্কেটে। ভয়াবহ আগুনে কার্যত পুড়ে ছাই হয়ে গেল ৩০০০-রও বেশি দোকানঘর। এমনিতেই এখন ঈদের মরসুম। উৎসবে, আনন্দে মেতে উঠেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। ঈদে পরিবার ও প্রিয়জনদের জন্য জামাকাপড়, অন্যান্য জিনিসপত্র নেওয়ার প্রথা বহুদিনের। ব্যবসায়ীরাও এই দিনটির দিকে মুখ চেয়ে থাকেন। কিন্তু তার আগেই এই ঘটনায় কার্যত বাকরুদ্ধ তাঁরা। এত টাকার জিনিস এক মুহূর্তে পুড়ে খাক হয়ে গেল। কিছু উদ্ধার করা গেলেও বেশিরভাগই ভস্মীভূত।

bangladesh fire 2

কী করে লাগল আগুন? সেই কারণ এখনও জানা যায়নি। মঙ্গলবার ভোরেই এই আগুন লেগেছে বলে সূত্র মারফৎ খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারপরই পুলিশ ও দমকল বাহিনীকে জানানো হয়। কিন্তু আগুনের তীব্রতা ও ভয়াবহতা দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছেন খোদ দমকল কর্মীরা। ৪৮ থেকে ৫০টি ইঞ্জিন লাগাতার আগুন নেভানোর কাজ করেছে। সেইসঙ্গে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি সহ অন্যান্যরাও হাত লাগিয়েছেন। ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চেষ্টা চালানোর পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এই কাজ করতে গিয়ে দমকলের আটজন কর্মী আহতও হয়েছেন।

আরও পড়ুন : কেউ সন্তানের অপেক্ষায়, কেউ ঝলসে গিয়েছে, গুলিস্তানের বিস্ফোরণের পর শুধুই হাহাকার

তবে এমন আগুন যে যে কোনও সময় লাগতে পারে, তার পূর্বাভাস আগে থাকতেই দেওয়া ছিল। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেট অত্যন্ত পরিচিত। এই কমপ্লেক্সে গুলিস্তান সহ আরও বেশকিছু মার্কেট রয়েছে। অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকা ও ভিড় অত্যাধিক হওয়ায় ঝুঁকি ছিলই। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বঙ্গবাজার মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ বলেও ঘোষণা করা হয়। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড়সড় বিপদ ঘটতে পারে বলেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই নোটিশ বারবার অগ্রাহ্য করেছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু ঈদের আগে এমন পরিস্থিতি হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে দোকানদারদের। কী করবেন না করবেন কিচ্ছু বুঝতে পারছেন না। কেবল চোখের জল ফেলছেন। কেন এরকম ঘটনা হল, আগুন লাগার কারণ কী, কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানার জন্য ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এখানেই প্রশ্ন উঠে আসছে।

bangladesh fire 1

কী প্রশ্ন? মাত্র কয়েকদিন আগের ঘটনা। বাংলাদেশের ঢাকারই আরেক মার্কেট গুলিস্তানে প্রবল বিস্ফোরণ হয়। একটি স্যানিটারি পণ্যের দোকানে এই বিস্ফোরণ হয়। অনেকেই মারা যান, আহতের সংখ্যাও প্রচুর। তারপর প্রায় নিকটবর্তী এলাকায় ফের অগ্নিকাণ্ড। প্রথমে ভাবা হয়েছিল গুলিস্তানের বিস্ফোরণ কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর কাজ। কিন্তু জানা যায়, ঘিঞ্জি পরিবেশ, ভিড় আর অসাবধানতার জন্যই স্যানিটারি দোকানে ব্যাপকভাবে এই বিস্ফোরণ হয়েছে।

বঙ্গবাজার মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডেও প্রাথমিকভাবে সেই বিপজ্জনক পরিবেশ, ঘিঞ্জি দোকানপাটের ছবিই সামনে আসছে। এরকম অবস্থা থাকলে আরও অগ্নিকান্ডের মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। অবিলম্বে এমন জায়গাগুলিকে চিহ্নিত করে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। নয়তো বারবার বাংলাদেশের মানুষ চোখের জল ফেলবেন।

More Articles