নাটকীয় রাজনৈতিক উত্থান! ১২ ঘণ্টায় যেভাবে বদলে গেল দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাস!

South Korea Martial Law:ইউন সামরিক শাসন ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই তা বাতিলও হয়ে গেল দক্ষিণ কোরিয়ায়।

মঙ্গলবার গভীর রাতে নাটকীয় রাজনৈতিক উত্থানের সাক্ষী হলো দক্ষিণ কোরিয়া। সেই দেশের রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইওল দেশে সামরিক আইন ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। এই ঘটনার পর দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মঙ্গলবার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি সিদ্ধান্তমূলকভাবে এই সামরিক আইন ঘোষণাকে বাতিল করে দিয়েছে। গভীর রাতের এক জরুরি অধিবেশনে, শাসক ও বিরোধী দুই দলেরই ৩০০ জন সাংসদের মধ্যে ১৯০ জন সর্বসম্মতভাবে সামরিক আইন প্রত্যাখ্যান করার পক্ষে ভোট দেন। ইউন সামরিক শাসন ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই তা বাতিলও হয়ে গেল দক্ষিণ কোরিয়ায়।

১৯৮০ সালের পর এই প্রথম সামরিক আইনের শাসন ঘোষিত হয়েছিল সেই দেশে। প্রেসিডেন্ট ইউন বলেছিলেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি কারণ, তা না হলে 'রাষ্ট্রবিরোধী' এবং 'উত্তর কোরিয়াপন্থী শক্তি' নির্মূল করা যাবে না দেশ থেকে। সামরিক শাসনের ঘোষণা হতেই দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় পরিষদের বাইরে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে যান। সামরিক আইন জারির বিরোধিতায় সংসদের বাইরে ব্যাপক বিক্ষোভ চলে। সিওলে বিধানসভার কাছে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষও শুরু হয়। ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক কমান্ডো বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা সংসদ ঘেরার চেষ্টা করে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া অনেক ভিডিওতেই দেখা যায়, পুলিশ আধিকারিকরা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রবেশপথে পাহারা দিচ্ছেন। হেলমেট-পরা সৈন্যরা রাইফেল হাতে মানুষের প্রবেশ রোধে চারপাশে কড়া প্রহরা দিচ্ছে। সামরিক আইন জারি মানে, রাজনৈতিক ও সংসদীয় কার্যক্রম স্থগিত করা যেতে পারে, পরোয়ানা ছাড়াই লোকজনকে গ্রেফতার করা যেতে পারে এবং ভিন্নমতের মানুষদের উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে। পাশাপাশি ভুয়ো খবর এবং জনমতকে নিজের মতো করে ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। সামরিক আইন জারির খবর ছড়িয়ে যেতেই বিরোধী এবং সুশীল সমাজের কাছ থেকে তীব্র নিন্দা ধেয়ে আসে রাষ্ট্রপতির এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্যে। এই পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক নীতির উপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেন নাগরিকদের বড় অংশই।

আরও পড়ুন- ধ্বংসস্তূপ হয়ে যাওয়া দেশ আজ উন্নতির চূড়ায়! কীভাবে ঘুরে দাঁড়াল দক্ষিণ কোরিয়া

এই শাসন জারির ঘোষণার পরপরই সিওলে জাতীয় পরিষদের বাইরে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। জরুরি সামরিক আইন প্রত্যাহারের দাবির পাশাপাশি ইয়ুন সুক ইওলকে গ্রেফতার করার দাবিও ওঠে। অ্যাসেম্বলিতে ডেমোক্রেটিক পার্টির বিরোধী নেতারা তাঁদের সদস্যদের একজোট করে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের অভিযোগ আনেন।

অ্যাসেম্বলিতে গভীর রাতের অধিবেশনে সামরিক আইনের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে সর্বসম্মত ভোটের পর জাতীয় পরিষদের স্পিকার সামরিক আইনকে অবৈধ ঘোষণা করেন। জানিয়ে দেন সন্ধ্যার আগেই সংসদীয় প্রাঙ্গণে প্রবেশকারী সৈন্যদের প্রত্যাহার করতে হবে। সামরিক আইন জারির কিছুঘণ্টার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ইউনের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণায় বিক্ষোভকারীরা উদযাপনে মেতে ওঠেন। ক্ষোভ প্রশমিত হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার আইন অনুযায়ী, সংসদ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে দাবি করলে প্রেসিডেন্টকে অবিলম্বে সামরিক আইন তুলে নিতে হবে। প্রেসিডেন্ট ইউনের নিজের দলই তাঁকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। মার্কিন উপ-রাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ট ক্যাম্পবেল প্রেসিডেন্ট ইউনের সামরিক আইন ঘোষণার পর দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়ন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। রাজনৈতিক বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার এবং আইনের শাসন বজায় রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী কিয়ং-ওয়া কাংও ইউন সুক ইওলের গভীর রাতে সামরিক আইনের ঘোষণা 'বিস্ময়কর' বলে মনে করেছিলেন। স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, "দেশ কোনও পরিস্থিতিতেই এমন পদক্ষেপকে সমর্থন করে না।” দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইওল হঠাৎ টেলিভিশন ভাষণে অপ্রত্যাশিতভাবে সামরিক আইন জারির কথা বলাতে মঙ্গলবার মার্কিন ডলারের সাপেক্ষে কোরিয়ান ওয়ানের তীব্র পতন ঘটে।

More Articles