নীতীশ ডিগবাজি খেতেই তেজস্বীকে ইডির তলব! ন্যায় যাত্রায় ইন্ডিয়া নিয়ে নীরব কেন রাহুল?
Tejashwi Yadav Bharat Jodo Nyay Yatra : সিবিআই গত বছরের অক্টোবরে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ, রাবড়ি দেবী, তাঁদের মেয়ে মিসা ভারতী এবং অন্য ১৩ জনের বিরুদ্ধে চাকরির জন্য জমি কেলেঙ্কারিতে চার্জশিট দাখিল করে।
রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা ঢুকে পড়েছে বিহারে। এই যাত্রার বিহার প্রবেশের ঠিক একদিন আগেই ইন্ডিয়া জোটের শরিক নীতীশ কুমার ফের ডিগবাজি খেয়ে চলে গেছেন বিজেপির শিবিরে। আর বিহারে ন্যায় যাত্রার দ্বিতীয় দিনেই ইন্ডিয়ার আরেক শরিক আরজেডির নেতা তেজস্বী যাদবকে শমন পাঠালো ইডি। চাকরির জন্য জমি কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাঁকে। লালু যাদব ২০০৪ থেকে ২০০৯ সালের মেয়াদে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই কেলেঙ্কারিটি ঘটেছিল। আরজেডি-র জাতীয় সভাপতি ছাড়াও ইডির চার্জশিটে তৎকালীন রেলওয়ে জেনারেল ম্যানেজারের নামও রয়েছে।
রেলে চাকরি দেওয়ার বদলে লালু প্রসাদ যাদব ওই চাকরি প্রার্থীদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকারে থাকা জমিগুলি তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং কন্যা মিসা ভারতীর নামে করে নেন, তাও আবার নামমাত্র মূল্যে। সেই সময়ের প্রচলিত সার্কেল রেট এবং জমির বাজার দরের তুলনায় অনেক কম দামে জমি হস্তগত করেন লালু।
সিবিআই গত বছরের অক্টোবরে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ, রাবড়ি দেবী, তাঁদের মেয়ে মিসা ভারতী এবং অন্য ১৩ জনের বিরুদ্ধে চাকরির জন্য জমি কেলেঙ্কারিতে চার্জশিট দাখিল করে। সিবিআই বলছে, এই চাকরি প্রার্থীদের প্রথমে রেলওয়েতে গ্রুপ ডি পদে বিকল্প হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। তাদের পরিবার যখন জমি বিক্রির চুক্তি করে তখন তাদের পাকাপাকি কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। রেলে চাকরির বদলে ঘুষের জন্য জমি হস্তগত করার অভিযোগের তদন্ত করছে সিবিআই। একই সঙ্গে অর্থ তছরুপের মামলারও তদন্ত করছে ইডি।
আরও পড়ুন- ভারতরত্ন দেওয়াতেই লুকিয়ে আসল খেল? কীভাবে কর্পুরী ঠাকুরের পথে হাঁটলেন নীতীশ কুমার?
এদিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি ভারত জোড়া ন্যায় যাত্রা নিয়ে ২৯ জানুয়ারি বিহারে পৌঁছে যান। খুব আশ্চর্যের বিষয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিন্দা করলেও, সারা দেশে জাতি-ভিত্তিক আদমশুমারির দাবি জানালেও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ইন্ডিয়া থেকে এনডিএ হয়ে যাওয়া নিয়ে একটি কথাও বললেন না তিনি। রাহুল বলছেন, বিজেপি এবং আরএসএস ঘৃণা ছড়ায়, জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে দেশকে বিভক্ত করার কথা বলে কিন্তু কংগ্রেস ভালোবাসা, সম্মান এবং ভ্রাতৃত্বের কথাই বলে। তাহলে ইন্ডিয়া ছেড়ে নীতীশের চলে যাওয়া, দুর্নীতির অভিযোগে দীর্ণ আরজেডি প্রসঙ্গ কি এড়িয়ে যাচ্ছেন রাহুল?
রাহুলের দাবি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ছাড়া দেশ কখনই উন্নতি করতে পারে না। ফলে বিজেপি যে কথা বলছে তা একেবারেই ফাঁপা। "ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর জাতি) দেশের জনসংখ্যার ৫০%, দলিত আছেন ১৫%, ১৫% সংখ্যালঘু এবং ১২% উপজাতি। এই দেশের সরকার ৯০ জন আইএএস অফিসার দ্বারা পরিচালিত এবং তারাই প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং অন্যান্য খাতে বাজেট বরাদ্দ করে। আমি বিহারের ওবিসি জনগণকে বলতে চাই যে ৯০ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন ওবিসি আইএএস অফিসার রয়েছে। যদি ১০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়, তাহলে ওবিসি অফিসার মাত্র ৫ টাকা বরাদ্দ করেন। এটাই বাস্তবতা,” বলছেন রাহুল।
আরও পড়ুন- মমতা নেই, নীতীশ নেই! বিজেপির বিরোধিতা করতে ইন্ডিয়া জোটে রইল কারা?
বিহারে কংগ্রেসের এই ন্যায় যাত্রা সীমাঞ্চল অঞ্চল থেকে শুরু হয়েছিল, বর্তমানে বিহারে এই অঞ্চল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। সীমাঞ্চল, উত্তর বিহারে অবস্থিত, চারটি জেলা নিয়ে গঠিত: পূর্ণিয়া, কাটিহার, কিষাণগঞ্জ এবং আরারিয়া। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে, NDA তিনটি এবং কংগ্রেস জিতেছে একটি আসন। সেই সময় জেডি(ইউ)ও এনডিএ-র অংশ ছিল। কাটিহার ও পূর্ণিয়া লোকসভা আসন এখন জেডি(ইউ)-এর, আরারিয়া বিজেপির এবং কিষাণগঞ্জ কংগ্রেসের। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সীমাঞ্চল অঞ্চলে মুসলিম জনসংখ্যা ৪৭%, যা কংগ্রেস এবং আরজেডির জন্য বেশ ভালো সুযোগ।
কিন্তু এরই মাঝে, নীতীশ বিজেপির হাত ধরতেই তেজস্বীকে ইডির জিজ্ঞাসাবাদ বিষয়টি নতুন করে কাঁটা হয়ে উঠছে গলার। রাহুল যতই নীতীশকে নিয়ে চুপ থাকুন না কেন, বোঝাই যাচ্ছে নীতীশ ও বিজেপি মিলে ক্ষমতা ধরে রাখতে বিরোধীদের বিরুদ্ধে সমস্ত মোক্ষম অস্ত্রই ব্যবহার করতে চলেছে। চাকরির জন্য জমি কেলেঙ্কারির মতো ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে কি আরজেডি এবং ইন্ডিয়া বিহারে আস্থা অর্জন করতে পারবে?