লাগাতার বৃষ্টিতে ব্যাপক জল ছাড়ছে ডিভিসি, পুজোর আগেই ভাসবে দক্ষিণবঙ্গ?

Flood Situation in West Bengal: মঙ্গলবার ভোর পৌনে পাঁচটা থেকেই জল ছাড়া শুরু করে ডিভিসি। ঝাড়খণ্ডের দিকে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হওয়ায় তেনুঘাট জলাধর থেকে জল ছাড়া হয়েছে ৷ এর জেরে পাঞ্চেত জলাধারের উপরে চাপ বেড়েছে ৷

লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি দক্ষিণ বঙ্গের একাধিক এলাকায়। তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হয়েছে আসানসোল ও ঝাড়খণ্ডের দিকে। এই পরিস্থিতিতে ডিভিসির মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিস প্রশাসন। ডিভিসি কর্তৃপক্ষের তরফে এ-ও জানানো হয়েছিল, বৃষ্টি যদি না কমে, তাহলে জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বাড়াবে ডিভিসি। সত্যি হয়েছে সেই আশঙ্কাই। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ব্যাপক পরিমাণে জল ছাড়তে শুরু করেছে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার।

যে জল জমা হওয়ার কথা দুর্গাপুরে। যার ফলে দুর্গাপুর ব্যারেজেও প্রবল চাপ তৈরি হওয়ার কথা। যে চাপ সামাল দিতে নতুন করে জল ছাড়তে হবে দুর্গাপুর ব্যারেজকে। এই পরিস্থিতিতে বন্যার আশঙ্কায় কাঁপছে পূর্ব বর্ধমান, হুগলি জেলা। বৃষ্টি না ধরলে পুজো যে জলের তলাতেই কাটকে পারে এ রাজ্য়ের নিচু স্তরের জেলাগুলিতে, তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সব শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এক লক্ষ ৩৩ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে দুর্গাপুর ব্য়ারেজ।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা, নেপথ্যে যে কারণ

ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ডিভিসি সূত্রে খবর, বেলা ১১টা নাগাদ মাইথন থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার কিউসেক হারে এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ৭০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে ৷ ব্যাপক পরিমাণে জল ছাড়ার ফলে রাজ্যের নীচের এলাকাগুলি জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ৷ ডিভিসির ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যে বন্যার লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে ৷ আড়াই লক্ষ কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে বলে ওয়েবসাইটে ডিভিসি নিজেই জানিয়েছে । আর এই জল ছাড়ার ফলে বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে রাজ্যে ৷ গত তিনদিন ধরে অবিরাম বর্ষণ চলছে ৷ এর ফলে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্লাবনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে । ডিভিসি জল ছাড়ার ফলে পূর্ব বর্ধমান এবং হুগলির নীচের স্তরের জায়গাগুলিতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল ৷ এবার মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই আশঙ্কা বাড়িয়ে দিল ৷

মঙ্গলবার ভোর পৌনে পাঁচটা থেকেই জল ছাড়া শুরু করে ডিভিসি। ঝাড়খণ্ডের দিকে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হওয়ায় তেনুঘাট জলাধর থেকে জল ছাড়া হয়েছে ৷ এর জেরে পাঞ্চেত জলাধারের উপরে চাপ বেড়েছে ৷ ফলে পাঞ্চেত জলাধার থেকে ভোর থেকে ৪৯ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু হয়েছে ৷ মাইথন থেকে এই ক'দিনে কম জল ছাড়া হয়েছিল ৷ যেটুকু তাপবিদ্যুতের টারবাইন ঘোরানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজন ছিল, সেটুকুই ছাড়া হচ্ছিল ৷ কিন্তু আসানসোলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে এই মরশুমের সবচেয়ে বেশি জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ালো ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ৷ ডিভিসি সূত্রে খবর, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধারে প্রচুর পরিমাণে জল বেড়েছে এবং সেই জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ৷ ডিভিসি জানিয়েছে গত চব্বিশ ঘণ্টায় মাইথন জলাধারে ৪৯৩.৯৬ ফুট জলস্তর রয়েছে এবং পাঞ্চেতে ৪২১.৮৩ ফুট জলস্তর রয়েছে ৷ প্রতি ঘন্টায় গড়ে দুই থেকে আড়াই লাখ কিউসেক ছাড়া হচ্ছে সূত্রের খবর।

আরও পড়ুন: IAS হতে গিয়ে ভেসে গেলেন ৩ পড়ুয়া! কোচিং সেন্টারে বন্যায় মর্মান্তিক মৃত্যুতে গাফিলতি কার?

এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্য়োপাধ্যায়। পুজোর আগে যাতে এই সব জেলা এলাকাগুলিতে বন্য়া পরিস্থিতি না তৈরি হয়, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা হয়েছে বৈঠকে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নিম্নলিখিত জেলায় নজরদারির জন্য নিম্নলিখিত বিশেষ সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিচু এলাকা থেকে মানুষ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে ইতিমধ্যেই। হাওড়ায় এম‌এস‌এম‌ই সচিব রাজেশ পান্ডেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বীরভূমের দায়িত্বে রয়েছেন আবাসন সচিব রাজেশ সিনহা। পশ্চিম মেদিনীপুরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি সচিব সুরেন্দ্র গুপ্তা, হুগলি কৃষি সচিব ওঙ্কার সিং মীনা, পুর্ব মেদিনীপুরের খাদ্যসচিব পারভাজ সিদ্দিকী, ঝাড়গ্রামের পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহন, পশ্চিম বর্ধমানের অনগ্রসর কল্যাণ সচিব সঞ্জয় বনসল, বাঁকুড়ার শ্রম সচিব অবনীন্দ্র সিং, পুরুলিয়ার শিল্প সচিব পি মোহন গান্ধি এবং পূর্ব বর্ধমান পঞ্চায়েত সচিব পি উলগানাথকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

যদিও আশার আলো মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে সূর্য উঠেছে আসানসোলে ৷ তাই খানিকটা হলেও স্বস্তি মিলেছে ৷ যদিও ঝাড়খণ্ডের দিকে বেশি বৃষ্টিপাত হলে জল ছাড়া অব্যাহত থাকবে বলেই ডিভিসি সূত্রের খবর ৷ আর তেমনটা হলে অচিরেই ভাসতে পারে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা, তেমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

More Articles