পুজোর মুখে ফের কর্মবিরতি! এবার কোন ১০ দফা দাবি নিয়ে এলেন জুনিয়র ডাক্তাররা?
Junior Doctor Cease Work: ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট জানিয়ে দিয়েছে, হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ‘ভয়ের রাজনীতি’ দূর না করা হলে কাজে ফিরবেন না তারা।
ফের কর্মবিরতি! সেপ্টেম্বরেই নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম আদালত, অবিলম্বে কাজে ফিরতে হবে জুনিয়র ডাক্তারদের। তারপর একে একে বহু বৈঠক, কালীঘাটের বাড়িতে দীর্ঘ মিটিং, নবান্নে মিটিংয়ের পর বন্যা পরিস্থিতি মাথায় রেখে জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, আংশিক কর্মবিরতি তুলে নিচ্ছেন তারা। জরুরি পরিষেবায় ফিরছেন। ২১ সেপ্টেম্বর কর্মবিরতি আংশিক প্রত্যাহার করে তাঁরা কাজে ফেরেন। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর রোগীর আত্মীয়দের হামলার অভিযোগ ওঠার পর ফের কর্মবিরতি শুরু হলো। জুনিয়র ডাক্তারেরা ফের পূর্ণ কর্মবিরতির ঘোষণা করেছেন রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজেই। ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট জানিয়ে দিয়েছে, হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ‘ভয়ের রাজনীতি’ দূর না করা হলে কাজে ফিরবেন না তারা। আবারও 'নো সেফটি, নো ডিউটি'-র ডাক! গতবার পাঁচদফা দাবি ছিল। এবার মোট ১০ দফা দাবি নিয়ে কর্মবিরতি ডেকেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
আরও পড়ুন- কর্মবিরতি তুলে বন্যা কবলিত স্থানে জুনিয়র ডাক্তাররা! আন্দোলন এবার কোন পথে?
দ্বিতীয় কর্মবিরতিতে কোন ১০ দফা দাবি এনেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা?
১. স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত নির্যাতিতার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২. স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রশাসনিক অক্ষমতা এবং দুর্নীতির দায় নিতে হবে স্বাস্থ্য দফতরকেই। নারায়ণস্বরূপ নিগমকে স্বাস্থ্যসচিবের পদ থেকে অপসারণ করতে হবে।
৩. রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে কেন্দ্রীয় ‘রেফারেল’ ব্যবস্থা' বা রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।
৪. প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে কতগুলি বেড ফাঁকা রয়েছে, তা জানানোর জন্য একটি করে ডিজিটাল মনিটর রাখতে হবে।
৫. প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কলেজভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে যেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের নির্বাচিত প্রতিনিধিও থাকবেন। সিসিটিভি, ডাক্তারদের জন্য অন কল রুম, শৌচালয়, হেল্পলাইন নম্বর, প্যানিক বোতাম চালু করতে হবে।
৬. হাসপাতালগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। সিভিক ভলান্টিয়ারের বদলে পুলিশকর্মীদের রাখতে হবে দায়িত্বে। মহিলা পুলিশকর্মী নিয়োগ করতে হবে।
৭. হাসপাতালগুলিতে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে যাঁদের বিরুদ্ধে ‘ভয়ের রাজনীতি’ চালানোর অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রাজ্যস্তরেও অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে হবে।
৯. প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। মেডিক্যাল কলেজগুলির রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংগঠনকে স্বীকৃতি দিতে হবে। মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিটি কমিটিতে চিকিৎসক পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।
১০. পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং পশ্চিমবঙ্গ হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগগুলি দ্রুত তদন্ত শুরু করতে হবে।
আরও পড়ুন- আরজি কর তদন্তের আওতায় কে কে? সিবিআইকে তালিকা দেওয়ার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
৯ অগাস্ট আরিজি করে কর্তব্যরত তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মৃত্যুর পর থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়েছিল। তারপর ডাক্তারদের বেশ কিছু দাবি মেনে নেওয়ার পরে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক ও চিঠির পর কর্মবিরতি আংশিক প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁরা জানান, ২০ তারিখ সিবিআই দফতর অভিযানের কর্মসূচির মাধ্যমে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন, আংশিকভাবে কাজে যোগ দেবেন। তবে তখনই তারা জানিয়ে দেন প্রয়োজন পড়লে ফের পূর্ণ কর্মবিরতির পথেই হাঁটবেন তারা। এখন জুনিয়র চিকিৎসকরা বলছেন, মুখ্যসচিবের সেই চিঠির পর ১২ দিন পার হয়ে গেলেও কোনও পরিবর্তন তাঁদের চোখে পড়েনি।
১৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যসচিবকে যে চিঠি পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সেখানে সিসি ক্যামেরা, শৌচালয়, ডিউটি রুম, কেন্দ্রীয় ভাবে হেল্পলাইন নম্বর, ‘প্যানিক বাটন’, অন্যত্র রোগী স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে নজর রাখা, নিরাপত্তায় মহিলা পুলিশকর্মী নিয়োগ, হাসপাতালের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য দ্রুত পদক্ষেপের কথা বলেছিলেন মুখ্যসচিব। তবে তা নিয়ে কোনও আশাবাচক কিছুই হয়নি বলে দাবি জুনিয়র ডাক্তারদের। বন্যা পরিস্থিতি তো স্বাভাবিক হয়নি। তাহলে এবার জরুরি পরিষেবা সামলাবেন কারা? একাংশের মত, পুজোর মুখে এই কর্মবিরতির ডাকে আদতে আরজি কর আন্দোলনের যে প্রভাব তাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি একটা বড় অংশের মানুষের আস্থা চলে গেলে তার মাশুল কি এই আন্দোলনকেই আখেরে গুনতে হবে না? প্রশ্ন উঠছে।