নিজ্জর-মামলায় কানাডার পাশে এবার অস্ট্রেলিয়া, ভারতের জন্য কতটা ভয়ের এই বন্ধুত্ব?

Hardeep Singh Nijjar: দু'সপ্তাহ আগেই কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (CBC)-র স্টোরি ব্লক করে দেয় ইউটিউব ও এক্স। যেখানে নিজ্জর হত্যা নিয়ে বেশ কিছু তথ্য ও ভিডিও ছিল বলে অভিযোগ। এবং সেই পদক্ষেপও ভারত সরকারের নির্দেশেই নেওয়া...

খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যা মামলায় ভারত-কানাডা দ্বৈরথে কিছুদিন আগেই উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশ। তলানিতে পৌঁছেছিল দু'দেশের সম্পর্ক। দু-দেশই ভিসা নিয়েও যথেষ্ট কড়াকড়ি করেছিল। তবে পরবর্তীতে থিতিয়ে যায় সেই উত্তাপ। কানাডার পাশে নিজ্জর ইস্যুতে এবার দাঁড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া। হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যায় ভারতকে কাঠগড়ায় তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। স্বাভাবিক ভাবেই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে ভারত সরকার। এবার সেই মামলায় কানাডার পাশে দাঁড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগ ছিল, ভারত সরকারের এজেন্ট নিজ্জর খুনে দায়ী। তাঁর অভিযোগের একমাস পর অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা প্রধান বলেছেন, কানাডার দাবির বিরোধিতা করার কোনও কারণ নেই। সেই বক্তব্যের সমর্থনে হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি করেছে অস্ট্রেলীয় ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (ABC)। তবে সেই ভিডিও নিয়ে আপত্তি রয়েছে ভারত সরকারের। দিল্লির নির্দেশে সম্প্রতি ইউটিউব ভারতীয় দর্শকদের জন্য সেই ভিডিওটি ব্লক করে দিয়েছে।

ইউটিউবের তরফ থেকে অস্ট্রেলীয় ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে ইমেল করে জানায়, ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশ অনুসারে ওই ভিডিওটি ব্লক করে দিয়েছে তারা। 'Sikhs, Spies and Murder: Investigating India’s alleged hit on foreign soil’—এই শিরোনামে সেই তথ্য়চিত্রটি বানিয়েছিল এবিসি। যেখানে ভারতকেই নিজ্জর হত্যার জন্য পুরোপুরি দোষারোপ করা হয়। শুধু ওই ভিডিওটি নয়, আরও একটি ভিডিও এনেছে তাঁরা। যেখানে তাঁরা দেখিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকেরা দেশে বসবাসকারী শিখদের সঙ্গে দেখা করে নিজ্জর হত্যা নিয়ে কথা বলেছে। তাঁদের মতামত তুলে ধরা হয়েছে সেই ভিডিওয়। সেই ভিডিওটিও ব্লক করে দিয়েছে ইউটিউব।

আরও পড়ুন: ফের ভারতে আসতে পারবেন কানাডার মানুষ, কাদের কাদের ভিসা দিচ্ছে নয়াদিল্লি?

দু'সপ্তাহ আগেই কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (CBC)-র স্টোরি ব্লক করে দেয় ইউটিউব ও এক্স। যেখানে নিজ্জর হত্যা নিয়ে বেশ কিছু তথ্য ও ভিডিও ছিল বলে অভিযোগ। এবং সেই পদক্ষেপও ভারত সরকারের নির্দেশেই নেওয়া হয়েছিল বলে খবর। এবিসি-র তরফে অবশ্য় জানানো হয়েছিল, যথেষ্ট সূক্ষ্মভাবে গবেষণার পরেই ওই ভিডিও তৈরি করা হয়েছিল। সেই ভিডিও ব্লক করা নিয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ অস্ট্রেলিয়া।

গত জুন মাসে কানাডার একটি গুরুদ্বারের বাইরে খুন হন হরদীপ সিং নিজ্জর। ভারতের কালো তালিকায় ছিল নিজ্জর। একাধিক জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। খলিস্তানি জঙ্গি নিজ্জরকে আশ্রয় দিয়েছিল কানাডা। নিজ্জর খুনের দায় ভারতের উপরেই চাপিয়েছিল কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। গত বছর জনসমক্ষেই ভারতকে কাঠগডডয়া তোলেন তিনি। সেই খুনের ঘটনায় ভারতের গুপ্তচরেরা জড়িত বলেও অভিযোগ করা হয়। সেই ঘটনায় কানাডার ভারতীয় কূটনৈতিকদের বরখাস্তও করা হয়। সেই নিয়ে ভালো মতোই সংঘাতে জড়িয়েছিল দু'দেশ। ভারতের কানাডিয়ান কূটনৈতিকদেরও বরখাস্ত করা শুরু হয় একের পর এক। কানাডার নাগরিকদের ভারতীয় ভিসার উপরেও জারি হয় নিষেধাজ্ঞা।

অস্ট্রেলীয় ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন সম্প্রতি অভিযোগ জানিয়েছে, কাজটি করার সময় ভারত সরকারের যথেষ্ট চাপের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের সাংবাদিকদের। পঞ্জাবে শুটিং করতে যাওয়ার সময় ভারতের অপরাধদমন সংক্রান্ত গোয়েন্দা বিভাগের জেরার মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁদের। পঞ্জাবের একটি বেসরকারি অনুষ্ঠানে শুটিং করতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল। কানাডার দাবি, নিজ্জর হত্যার তদন্তেও ভারত সরকার সহযোগিতা করছে না। গত নভেম্বরে নিখিল গুপ্ত নামে এক ভারতীয়কে কাঠগড়ায় তুলেছিল মার্কিন প্রসেকিউটার। তাঁর বিরুদ্ধে গুরপন্ত সিং পুন্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ ওঠে তাও আবার আমেরিকার মাটিতে। ভারতের কালো তালিকায় অবশ্য নাম রয়েছে পুন্নুনেরও। তাঁর বিরুদ্ধেও ভারতে একাধিক সন্ত্রাসমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন: কানাডার হিন্দু ভারতীয়দের হুমকি, কে এই গুরপতওয়ান্ত সিং পুন্নুন?

ভারতে আর কয়েকদিন বাদেই ভোট। এই পরিস্থিতিতে নিজ্জর হত্যামামলা নিয়ে কি নতুন করে অশান্তিতে জড়িয়ে পড়তে চলেছে নয়াদিল্লি। কানাডার সঙ্গে ফের ভিডিও ব্লক করা নিয়ে কি শুরু হয়ে যেতে পারে নয়া সংঘাত। সেক্ষেত্রে কিন্তু কানাডা এবার আর একা নয়। তার সঙ্গে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এমনিতেই কানাডাকে বরাবরই সমর্থন করে এসেছে আমেরিকা। এবার কি অস্ট্রেলিয়াকে পাশে পেয়ে নতুন শক্তি ফিরে পেতে চলেছে কানাডা। কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো নিজের দেশে একরকম ভাবে কোণঠাসা। গদি বাঁচাতে তাঁর হাতের একমাত্র তুরুপের তাস শিখ-ভোট। দীর্ঘদিন ধরেই খলিস্তানিদের আশ্রয় দিয়ে এসেছে কানাডা। অন্যদিকে কানাডা জুড়ে প্রচুর ভারতীয়ের বসবাস। নতুন করে সংঘাত শুরু হলে কতটা বিপদে পড়তে চলেছেন তাঁরা। একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলে দিয়েছে নিজ্জর হত্যা সংক্রান্ত এই ভিডিও কাণ্ড।

More Articles