অস্কারজয়ী দুই হাতিকে দেখতে ভিড় পর্যটকদের! রাতারাতি বিখ্যাত ভারতের এই পর্যটনকেন্দ্র

The Elephant Whisperer Oscars: মুদুমালাই-থেপ্পাকাডু হাতি ক্যাম্পে এই রঘু আর আম্মুকে স্বচক্ষে দেখতে এখন ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ।

ছুটিছাটা পেলে মানুষ বনগামী হয়। জঙ্গলে রাত্রিযাপনের মধ্যে দিয়ে নিজের অন্দরের আদিম চেতনকে ঝাঁকিয়ে দেখে নেয়, জঙ্গলের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে, অথবা নিরাপদ গাড়িতে চেপে বন্যপ্রাণীদের দেখতে দেখতে ছুটি কাটান পর্যটকরা। অভয়ারণ্যে পশুরাই রাজা, মানুষ ভয়ে ভয়ে সেই রাজত্বে ঘণ্টাখানেক কাটানোর সুযোগ পায়। বাঘ আর সিংহের পর সম্ভবত সবচেয়ে বেশি নেশা মানুষের হাতি দেখায়। হাতির যূথবদ্ধতা, হাতির প্রখর বুদ্ধি মানুষকে টানে। আর টানে হুজুগ। সদ্য অস্কার জেতার পরদিনই যেভাবে মানুষকে টেনেছে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর মুদুমালাই-থেপ্পাকাডু হাতি ক্যাম্প। এই ক্যম্পেই থাকে রঘু আর আম্মু, সেই দুই অনাথ হস্তিশাবক যাদের বড় করে তুলেছিলেন এক মানব দম্পতি। যাদের জীবন নিয়েই তৈরি হয়েছিল দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স। সোমবার লস অ্যাঞ্জেলেসে দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স এবং এসএস রাজামৌলির RRR-এর নাটু নাটু দু'টি অস্কার জিতেছে৷ The Elephant Whisperers একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র। যার মূল চরিত্র দুই অনাথ হাতি, রঘু আর আম্মু। এক আদিবাসী দম্পতি বোম্মান এবং বেলির যত্নে বেড়ে ওঠে রঘু আর আম্মু। বোম্মান ও বেলির সঙ্গে রঘু ও আম্মুর গড়ে ওঠা সম্পর্কের বন্ধনই তথ্যচিত্রটির প্রাণভোমরা।

মুদুমালাই-থেপ্পাকাডু হাতি ক্যাম্পে এই রঘু আর আম্মুকে স্বচক্ষে দেখতে এখন ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ। তথ্যচিত্রটি অস্কার জেতার পর থেকেই ভিড় উপচে পড়ছে এই ক্যাম্পে। দেশের নানা প্রান্ত তো বটেই, লন্ডন থেকেও পর্যটকরা এসেছেন অস্কারজয়ী রঘু-আম্মুকে দেখতে। ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত থেপ্পাকাদু এলিফ্যান্ট ক্যাম্প এশিয়ার প্রাচীনতম ক্যাম্প। বর্তমানে ২৮টি হাতি রয়েছে এই ক্যাম্পে যারা একসময় বুনো হাতি ছিল। সেইসময় এই হাতিদের আক্রমণে ফসল নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে প্রাণহানি, বিবিধ ঘটনাই ঘটেছে। পরে এই হাতিগুলিকে ক্যাম্পে এনে 'কুনকি' হাতিতে রূপান্তরিত করা হয়।

আরও পড়ুন- অস্কারের মঞ্চে কলকাতার মেয়ে! ‘এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’-এর দৌলতে বিরল কৃতিত্ব বাঙালি কন্যার

The Elephant Whisperers জিতেছে বেস্ট ডকুমেন্টারি শর্ট সাবজেক্ট বিভাগের অস্কার! কার্তিকি গঞ্জালভেস পরিচালিত এবং গুনীত মঙ্গা প্রযোজিত দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স, ৯৫ তম আকাডেমি পুরস্কারের মঞ্চে স্বল্পদৈর্ঘ্যের বিষয়ের সেরা তথ্যচিত্রের সম্মান জিতেছে। এই বিভাগে মনোনীত অন্য চারটি তথ্যচিত্র ছিল, হলআউট, দ্য মার্থা মিশেল এফেক্ট, স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট, এবং হাউ ডু ইউ মেজার আ ইয়ার? দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স এই বিভাগে অস্কার জয়ী প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র। এর আগে অবশ্য দু'টি তথ্যচিত্র এই বিভাগে মনোনীত হয়েছিল। The House that Ananda Built এবং An Encounter With Faces তথ্যচিত্র দু'টি ১৯৬৯ এবং ১৯৭৯ সালে সেরা ডকুমেন্টারি শর্টের জন্য মনোনীত হয়।

অস্কারের মঞ্চে এই ৪১ মিনিটের তথ্যচিত্রের পরিচালক কার্তিকি গঞ্জালভেস এবং প্রযোজক গুনীত মঙ্গা এই বিশেষ সম্মান অর্জন করেন। কার্তিকির কথায়, মানুষ এবং প্রাকৃতিক বিশ্বের মধ্যেকার পবিত্র বন্ধনের কথা বলে এই তথ্যচিত্র। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সম্মান, অন্যান্য জীবের প্রতি ভালোবাসা, সহ-অস্তিত্ব সবটুকু মিলেই তৈরি হয়েছে এই তথ্যচিত্র।

আরও পড়ুন- দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স : ভারতকে প্রথম অস্কার এনে দিল যে ৪১ মিনিটের কাহিনি!

লন্ডন থেকে এক পর্যটক শুধু ছুটে এসেছেন বাচ্চা হাতির অস্কার জয়ের খবরে। পর্যটকরা আসলে শুধু হাতি দেখতে ভিড় জমাননি, রঘু-আম্মুর বেড়ে ওঠার দৃশ্যগুলি যেন প্রত্যক্ষ করতে চেয়েছেন। থেপ্পাকাডু হাতি ক্যাম্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েকজন বিদেশি পর্যটক হাতি এবং মাহুতদের সঙ্গে দেখাও করতে চেয়েছিলেন আলাদা করে। রঘু আর আম্মু অবশ্য অস্কার জেতার খবর জানে না, তারা রোজের যাপনে বেঁচে আছে। বেঁচে আছে মানুষের ভালোবাসায়। বেঁচে আছে পরম মায়ায়, নিবিড় যত্নে৷

The Elephant Whisperers তথ্যচিত্রটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে Netflix-এ মুক্তি পায়। এই তথ্যচিত্রের প্রেক্ষাপট তামিলনাড়ুর মুদুমালাই টাইগার রিজার্ভ। এটিই পরিচালক হিসেবে কার্তিকি গঞ্জালভেসের আত্মপ্রকাশ। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এর আগে কার্তিকি জানিয়েছিলেন, পাঁচ বছর ধরে রঘুর গল্পটিকে ভেবে চলেছিলেন তিনি। প্রায় ৪৫০ ঘণ্টার ফুটেজ ছিল। সেখানে রঘুর স্নান, তার খাওয়া বা খেলার হাজার হাজার দৃশ্য ধরা ছিল। সেই হাজার হাজার দৃশ্যের মধ্যে বসে ধৈর্য ধরে খুঁজে বের করেছেন তিনি এমন কিছু দৃশ্য যেখানে বেলি আম্মুকে তার পাশে বসতে বলছে। এই অপার্থিব অন্তরঙ্গ মুহূর্ত সাধারণের কল্পনাতেই আসে না, ভেবেচিন্তে এই দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে না। হাতি এবং আদিবাসী দুই তরফের সম্পর্ককে বুনেছে এই তথ্যচিত্র। বহু শতাব্দী ধরে মানুষ আর বন্যপ্রাণীর এই সম্পর্ক ভিড়ের উদযাপন নয়, নিবিড় যাপনের কাহিনি। যে কাহিনিই ভারতকে প্রথম নিজস্ব অস্কার এনে দিয়েছে।

More Articles