সাংবাদিকদের উপর রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলার বিকল্প সংবাদমাধ্যমের সমস্বর
News Click Vs Central Govt: স্বাধীন সাংবাদিকদের উপর এই নির্লজ্জ আক্রমণকে আমরা ধিক্কার জানাই। আমরা এই দমনপীড়নের বিরুদ্ধে বারবার লিখতে, বলতে, জনমত গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
নিউজক্লিক ওয়েবসাইটের সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ এবং সংস্থার মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান অমিত চক্রবর্তী গতকাল ভোর থেকে জেরার পর রাতে গ্রেফতার হয়েছেন, নিউজক্লিকের অফিস সিল করে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। হবে না-ই বা কেন? সাংবাদিক মানে তো হ্যাঁ হ্যাঁ বলা সং। মোদী-শাহ, আদানি-আম্বানি এবং হিন্দুত্ববাদের বেসরকারি মুখপাত্র। এটাই যেন স্বতঃসিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দেশে। আর যে বা যাঁরা প্রশ্ন করেন, 'না' বলেন, শিরদাঁড়াটা বিক্রি করতে রাজি হন না, ঘৃণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, তাঁদের জন্য জারি অলিখিত জরুরি অবস্থা। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা, ২০২২ সালে নিশানা করা হয়েছে ১৯৪ জন সাংবাদিককে।
দেশদ্রোহিতা থেকে মানহানি -- আইন অপব্যবহারের চূড়ান্ত নিদর্শন দেখেছি আমরা, ইন্ডিয়া তথা ভারতের জনতা। সাংবাদিকদের গতিবিধি মাপতে কখনও মুখোশের আড়াল থেকে পেগ্যাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে। কখনও আবার ইডি, সিবিআই আসরে নেমে দিনভর তল্লাশির নামে হয়রান করেছে স্বাধীন সাংবাদিকদের, মোদি-শাহের আনুগত্য অস্বীকার করা প্রতিষ্ঠানগুলিকে। এই তালিকাতেই শেষ সংযোজন, নিউজক্লিকের সঙ্গে জড়িত অন্তত ১২ জন স্বাধীন সাংবাদিক/সম্পাদক, সমাজকর্মী, ইতিহাসবিদ, বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি। ৩ অক্টোবর (মঙ্গলবার), ২০২৩, মোট ৩৫টি জায়গায় অমিত শাহের দিল্লি পুলিশের অভিযান চলেছে। পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা, অভিসার শর্মা, অনিন্দ্য চক্রবর্তী, ভাষা সিং, সঞ্জয় রাজৌরাদের মোবাইল, ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। নিউজক্লিকের অন্যান্য কর্মীর বাড়িতেও হানা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রবীণ সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতাকে বারবার হেনস্থা, কীসের মাশুল?
কখনও দিল্লি পুলিশ, কখনও আবার ইডি, সিবিআইকে ব্যবহার করে স্বাধীন সাংবাদিকদের হেনস্থার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ এই ঘটনা প্রথম নয়। গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে বিবিসির সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র সম্প্রচারিত হতেই তাদের দিল্লি, মুম্বই অফিসে আয়কর হানা কেউ ভোলেনি। কেউ ভোলেনি দুর্ভেদ্য মণিপুরে ঢুকতেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর-এর ঘটনা। অতীতে বেশ কয়েকবার নানা ছুতোয় নিউজক্লিকের অফিসে ইডি হানা এবং সম্পাদককে ঘন্টার পর ঘন্টা জেরার ঘটনা ঘটেছে। মজার কথা, দেশপ্রেমিক সরকার এবার হাতিয়ার করেছে মার্কিনি কাগজ নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনকে। সেখানে তেমন কোনও প্রমাণ ছাড়াই দাবি করা হয়েছিল নিউজক্লিক টাকা পেয়েছে চিনের হয়ে প্রোপাগান্ডা করার জন্যে। অর্থাৎ অপছন্দের সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করতে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনকে বেদবাক্য বলে মেনে নিতে সরকারের আপত্তি নেই, যদিও সেখানে সমালোচনা করা হলে বলা হয় ভারতকে আক্রমণ করছে পশ্চিমী মিডিয়া।
ইতিমধ্যেই এই আক্রমণের নিন্দায় সরব হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলি। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া। কিন্তু গোদি মিডিয়া স্পিকটি নট। স্বাভাবিকভাবেই তাদের দাসানুদাস বাংলার টিভি, ডিজিটাল মিডিয়ায় এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়নি। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়নি। হবে, এমন মনে করারও কারণ দেখি না। কারণ আমরা জানি, এই কুচক্রের কারণেই ১৮০টি দেশের মধ্যে প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স অনুযায়ী ভারতের স্থান ১৬১-তে।
আরও পড়ুন:প্রশ্ন করলেই রাজরোষ! স্বাধীন মিডিয়াকে কেন ভয় পাচ্ছে মোদি সরকার?
এই জায়গায় দাঁড়িয়ে, স্বাধীন সাংবাদিকদের উপর এই নির্লজ্জ আক্রমণকে আমরা ধিক্কার জানাই। আমরা এই দমনপীড়নের বিরুদ্ধে বারবার লিখতে, বলতে, জনমত গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কারণ সাংবাদিকের সেটাই ধর্ম বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা জানি, চুপ করে থাকা মানে মেনে নেওয়া। আমরা চাই, এই মুহূর্তে এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে নাগরিক প্রতিরোধ গড়ে উঠুক। কোনও রাজনৈতিক দল নয়, সাধারণ মানুষের কাছেই আমাদের আবেদন, যে ইডির সাফল্যের হার ০.০৪%, যে সিবিআই দুর্নীতি মামলায় ৩% সাফল্য পেয়েছে, যে দিল্লি পুলিশ তিন বছর আগে রাজধানীর বুকে ৭২ ঘন্টা হিংসার মধ্যে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে ছিল, তাদের বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করার আগে দু"বার ভাবুন। ভাবুন কীভাবে এই সংস্থাগুলি শাসকের অঙ্গুলিহেলনে নাচছে, হেনস্থা করছে আমাদেরই সহ-নাগরিকদের। আর দিনভর আপনার ফোকাস অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখছে গোদি মিডিয়া। এই অন্যায় রুখতে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ছাড়া কোনও দ্বিতীয় পথ খোলা নেই। অনুরোধ, আমাদের এই প্রতিবাদে আপনিও শামিল হোন, পক্ষ নিন।