ফিরছে কুষ্ঠরোগ! ভয়াবহ সংক্রমণ কীভাবে জেগে উঠল ফের?
Leprosy: ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৫৯টি কুষ্ঠ রোগের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ফ্লোরিডা রাজ্যেই পরিমাণটা সর্বাধিক।
পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব ক্রমেই বিপন্নতার মুখে! করোনা মহামারী এসে লহমায় গুলিয়ে দিয়েছিল বেঁচে থাকার সমস্ত হিসেব নিকেশ। এবার আরও এক বিপন্নতা আমাদের সম্মুখে। আর তা কোনও নতুন আশঙ্কা নয়। বরং, এই বিপন্নতা জেগে উঠছে শতাব্দী পর! ফিরছে কুষ্ঠরোগ! ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) প্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদন বলছে, ফ্লোরিডায় আশ্চর্যজনক এবং সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ফিরে এসেছে কুষ্ঠরোগ। আরও খারাপ ব্যাপার হচ্ছে, সংক্রামক এই রোগটি মহামারী আকার নিতে পারে। অর্থাৎ সহজে মুক্তি মিলছে না।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৫৯টি কুষ্ঠ রোগের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ফ্লোরিডা রাজ্যেই পরিমাণটা সর্বাধিক। সেন্ট্রাল ফ্লোরিডায় রাজ্যের ৮১ শতাংশ প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং জাতীয়স্তরে ঘটা সংক্রমণের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই এই রাজ্যে।
সেই বাইবেলের সময় থেকেই কুষ্ঠরোগের ভয়াবহতা গেঁথে রয়েছে মানুষের মনে। হ্যানসেন'স ডিজিজ নামেও পরিচিত এই কুষ্ঠরোগ মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রে বা মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রোমাটোসিস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট এক দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ, যা স্নায়ু, শ্বাসতন্ত্র, ত্বক এবং চোখের ক্ষতি করতে পারে। এই রোগের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ত্বকে বিবর্ণ দাগ, ত্বকের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, পায়ের তলায় আলসার, মুখের ব্যথাহীন ফোলাভাব, অসাড়তা এবং সম্ভাব্য পক্ষাঘাত।
স্নায়ুর ক্ষতি এই রোগের সবচেয়ে সমস্যাজনক বিষয় কারণ এর ফলে ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতাও চলে যায়, যার ফলে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে কিনা তা টেরও পাওয়া যায় না। কখনও কখনও, ক্ষতিগ্রস্থ অঙ্গগুলি কেটে ফেলতে হয়। যদিও প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা এবং আধুনিক চিকিত্সার জন্য এখন তুলনামূলকভাবে বিরল হয়ে উঠেছিল এই রোগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই রোগটির কিন্তু তেমন কোনও ইতিহাস নেই। যদি কুষ্ঠরোগ দেখা দিয়ে থাকে তাহলে হয় সেগুলি সাধারণত বিশ্বের অন্য কোনও অংশ থেকে এসেছে যেখানে এই রোগটির শিকড় রয়েছে। তবে প্রতিবেদন বলছে, এখন এক-তৃতীয়াংশ সংক্রমণই স্থানীয়ভাবেই ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া মানুষদের মধ্যেই সংক্রমণ ঘটেছে। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এই ব্যাকটেরিয়াগুলি অত্যন্ত ধীরে বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন- চেঁচিয়ে কথা বলা অভ্যাস? হু হু করে ভারতীয়দের দেহে বাড়ছে এই ক্যান্সার…
কোত্থেকে হঠাৎ ফিরে এল কুষ্ঠ? গবেষকরা সংক্রমণের উত্স দেখে বিভ্রান্ত, তারা বুঝতেই পারছেন না কীভাবে এতকাল পরে কুষ্ঠ ছড়াচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, চিকিত্সা না করা কুষ্ঠরোগের সঙ্গে দীর্ঘকাল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেই একমাত্র রোগটির উৎস জানা সম্ভব।
ফ্লোরিডায় সাম্প্রতিক কুষ্ঠরোগের বৃদ্ধির পিছনে সন্দেহ করা হচ্ছে একটি প্রাণীকে। সংক্রমণের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে এমন মানুষদের মধ্যে দেখা গেছে যারা বাইরে অনেকটা সময় কাটাচ্ছেন। প্রাকৃতিক পরিবেশের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে এই মানুষরা প্যাথোজেনের সংস্পর্শেও আসছেন। এখান থেকেই সন্দেহ গিয়ে পড়ছে আর্মাডিলোর উপর। দক্ষিণ ফ্লোরিডার কিছু অংশে এই ব্যাকটেরিয়া বহন করতে পারে আর্মাডিলোই। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অংশে, যেখানে আর্মাডিলোরা স্বাভাবিকভাবে বসবাস করে না সেখানেও কুষ্ঠরোগ বাড়ছে।
তবে, ভালো বিষয় হচ্ছে প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষের কুষ্ঠ রোগের প্রাকৃতিক অনাক্রম্যতা রয়েছে। সময়মতো ধরা পড়লে এর চিকিৎসাও হচ্ছে। রোগীদের সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের সংমিশ্রণই দেওয়া হয় যা কয়েক বছর ধরে নিয়মিত খেতে হয়। তবে, এতকাল পরে, কুষ্ঠরোগ যে নির্মূল হয়নি, এই ভাবনাটি আশঙ্কার মেঘকে দূরে সরাচ্ছে না মোটেও। স্বস্তি আছে, কিন্তু শান্তি নেই গবেষকদের।