আদানির পর ফের মরণকামড় হিন্ডেনবার্গের! টুইটার প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে কোন জালিয়াতির অভিযোগ?

Twitter Jack Dorsey Hindenburg : বিশ্বখ্যাত সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। আর তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধেই কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ আনল হিন্ডেনবার্গ।

ভারতের রাজ্য রাজনীতি এখন বিভিন্ন ঘটনার জেরে সরগরম। রাহুল গান্ধীর শাস্তি, সাংসদ পদ খারিজ, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের দামামা, সবই লেগে আছে। তার মধ্যেই বেশ কয়েকদিন ধরে জায়গা করে নিয়েছে গৌতম আদানি এবং তাঁর আদানি গ্রুপ। আমেরিকার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের টালমাটাল করা গবেষণার রিপোর্টের পর কার্যত ধস নেমেছিল আদানির শেয়ারে। তারপর ফের একবার মরণকামড় দিল হিন্ডেনবার্গ। এবার কোনও ভারতীয় সংস্থা নয়, জ্যাক ডোরসির পেমেন্ট ফার্ম ‘ব্লক’-এর বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছে তারা। কে এই জ্যাক ডোরসি? এক কথায় বলতে গেলে, বিশ্বখ্যাত সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। আর তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধেই কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ আনল হিন্ডেনবার্গ।

এই ঘটনায় আসার আগে ফিরে দেখা যাক আগের দৃশ্য। নতুন একটি বছর সবে শুরু হয়েছে। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকেই কার্যত বোমা ফাটাল হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ গ্রুপ। নিশানায় ভারত এবং বিশ্বের অন্যতম ধনী শিল্পপতি গৌতম আদানি। তাঁর এবং আদানি গ্রুপের সম্পর্কে দু’বছর ধরে গবেষণা করেছেন তারা। তারপরই বিস্তারিত রিপোর্ট সামনে এনেছে। হিন্ডেনবার্গের বক্তব্য, বিগত ১০ বছর ধরে জালিয়াতি আর কারচুপি করে যাচ্ছে আদানি গ্রুপ। বিশেষ করে বাজারে নিজেদের শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে মুনাফা বাড়িয়েছে তারা। এমন তথ্য সামনে আসার পরই শোরগোল পড়ে যায় বাজারে। আদানিদের শেয়ার হু হু করে নামতে থাকে। রাতারাতি কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয় আদানির।

আরও পড়ুন : আদানির পতনে আসলে লাভ হিন্ডেনবার্গের! কেন পশ্চিমী গবেষণাই আজও মান্যতা পায় দেশে?

অবশ্য স্রেফ শেয়ার বাজার আর ব্যবসার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি এই ইস্যু। সেখানে প্রবলভাবে জড়িয়ে পড়েছে দেশের রাজনীতি। খোদ আরএসএস গৌতম আদানির পাশে এসে দাঁড়ায়। সেইসঙ্গে গৌতম আদানি এবং আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা ভারতের ওপর আক্রমণ। ইচ্ছে করে এই আক্রমণ করা হয়েছে। কিন্তু এই ‘দেশাত্মবোধ’-এর বাণী খুব একটা কাজে দেয়নি।

অবশ্য গৌতম আদানির পর থেমে থাকেনি হিন্ডেনবার্গ। ইতিমধ্যেই নতুন করে আসরে নেমেছে তারা। বিস্তারিত গবেষণা করে ফের একবার বোমা ফাটাল তারা। এবার তাদের লক্ষ্য জ্যাক ডোরসি। গোটা বিশ্বের কাছে তাঁর পরিচয় টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। তাঁর হাত ধরেই জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল এই সোশ্যাল মিডিয়ার। তবে এখানে টুইটার নয়, নিশানায় ডোরসিরই আরেকটি পেমেন্ট ফার্ম ‘ব্লক’। হিন্ডেনবার্গের দাবি, এই সংস্থাটি একইভাবে কারচুপি করেছে। জালিয়াতিও করেছে।

আরও পড়ুন : আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বড় জালিয়াতির অভিযোগ হিন্ডেনবার্গের, কীভাবে করা হয় এই রিসার্চ?

হিন্ডেনবার্গের আরও দাবি, সংস্থার প্রাক্তন কর্মীরাই নাকি বলেছেন, ব্লকের অন্তত ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ অ্যাকাউন্টই ভুয়ো! অর্থাৎ, মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। সেইসঙ্গে গ্রাহকদের জন্য খরচের পরিমাণও কমিয়ে দেখানো হয়েছে। প্রতারণা, ভুয়ো অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি নিজেদের শেয়ার দরও অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছে ডোরসির এই সংস্থা। করোনার সময় সাহায্য করার নামে আখেরে প্রতারণাই করে গিয়েছে ব্লক, এমনটাই দাবি হিন্ডেনবার্গের।

প্রায় এরকমই দাবি ছিল আদানি গ্রুপের ক্ষেত্রেও। তারপর ঠিক কী হয়েছিল, সেটা আর নতুন করে মনে করাতে হবে না। আপাতত টুইটার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডোরসির ‘ব্লক’ সংস্থাটিও সেরকম ক্ষতির মুখেই পরতে চলেছে। ইতিমধ্যেই সংস্থার শেয়ারের দর ২০ শতাংশ পড়ে গিয়েছে। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ৪৫০০ কোটিরও বেশি অঙ্কের টাকা রাতারাতি উধাও হয়ে গেল। এখন আর কত নীচে গড়ায় এই শেয়ারের গ্রাফ, কী কী তথ্য উঠে আসে সেটাই দেখার।

More Articles