গঙ্গাবক্ষে ভাসছে মাংসাশী মাছ! কোন বিপদের আশঙ্কা করছে বিজ্ঞানীমহল?
গঙ্গা নদীতে যদি এই মাছের বংশবিস্তার ঘটে, তবে তা অন্যান্য জীবের ক্ষতি করার পাশাপাশি গঙ্গা নদীর বাস্তুতন্ত্রের জন্য যে বিপদ ডেকে আনবে, সেই বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞরা।
গঙ্গা নদী, ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদী পুরাণ থেকে নিত্যদিনের বাস্তবতা- সর্বত্র জড়িয়ে আছে দেশবাসীর সঙ্গে। ভারতের একাধিক রাজ্যের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে এই নদী। যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বহন করে চলেছে, ঠিক তেমনভাবেই বহু মানুষের রোজগার থেকে শুরু করে আশা-ভরসার অপর নাম 'গঙ্গা'।
অন্যদিকে, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর কথা কমবেশি আমাদের সকলেরই জানা। কথিত আছে, এই আমাজন নদীতেই নাকি বসবাস একাধিক জানা-অজানা প্রাণীর। এমনকী, আমাজনের বিখ্যাত সাপ অ্যানাকোন্ডা আমাদের সকলেরই পরিচিত। তবে শুধু সাপই নয়, হাঙর, কুমির থেকে শুরু করে বহু মাংসাশী মাছ এবং অন্যান্য প্রাণীও বসবাস করে প্রায় আট হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত এই নদীতে।
কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকা এই দুই নদীর মধ্যে সাদৃশ্য নেই বললেই চলে। তবে সম্প্রতি ঘটা একটি ঘটনা গঙ্গার সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকার এই নদীকেই একই সারিতে মিশিয়ে দিয়েছে। একই যোগসূত্রে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে দু'টি ভিন্ন দেশের এই দুই নদীর জল। তবে এদের মিলিয়ে দেওয়া যোগসূত্রটি কী? এক বিশেষ ধরনের মাছ।
আরও পড়ুন: শিশুদের বড় বিপদের সংকেত দিচ্ছে মাঙ্কিপক্স, আবার নতুন ভাইরাস-আতঙ্ক ভারতে?
সম্প্রতি, উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বারাণসী জেলায় ঘটেছে এই আশ্চর্যজনক ঘটনাটি। বারাণসী শুধু ভারত নয়, বিশ্বের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। এই বারাণসীতেই গঙ্গার জলে এই মাছটি উঠে আসার পরেই শুরু হয়ে যায় চাঞ্চল্য। আসলে প্রাণীটির আকার কিংবা চেহারা দেখে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এই দেশের নয়। এমন বিচিত্র প্রাণী তাহলে এল কোথা থেকে? বৈজ্ঞানিক মহলের একাংশের ধারণা, এই প্রাণীটি দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের।
উত্তরপ্রদেশের বারাণসী জেলার রামনগরের রমনার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গা নদীতে সম্প্রতি এক নাবিকের দল মাছ ধরতে যায় এবং তখনই তারা উদ্ধার করে এই বিচিত্র প্রাণীটিকে। এরপরই দাবি করা হয় যে, ভারত থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে অবস্থিত আমাজন নদীতে নাকি এই ধরনের মাছ পাওয়া যায়, যার নাম সাকেরমাউথ ক্যাটফিশ। অনেকেই হয়তো এই প্রাণীটির নাম প্রথমবার শুনছেন।
তবে গঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া এই মাছটিকে নিয়ে বর্তমানে গভীর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েহিসেবেছে সকলে। কারণ মাছটি মাংসাশী। অর্থাৎ, এর প্রভাবে গঙ্গা নদীর বাস্তুতন্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে বলে মত বৈজ্ঞানিক মহলের। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, ভারতে যে নদীগুলি বয়ে গিয়েছে, সেখানে সচরাচর মাংসাশী মাছের অস্তিত্ব মেলে না। এমনকী, বিশেষজ্ঞদের দাবি, শুধু ভারতেই নয়, পূর্ব এশিয়ার কোনও দেশেই নাকি আগে এই ধরনের মাছের খোঁজ মেলেনি। এর থেকে আন্দাজ করা যায় যে, এই প্রজাতির মাছ যদি দেশের নদীগুলির মধ্যে বংশবিস্তার করে, তবে তা প্রকৃতির জন্য হবে অত্যন্ত ভয়ানক।
এবার আসা যাক, আমাজন নদীতে বসবাসকারী এই সাকেরমাউথ ক্যাটফিশ সম্পর্কে। বর্তমানে বারাণসী অন্তর্গত গঙ্গা নদীর জলে যে প্রাণীটির খোঁজ মিলেছে, সেটির মুখের আকৃতি বিচিত্র রকমের। সাধারণত, মাছটির মুখের আকৃতি থেকে শুরু করে শরীরের ধরন, কোনওকিছুই আমাদের দেশের কোনও মাছের সঙ্গেই মেলে না; বরং এর সঙ্গে বহু গুণে সাদৃশ্য রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার মাছের প্রজাতির। বিজ্ঞানীরা আন্দাজ করছেন, কোনও না কোনও কারনে আমাজন থেকেই এরা গঙ্গা নদীতে এসে পৌঁছেছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, এই মাংসাশী মাছের বাঁচার রসদ কী? সাকেরমাউথ ক্যাটফিশ জলের ভেতর উপস্থিত অন্যান্য ছোট ধরনের জীবকে খাওয়ার মাধ্যমে বেঁচে থাকে। ফলে গঙ্গা নদীতে যদি এই মাছের বংশবিস্তার ঘটে, তবে তা অন্যান্য জীবের ক্ষতি করার পাশাপাশি গঙ্গা নদীর বাস্তুতন্ত্রের জন্য যে বিপদ ডেকে আনবে, সেই বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞরা। সেই কারণে বৈজ্ঞানিক মহলের মত, এই প্রজাতির মাছ যদি পরবর্তীকালে গঙ্গা নদী কিংবা অন্যান্য যে-কোনও নদীর জল থেকে পাওয়া যায়, তবে সেটিকে যেন পুনরায় জলের মধ্যে না ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে এখন প্রশ্ন, কয়েক হাজার মাইল দূরে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীতে বসবাসকারী প্রাণীগুলি আমাদের গঙ্গায় কীভাবে এসে পৌঁছল? এক্ষেত্রে অবশ্য সুস্পষ্ট কোনও ধারণা মেলেনি। তবে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আমাদের দেশে এখন অনেক মাছ ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা অনেক সময় বিদেশ থেকে চড়া দামে বিভিন্ন রকমের মাছ কিনে নিয়ে এসে নিজেদের একোয়ারিয়ামে রাখে, সেই সূত্র ধরেই সন্দেহ করা হয়েছে যে, হয়তো ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই এই বিশেষ ধরনের প্রাণীকে উপস্থিত হয়েছে গঙ্গার জলে।
এই ঘটনা অবশ্য প্রথম নয়, এর পূর্বেও এই সাকেরমাউথ ক্যাটফিশ দেখা মিলেছিল গঙ্গা নদীতে। মাছ ব্যবসায়ীদের অবহেলার কারণে যদি ভবিষ্যতে দেশের নদীগুলিতে এরা বংশবিস্তার ঘটায়, তবে তা বড় বিপদ ডেকে আনবে এবং তা রোখা একপ্রকার মুশকিল হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের।