নবান্নে আবার বৈঠক, এবার যেসব দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দরজায় জুনিয়র ডাক্তারেরা

RG Kar Junior Doctor's Protest: বুধবার বিকেলে আরও এক দফা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা জানান জুনিয়র ডাক্তারেরা।

পঞ্চম বারের চেষ্টায় জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক সফল হলেও কাটল না জট। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি শুনে তার মধ্যে বেশ কয়েকটি মেটানোর চেষ্টাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে তাঁদের আইনজীবী জানান, মঙ্গল-বুধবারের মধ্যেই জিবি-র মাধ্যমে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে তাঁদের তরফে। তবে বুধবার ফের দ্বিতীয়বার রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে হল মুখ্যমন্ত্রীকে। আরও একবার রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে নবান্নে গেলেন জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল।

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে সন্তুষ্ট হওয়ার কথা জানালেও জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জানানো হয়েছিল, হাসপাতালগুলিতে তাঁদের কাজ করার নিরাপদ পরিবেশ সুনিশ্চিত না করা গেলে কাজে ফিরবেন না তাঁরা। হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়াতে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, সে সংক্রান্ত রিপোর্টও রাজ্যের তরফে জমা দেওয়া হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। তাতে সন্তুষ্ট হয়নি আদালতও। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথাও এখনও পড়ুয়াদের তরফে ঘোষণা করা হয়নি ফলে। বুধবার বিকেলে আরও এক দফা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা জানান জুনিয়র ডাক্তারেরা। সাংবাদিক বৈঠক করে তেমনটাই জানানো হয় তাঁদের তরফে। জানানো হয়, তাঁদের আরও বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি রয়েছে। সেসব কথাই মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

আরও পড়ুন: কর্মবিরতি থেকে কাজে ফিরছেন কবে? যা জানালেন আন্দোলনরত ডাক্তারেরা

তাঁদের প্রথম দাবি— প্রতিটি মেডিকাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য আলাদা রেস্ট রুম, আলাদা শৌচাগার, প্রতিটি রেস্ট রুমের সামনে সিসিটিভি, যথাযথ নিরাপত্তাকর্মী, প্রতিটি অন কল রুমে প্যানিক বাটন, প্রতিটি হাসপাতালের ফাঁড়িতে নির্দিষ্ট সংখ্যায় নারী পুলিশকর্মী নিয়োগ। হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যৌন হেনস্থা প্রতিরোধে আইসিসি গঠন করা। কলেজ স্তরে এই দাবিগুলিকে রূপায়ণ করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে কলেজভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠন করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। টাস্ক ফোর্সে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিত্ব রাখার দাবিও জানানো হয়েছে।

Agitating Junior Doctors Meet Bengal Chief Secretary To Resolve RG Kar Hospital Impasse

দ্বিতীয় দাবিতে বলা হয়েছে, একটি কেন্দ্রীয় ‘রেফারাল সিস্টেম’ গড়ে তোলা। যাতে প্রতিটি হাসপাতালে কোন বিভাগে কোন সময়ে ক’টি বেড খালি আছে, সেই তথ্য সকলে জানতে পারেন। এতে রোগীদের হয়রানি বন্ধ করা যাবে, নির্মূল হবে হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে গড়ে ওঠা দালালচক্র। এ ছাড়া তাঁদের দাবি, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ, জেলা হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে যথাযথ সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক কর্মীর বদলে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করতে হবে। সমস্ত স্তরের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে, রক্তপরীক্ষা থেকে অন্যান্য যাবতীয় পরীক্ষানিরীক্ষার পরিকাঠামো যথাযথ ভাবে গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিত্ব-সহ টাস্ক ফোর্স গড়ার দাবিও জানানো হয়েছে।

ডাক্তারদের তৃতীয় দাবি, প্রতিটি কলেজে ভয়ের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি কলেজে এই ধরনের ঘটনা যাঁরা ঘটিয়েছেন, ঘটিয়ে চলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গড়তে হবে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য স্তরে বিশেষ কমিটি গড়তে হবে। এই কমিটিগুলিতে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে হবে। ডাক্তারেরা আরও বলেন, ‘‘শুধুমাত্র যাঁরা বিভিন্ন কলেজে এই কাজগুলি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন প্রতিটি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজে গণতান্ত্রিক পরিসরকে বিস্তৃত করা। এর জন্য সব ক’টি মেডিক্যাল কলেজে রেসিডেন্ট ডক্টরস’ অ্যাসোসিয়েশনগুলিকে স্বীকৃতি দিতে হবে, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে স্টুডেন্ট ইউনিয়ন নির্বাচন করাতে হবে। প্রতিটি কলেজ এবং হাসপাতালের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটিতে (কলেজ কাউন্সিল, রোগী কল্যাণ সমিতি) নির্বাচিত জুনিয়র ডাক্তার/ ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে হবে। হাউস স্টাফশিপ নিয়োগের ক্ষেত্রে শাসকদলের যে ব্যাপক দুর্নীতি প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে চলে, তা বন্ধ করতে হবে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য ভবন থেকে স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, ডাক্তার নিয়োগ করতে হবে। বর্তমানে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াতে যে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ চলে, তা বন্ধ করতে হবে।’’

আরও পড়ুন:‘কর্তব্যে গাফিলতি মুখ্যমন্ত্রীর’! ক্ষোভ উগরে দিলেন তিলোত্তমার মা

মঙ্গলবারই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্যকে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিগুলি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে এবং অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে হবে। চিকিৎসকদের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, এই সমস্ত দাবি নিয়ে সরকারের থেকে সুনির্দিষ্ট লিখিত প্রতিশ্রুতি ছাড়া তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান এবং কর্মবিরতির প্রশ্নে কোনও পদক্ষেপ করতে পারছেন না। সল্টলেক থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের নিয়ে এদিন বাস রওনা দেয় নবান্নের উদ্দেশে। ৬টা ১৫ মিনিটের মধ্যে তাঁদের নবান্নের সামনে পৌঁছতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস দেরিতে ছাড়ায় বৈঠক শুরু হতে বেশ খানিকটা দেরি হয়ে যায়। কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে স্টেনোগ্রাফার নিয়ে গিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বুধবার নবান্নেও স্টেনোগ্রাফার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বৈঠকের কার্যবিবরণী লেখার কাজ করবেন তাঁরা। নবান্নের সভাঘরে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখ্যসচিব এবং টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের বৈঠক চলছে। বৈঠকে রয়েছেন মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজিও। সেই বৈঠকে আদৌ তাঁদের তোলা দাবিগুলি মেনে নেওয়া হবে না নতুন করে কোনও জটিলতা তৈরি হতে চলেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তার জন্য বৈঠক শেষ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরা ছাড়া পথ নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।

More Articles