এবার কি সত্যিই আসতে চলেছে ভিনগ্রহীরা? আকাশের 'রহস্যময় আলো' নিয়ে তুলকালাম বিশ্ব

Alien Invasion on The Earth : এক-দু’বার নয়, বেশ অনেকবারই নাকি দেখা গিয়েছে ভিনগ্রহীদের মহাকাশযান! এমন তথ্য পাওয়ার পরই একটু নড়েচড়ে বসেছে সবাই।

‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’-কে মনে আছে? সেই যে কাঁকুড়গাছি প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারমশাই বঙ্কুবিহারী দত্ত। ছাপোষা, নিরীহ ভালমানুষটির পেছনে লাগত সবাই। স্কুলের ছাত্র থেকে শুরু করে পাড়ার বন্ধুরা – সব জায়গায় তিনি ঠাট্টার পাত্র। এই বঙ্কুবাবুর সঙ্গেই বাঁশবাগানে একদিন দেখা হয়ে গেল অ্যাংয়ের। ক্রেনিয়াস গ্রহের অ্যাং, সে ভিনগ্রহের প্রাণী। পৃথিবীতে বঙ্কুবাবুর কোনও বন্ধু নেই, যারা আছেন, তাঁরা টিটকিরি মারেন। অ্যাং এসে তাঁর চোখ খুলে দিল! এই ভিনগ্রহের বন্ধুর দৌলতেই বঙ্কুবাবু একেবারে বদলে গেলেন।

ছোটবেলায় স্কুলের পাঠ্যবই হোক বা লাইব্রেরি থেকে আনা কল্পবিজ্ঞানের বই – ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’ পড়েননি এমন বাঙালি খুব কমই আছে। ছোটবেলার কল্পনাকে এক ধাক্কায় অনেকখানি উস্কে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। তারপর একের পর এক সিনেমা আসে - ই.টি.(E.T.), অ্যাভাটার (Avatar) ইত্যাদি ইত্যাদি। অ্যাভেঞ্জার্স, মারভেল কমিক্সের দৌলতে সবাই ভাবতে থাকে, ইস! আমাদের এখানেও যদি এরকম ঘটনা ঘটে! যদি নেমে আসে অ্যাং!

ভিনগ্রহের প্রাণীরা নাকি সুযোগ পেলেই ঢুঁ মেরে যায় পৃথিবীতে! বিগত বেশ অনেক বছর ধরেই এমন তত্ত্ব ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বে। গোটা মহাবিশ্বে কেবল আমাদের এই পৃথিবীতেই একমাত্র প্রাণের স্পন্দন রয়েছে! আর কোথাও নেই? এই একটি প্রশ্ন কেবল আমজনতা নয়, বিজ্ঞানীদেরও ভাবায়। বহু বছর ধরে এই ভিনগ্রহের প্রাণী, ইউএফও খোঁজার রেশ চলে আসছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নজর গিয়ে পড়ে আমেরিকার ওপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এরিয়া ৫১ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন তত্ত্ব। চূড়ান্ত গোপনীয় ওই এলাকায় কাকপক্ষীও ঢুকতে পারে না। কী আছে ওখানে? কেউ কেউ বলেন, ওখানেই নাকি লুকিয়ে রয়েছে ভিনগ্রহের ‘রহস্য’। এলিয়েনরা নাকি হলিউডের সিনেমার মতোই আমেরিকার ওই জায়গায় নেমে আসে। সেই সিক্রেটই লোকানো আছে এরিয়া ৫১-এ! যদিও প্রমাণ কিছু পাওয়া যায়নি, তবুও… কানাঘুষো এখনও জারি আছে।

আরও পড়ুন : বাংলার আকাশে অজানা আলো! অবশেষে সামনে এল আসল রহস্য

তবে এই লেখার মূল ভিত্তি এরিয়া ৫১ নয়। এর আগেও নাকি বহুবার আমেরিকায় দেখা গিয়েছে ‘ফ্লাইং সসার’ বা উড়ন্ত চাকতি। ভিনগ্রহের মহাকাশযান নিয়ে অনেক ফটোগ্রাফও ভাইরাল নেট মাধ্যমে। আমেরিকার প্রশাসন, সেনার তরফে আগেও অনেকবার অভিযানে নামা হয়েছে। তবে মাঝখানে বন্ধ ছিল সেসব। কিন্তু সাম্প্রতিক বেশকিছু বছরে পরিস্থিতি বদলেছে। আমেরিকার বিভিন্ন জায়গার বাসিন্দারা আকাশে নাকি ইউএফও দেখেছেন। এক-দু’বার নয়, বেশ অনেকবারই নাকি দেখা গিয়েছে ভিনগ্রহীদের মহাকাশযান! এমন তথ্য পাওয়ার পরই একটু নড়েচড়ে বসেছে আমেরিকা।

তবে এবার ব্যাপার বোধহয় আরও একটু গুরুতর। কারণ এবার আসরে নেমেছে খোদ মার্কিন সেনা আর পেন্টাগন! কেন এমন তাড়াহুড়ো? সম্প্রতি আমেরিকার নৌবাহিনী একটি বিশেষ ‘বস্তু’কে চিহ্নিত করেছে। সাদা কালো ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে, চারদিকে মেঘ, আর কিচ্ছু নেই। হঠাৎই মাঝখানে কালো একটা বস্তু উদয় হল। দেখতে ঠিক অনেকটা ভিনগ্রহীদের মহাকাশযানের মতোই। যে যানের ছবি বিভিন্ন অ্যানিমেশন, কার্টুন আর কল্পবিজ্ঞানে দেখা যায়। এটাই কি ইউএফও!

খেয়াল করুন, কোনও ব্যক্তির ক্যামেরা নয়, খোদ মার্কিন নেভির হাতে এমন ছবি ধরা পড়েছে। সেইসঙ্গে ২০২২ তো বটেই, বিগত কয়েক বছরে আকাশে নাকি এমন অনেক ‘অজানা আলোর বস্তু’ দেখা গিয়েছে! বিভিন্ন রিপোর্ট, ভিডিও, ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেসব এসে পৌঁছেছে পেন্টাগনের হাতেও। তারপরই বিশেষ একটি অভিযানে নেমেছেন তারা। অল ডোমেইন অ্যানোমেলি রেজোলিউশন অফিস (AARO) এই তদন্ত চালাচ্ছে। 'প্রোজেক্ট ব্লু বুক' (Project Blue Book) নামের এই অভিযান ফের শুরু করতে চলেছে মার্কিন এয়ার ফোর্স। আমেরিকা প্রশাসনের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে আকাশে ১৪০টিরও বেশি 'রহস্যময় আলো'র সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। মার্কিনীদের সন্দেহ, এগুলো নির্ঘাত ইউএফও। কিন্তু সেগুলো আদতে কী, তা এখনও বোঝা যায়নি। ২০২২-এও 'রহস্যময় বস্তু'র এমন বিস্তর ছবি, ভিডিও সামনে এসেছে। এসবের জন্যই নতুন করে ফের অভিযানে নেমেছে আমেরিকা। 

কিন্তু সত্যিই কি কিছু আছে? কিছু পাওয়া গিয়েছে? রয়টার্সকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে আমেরিকার ডিফেন্স ফর ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটির আন্ডার সেক্রেটারি রোনাল্ড মুলট্রি জানিয়েছেন, এখনও অবধি সেরকম কিছু পাওয়া যায়নি। তবে বেশকিছু রিপোর্ট, তথ্য তাঁদের হাতে এসেছে। সেগুলো নেহাত হেলাফেলার নয়। তাই ভিনগ্রহের প্রাণীরা যে যাতায়াত করে না, ইউএফও যে আসছে না সেটা এখনই হলফ করে বলা যাচ্ছে না। বরং সেই সম্ভাবনা সত্যিও হতে পারে বলে মনে করছেন রোনাল্ড।

আরও পড়ুন : রাতের আকাশে সেই রহস্যময় আলো! কেন তড়িঘড়ি এত বড় পরীক্ষা করল ভারত?

তবে এর জন্য কেবল মহাকাশই নয়, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, বনজঙ্গল এমনকী সমুদ্রের গভীরেও অভিযান চালানো হতে পারে। একেবারে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিজ্ঞানের পদ্ধতি মেনে এই অভিযান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। তাহলে কি নতুন বছরেই মানুষের সম্মুখীন হতে চলেছে ভিনগ্রহের প্রাণীরা? আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

তবে কেবল আমেরিকার আকাশেই এমন 'ভিনগ্রহের তাণ্ডব' কেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। কলকাতার আকাশে কয়েকদিন আগেই দেখা গেল রহস্যময় আলো। ভিনগ্রহীদের অপেক্ষায় থেকেও শেষমেশ কিছু হল না। ইউএফও নয়, সেটি আসলে ছিল অগ্নি-৫ মিসাইল। তাহলে কি বাঙালি কখনও সাক্ষাত পাবে না অ্যাংয়ের? বঙ্কুবাবুর বন্ধুরা আসবে না এখানে, এই বাংলার মাটিতে? 

More Articles