ভারত বাংলাদেশের সুসম্পর্ক ফেরাতেই হবে! পদক্ষেপ শুরু হলো দুই তরফেই

Yunus on Bangladesh India Relation: সংখ্যালঘু ইস্যু সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রত্যেক নাগরিককে রক্ষা করতে এবং ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও লিঙ্গ নির্বিশেষে তাঁদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলাদেশ ইস্যুতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কোনও মত প্রকাশ করছে না বলে দিন কয়েক আগেই অভিযোগ করেছিলেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের (হিন্দুদের) উপর অত্যাচারের অভিযোগ, ভারতের পতাকাকে অবমাননার অভিযোগে দুই দেশের সম্পর্ক তিক্ততর হচ্ছে ক্রমেই। হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের সুসম্পর্ক অজানা নয়। তবে হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পরে জনতার অভ্যুত্থানে তৈরি হওয়া 'নতুন' বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সমীকরণ বদলে গেছে সম্পূর্ণই। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক ফেরাবে ভারত? সফররত ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি বলেছেন, নয়াদিল্লি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে এবং দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে 'সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা' করতে চায়।

ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বিক্রম মিসরি বলেছেন, "সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে দ্বিতীয় কোনও চিন্তা নেই। আমরা এটাকে দুই দেশের পক্ষেই লাভজনক হিসেবে দেখছি। আমরা যেখানে বিষয়টি থামিয়েছিলাম, সেখান থেকেই আবার চালিয়ে নিয়ে যেতে চাই।”

৪০ মিনিটের ওই বৈঠকে সংখ্যালঘুদের সমস্যা, ভুয়ো তথ্য প্রচার, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা হয়। মিসরি জানিয়েছেন, "আমাদের বর্তমান সরকারের সঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রে যেতে হবে। এটিই একটি প্রধান সম্পর্ক।"

আরও পড়ুন- মহম্মদ ইউনূসই অন্তত আরও চার বছর দায়িত্বে? নির্বাচন কবে হবে বাংলাদেশে?

অন্যদিকে অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূস বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এখনও 'খুবই দৃঢ়' এবং 'ঘনিষ্ঠ'। সাম্প্রতিক হিংসা ও অস্থিরতার আবহে সেই সম্পর্কের উপর মেঘ জমেছে, একথা অস্বীকার করার নয়। তবে দীর্ঘদিনের বন্ধু, তথা নিকটতম প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে এই মুহূর্তে যে কোনও পদক্ষেপ করলেই তা দুই অঞ্চলের স্থানীয় মানুষদের উপরেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

ওই বৈঠকে ইউনূস ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তাঁর অভিযোগ, ১৫ বছরের নৃশংস ও দুর্নীতিবাজ স্বৈরশাসনের পর ৫ অগাস্ট ভারতেই পালিয়ে যান হাসিনা। ভারতের বিদেশ সচিবকে ইউনূস বলেন, “আমাদের লোকেরা উদ্বিগ্ন কারণ তিনি সেখান থেকে অনেক বিবৃতি দিচ্ছেন। এটা উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।”

বিক্রম মিসরি এর আগে বাংলাদেশের বিদেশ সচিবের সঙ্গেও একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, জুলাই-অগাস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রায় প্রতি ঘণ্টায় বাংলাদেশে ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করেছেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস কীভাবে পড়ুয়া, শ্রমিক ও জনগণ জুলাই-অগাস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনার দুর্নীতিবাজ শাসনের অবসান ঘটাতে হাত মিলিয়েছিল সেই বিস্তারিত প্রসঙ্গও টেনে আনেন।

আরও পড়ুন- বাংলাদেশ নিয়ে যে ১৩ টি মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলি

ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত সংস্কার উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরে বলেছেন, "আমাদের কাজ হলো তাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা। এটি একটি নতুন বাংলাদেশ।" বিক্রম মিসরিও বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই সেই প্রথম বিদেশি নেতাদের একজন যিনি অধ্যাপক ইউনূসকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন বর্ণনা এবং ভারত সরকারের নিজস্ব ধারণা যে ভিন্ন সেই উল্লেখ করে মিসরি বলেন, "আমরা আপনার সাফল্য কামনা করি।"

বাংলাদেশের একটি বিশেষ দলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক রয়েছে বলে যে খবর ছড়িয়ে পড়ছে তা যে আসলে মিথ্যা, তা স্পষ্ট করেছেন মিসরি। ইউনূস বন্যা এবং জল ব্যবস্থাপনায় ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার আহ্বান জানান। সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ভারতকে তাঁর উদ্যোগে যোগ দেওয়ার আহ্বানও জানান। ইউনূস বলছেন, "আমরা আমাদের সবার জন্য এক সমৃদ্ধ নতুন ভবিষ্যত গড়তে চাই। সংখ্যালঘু ইস্যু সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রত্যেক নাগরিককে রক্ষা করতে এবং ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও লিঙ্গ নির্বিশেষে তাঁদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। "আমরা একটি পরিবার। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে," বলছেন ইউনূস।

বিক্রম মিসরি বলেছেন, যে ভারত সার্কের সঙ্গে এখনও যুক্ত আছে তবে তাতে কিছু বাধাও রয়েছে। মিসরি জানিয়েছেন, ভারত গত মাসে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসার সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে এবং আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়াবে। তবে এই আশ্বাস-ভরসা বৈঠকের ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরেও কতখানি কার্যকর হবে, ভুয়ো তথ্য দিয়ে দুই দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা থেকে সংবাদমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে দুই দেশই কোনও ব্যবস্থা নেবে কিনা, এর উপরেও নির্ভর করছে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কের ভিত্তি।

More Articles