কাশ্মীরের দুর্দশার জন্য দায়ী নেহরু, বলছেন অমিত শাহ! কী বলছেন কাশ্মীরে মানুষ?
Jammu Kashmir 370 Article : কাশ্মীরের জনগণের কাছে ছবিটা এখনও ভয়েরই। ভয়ে চুপ থাকা মানেই শান্তি নয়! ভয়, ক্রমবর্ধমান দাম এবং বেকারত্ব হু হু করে বাড়ছে এই অঞ্চলে।
বিরোধীদের প্রশ্ন ছিল। ৩৭০ ধারা বাতিল কি আদৌ সাংবিধানিক পদ্ধতিতে করা হয়েছে? কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার মতো কাজ কি বিজেপি সরকার করতে পারে? দেশের শীর্ষ আদালত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছে, পারে। জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ ধারা বাতিল সাংবিধানিক পদ্ধতিতেই হয়েছে। ২০২৪ সালের আগে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় কেন্দ্রের পক্ষে যাওয়া এক বড় ঘটনা। চার বছর আগের এই ধারা বাতিলের ঘটনায় আদালতের সমর্থন পাওয়ার পরেই তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, সংবিধানের ৩৭০ ধারা যা জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল, সেই ধারাই এই অঞ্চলকে বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
"কাশ্মীরের চেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যা সহ অন্যান্য রাজ্য রয়েছে। তাহলে কেন শুধুমাত্র জম্মু ও কাশ্মীরেই সন্ত্রাসবাদ এত বেশি? কারণ ৩৭০ ধারা এই অঞ্চলকে বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে পরিচালিত করেছিল," বলেছেন অমিত শাহ। সোমবার সকালেই শীর্ষ আদালত নিজের রায়ে উল্লেখ করে যে, ৩৭০ ধারাটি ছিল অস্থায়ী, শুধুমাত্র জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসাবে সহজ করে রাখার উদ্দেশ্যেই তা তৈরি হয়। চার বছর আগে, ২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট অমিত শাহই ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে ভাগ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
কংগ্রেস এবং বিরোধীরা আদালতের রায়ে খুশি নয় স্বাভাবিকভাবেই। এখানেই ফের পুরনো তাস আস্তিন থেকে বের করেছেন অমিত। কংগ্রেস এবং নেহরু প্রসঙ্গ এনেই কাশ্মীরের দুর্দশার কারণ অনুসন্ধানে নেমেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কংগ্রেসের দাবি ছিল, ৩৭০ ধারাটি ভুল উপায়ে বাতিল করা হয়েছে। অমিত শাহ বলছেন, কংগ্রেস ৪০ বছর ধরে ভুল করেছে। "কংগ্রেস আশা করছে, ৪০ বছরের ভুলগুলি মোদি চার বছরেই সংশোধন করবেন। কিন্তু ঠিকই আছে, সবসময়ই লক্ষ্য উঁচু রাখাই উচিত," বলেন অমিত শাহ।
আরও পড়ুন- ৩৭০ ধারা রদের পক্ষেই সুপ্রিম কোর্ট, কী ব্যখ্যা দিচ্ছে শীর্ষ আদালত?
পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকেই দায়ী করেন অমিত। "যদি অসময়ে যুদ্ধবিরতি না হতো (পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের সময়), তাহলে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর হতো না। আমাদের দেশ জিতেছে, নেহরু যদি দুই দিন অপেক্ষা করতেন, তাহলে পুরো কাশ্মীরই আমাদের হয়ে যেত। অনেকেই বলে নেহরু না থাকলে কাশ্মীর থাকত না। যারা ইতিহাস জানেন, আমি তাদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, হায়দরাবাদ একটি বড় সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল, নেহরু কি সেখানে গিয়েছিলেন? নেহরু কি লাক্ষাদ্বীপ, জুনাগড় বা যোধপুরে গিয়েছিলেন? তিনি শুধুমাত্র কাশ্মীরেই যেতেন এবং সেখানেও কাজ অসমাপ্ত রেখে দিয়েছিলেন,” বলছেন অমিত শাহ।
জম্মু ও কাশ্মীরের এই বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে বাকি দেশের সঙ্গে তাকে মিলিয়ে দেওয়ার ফলে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি হয়েছে বলে দাবি মন্ত্রীর। অমিত শাহের দাবি, যারা সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের কথা বলে তাদের কথা শোনেন না কাশ্মীরিরা। "কাশ্মীরের মানুষ এখন গণতন্ত্রের কথা শোনে... ২০১৪ সালের আগে, হাজার হাজার মানুষ সন্ত্রাসবাদীদের শেষযাত্রায় যোগ দিতেন। এখন কেউ কি এমন কিছু দেখতে পান? কারণ আমরা একটা ব্যবস্থা করেছি। যে স্থানে তাদের হত্যা করা হয়েছিল সেখানেই তাদের শেষকৃত্য হবে,” বলছেন অমিত।
কাশ্মীরের পাথর ছোড়ার ঘটনাও কমে গেছে কারণ সেখানে সরকার একটি নিয়ম করেছে যে যদি কারও বিরুদ্ধে পাথর ছোড়ার মামলা থাকে তবে তাদের পরিবারের কেউ সরকারি চাকরির যোগ্য হবে না। যারা পাথর ছুঁড়ত সরকার কাশ্মীরের সেই তরুণদের ল্যাপটপ তুলে দিয়েছে বলে দাবি অমিত শাহের।
তাহলে কাশ্মীর 'হাসছে'? কাশ্মীর স্বাভাবিক? কাশ্মীরের জনগণের কাছে ছবিটা এখনও ভয়েরই। ভয়ে চুপ থাকা মানেই শান্তি নয়! ভয়, ক্রমবর্ধমান দাম এবং বেকারত্ব হু হু করে বাড়ছে এই অঞ্চলে। কারফিউ নেই ঠিকই, কোনও বনধ নেই ঠিকই কিন্তু মানুষের হাতে টাকাও নেই। সপ্তাহে ৭ দিন বাজার খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই। এখনও সন্ধ্যা হলেই থমথমে পরিস্থিতি। বিকেল ৫.৩০ টা হলেই রাস্তায় বেরনো বন্ধ। বাজারে ভিড় নেই, পরিবহন নেই। এখনও ভয়ে থাকে মানুষ। ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়াতে বেকারত্ব বেড়েছে বেশিই। পরিবারের পেট চালানোর মতো টাকা নেই মানুষের হাতে, জমিও যে কোনও মুহূর্তে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। অথচ ভয় রয়েছে প্রবল। এমনকী আগের চেয়েও বেশি। আর্থিক অবস্থার থেকেও মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে বেশি, বলছেন স্থানীয় মানুষরাই। তবে, আগে মানুষ নিজেদের দুর্দশার কথা মুখ ফুটে বলতেন, এখন সেই বলার আগে ভয় এসে আঁকড়ে ধরে। নেহরু না বিজেপি না পাকিস্তান- ঠিক কোন ভয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম অবস্থা বদলায় না তাঁদের? উত্তর লুকিয়ে কাশ্মীরেই।