নতুন রূপে বাজারে ফিরছে অ্যাম্বাসাডর, গুজব নাকি সত্যি? দেখতে কেমন?

Hindustan Ambassador : গত বছর থেকে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, সম্পূর্ণ নতুন ইলেকট্রিক সেডান হিসেবে বিশ্ববাজারে আত্মপ্রকাশ করবে এই গাড়ি

ভারতের বাজারে আবার ফিরছে হিন্দুস্তান মোটরস। সম্প্রতি এরকমই একটি খবর এসেছে শিরোনামে। অ্যাম্বাসাডর, ভারতীয় বাজারে অবশ্য এর নতুন করে পরিচিতির প্রয়োজন নেই। হালফিলের নয়া মডেলের গাড়ির ভিড়ে সফর খানিকটা ফিকে মনে হলেও আদপে রাজকীয় মেজাজ বজায় থেকেছে অ্যাম্বাসাডরের। বিশেষত কলকাতার হলুদ ট্যাক্সির নস্টালজিয়া আরও বেশি করে টিকিয়ে রেখেছে একই আদলের সাদা রঙের গাড়িটির ইতিহাসকে।

গত বছর থেকে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, সম্পূর্ণ নতুন ইলেকট্রিক সেডান হিসেবে বিশ্ববাজারে আত্মপ্রকাশ করবে এই গাড়ি। হিন্দমোটরের হিন্দুস্তান মোটরস লিমিটেড নামক গাড়ি কোম্পানিটি ২০১৭ সালে মাত্র ৮০ কোটি টাকায় কিনে নেয় ফ্রান্সের এক গাড়ি নির্মাতা। গাড়ি তৈরি করতে সি কে বিড়লা গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফের ভারতে ফিরছে পিএসএ গোষ্ঠী। এই খবর কানে আসছে আজ প্রায় পাঁচ বছর হল। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার গত বছরের একটি প্রতিবেদন বলা হয়, হিন্দমোটর ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া বা HMFCI এবং Peugeot-এর যৌথ উদ্যোগে রাষ্ট্রদূতের নকশা এবং ইঞ্জিন নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।

আমরা জানি যে, বর্তমানে গ্রুপ PSA অ্যাম্বাসেডর, এই নেমপ্লেটের মালিক। এর আগে হিন্দমোটরের কারখানা থেকে শেষ অ্যাম্বাসাডর বিক্রি হয়েছিল ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। পরবর্তীকালে তৎকালীন মালিকের বিশাল ঋণ এবং বাজারে চাহিদার হ্রাস, এই দুইয়ের ভিত্তিতে পথে বসার জোগাড় হয় অ্যাম্বাসাডর কোম্পানির। তখনই PSA-কে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন - অ্যাম্বাসাডর ফিরছে ইলেকট্রিক স্কুটার হয়ে! কেমন হতে চলেছে নয়া এই যান?

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার আগেই গুজরাটের ওখা বন্দরে পথ চলা শুরু করে হিন্দুস্তান মোটরস। পরবর্তীতে স্বাধীনতার এক বছরের মাথায় অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে কারখানা স্থানান্তরিত হয় হুগলির হিন্দমোটরে। এটিই ছিল প্রথম স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন কেন্দ্র। মরিস অক্সফোর্ড সিরিজ ৩-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় ব্রিটিশ গাড়ি অ্যাম্বাসাডর। প্রায় তিন দশক ধরে ভারতীয় বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত গাড়ি ছিল এটিই।

ভারতীয় বাজারে প্রথম দিকে গাড়ি ছিল নিছক একটি বিলাসবহুল আসবাব মাত্র। সমাজের চোখে স্ট্যাটাস কুয়ো মেনটেন করার একটা বিকল্প বলতেও অনেকে গাড়িকে বেছে নিতেন। ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অ্যাম্বাসাডর, এই ইমেজটি এমনই ছিল। কিন্তু এর পর থেকেই ক্রমে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকে। ১৯৮০-র দশকে যেখানে এর বিক্রি ছিল প্রতি মাসে প্রায় ২০,০০০ ইউনিট, ২০১৪ সালে সেটিই কমে মাত্র ২০০০ইউনিটে নেমে আসে৷ পশ্চিমবঙ্গের হিন্দমোটরের হিন্দুস্তান মোটরস-এর কারখানাটিই ছিল ভারতের প্রাচীনতম উৎপাদন কারখানা। শুধু তাই নয়, জাপানের টয়োটার পরে এশিয়ার দ্বিতীয় প্রাচীনতমও বটে ৷

সুতরাং ভারতের বাজারে নতুন করে এই ব্র্যান্ড এলে আবারও হৈচৈ শুরু হবে এটাই স্বাভাবিক। নস্টালজিয়ায় ভর করেই চাকা গড়াবে সাদা রঙের সাবেকি অ্যাম্বাসাডরের। শোনা যাচ্ছে, এ নিয়ে হিন্দুস্তান মোটরস এবং এক ইউরোপীয় কোম্পানির মধ্যে একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে, অনুমান করা হচ্ছে, প্রায় ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হতে পারে নয়া প্রজেক্টে। যদিও বিস্তারিত কিছুই জানা যায়নি এখনও পর্যন্ত। তবে ইতিহাস যদি আবার বর্তমানে এসে দাঁড়ায় তবে তা যুগান্তকারী যে হবেই তা বলাই বাহুল্য।

More Articles