৩০ বছরে প্রথমবার স্নান আর তারপরেই মৃত্যু দুনিয়ার সবচেয়ে নোংরা ব্যক্তিত্বের

Amou Haji:ইরানের সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, মৃত্যুর কিছুদিন আগে দেজগার কিছু বাসিন্দা আমুর সবথেকে অপছন্দের কাজটি করে ফেলেন। তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে স্নান করিয়ে দেন। তারপর থেকেই নাকি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

শরীর সুস্থ এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে স্নান করা যে কতটা জরুরি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একদিন স্নান না করলেই নিজেকে কেমন একটা অপরিচ্ছন্ন বলে মনে হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তো দিনে অন্ততপক্ষে দুবার করে স্নান করার পরামর্শ দেন। শরীরের বাইরে থাকা রোগ, জীবাণু, ক্লেদ এতে দূর হয়ে যায়। কিন্তু আজ আমরা এমন এক ব্যক্তির কথা শুনব যিনি মনে করতেন স্নান না করলেই তিনি ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। তিনি আর কেউ নন ইরানের বাসিন্দা আমু হাজি, সারা বিশ্ব যাকে ‘ সবচেয়ে নোংরা মানুষ’ বলে চেনে।

কে এই আমু হাজি

নেটদুনিয়া হোক বা সংবাদমাধ্যম, সর্বত্রই এ কথা বহুল প্রচারিত, আমু হাজি বিশ্বের নোংরাতম মানুষ। হবে নাই বা কেন? প্রায় ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে স্নান তো দূরে থাক, গায়ে এক ফোটা জল অবধি ঢালেননি। ইরানের একটি সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, দক্ষিণ ইরানের এক রাজ্য ফার্সের দেজগা গ্রামে বসবাস করতেন আমু হাজি। সম্প্রতি ২৩ অক্টোবর ২০২২ তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৯৪।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, জীবনের বেশিরভাগ সময় নিজেকে অপরিছন্ন অবস্থায় রেখেছে আমু। বসবাস বলতে উত্তপ্ত মরুভূমির খোলা আকাশের নীচেই তার ঠিকানা। এই প্রচণ্ড গরমেও তিনি কীভাবে স্নান না করে বেঁচে ছিলেন সেটাই আসল রহস্য। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তার সম্পর্কে জানতে পারার পর তাদের চোখ কপালে উঠেছিল। ইরানের তেহরান টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, আমু বিশ্বাস করতেন তিনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলেই তার শরীরে রোগ বাসা বাঁধবে। এবং তিনি মারাও যেতে পারেন তাই সেই মানসিকতা থেকেই জলকে ঘেন্না করতে শুরু করেন।

 
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা আমু হাজির অপছন্দের বিষয়। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক ডাঃ গোলামরেজা মোলাভির একটি দল আমুকে নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছিলেন যদি আমুর শরীর থেকে কোনো ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী বা ভাইরাসের দেখা পান। কিন্তু অবাক করার মতো ব্যাপার হল, চিকিৎসক দল অনেক পরীক্ষা করেও তার শরীর থেকে কোনও জীবাণুর খোঁজ পাননি।

আমু হাজির জীবনযাপন পদ্ধতি

৩০ বছরের বেশি সময় ধরে স্নান না করাই আমুর জীবনের অবাক করা বিষয় নয়। তার জীবনযাপনের ধরণও ছিল অনেক আলাদা। উত্তপ্ত মরু অঞ্চলে থাকলেও মাঝে মধ্যে তীব্র রোদ থেকে মাথা বাঁচাতে তিনি একটি প্রাচীন লোহার পাত্র সঙ্গে রাখতেন। অন্যদিকে সন্ধ্যের পর মরু অঞ্চলে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা পড়লেও তারা ছেড়া ফাটা পোশাক দিয়েই চলে যেত। স্থানীয় বাসিন্দারা তার জন্য একটি ইটের বাড়ি বা কুঁড়েঘরের মতো তৈরি করে দিয়েছিলেন। যদিও সেই বাড়ির ছাদ নেই। তবে তিনি সেখানে কালেভদ্রে যেতেন। আর গেলেও মাটির ওপরে তার দেখা পাওয়া যেত না। তিনি ওই বাড়ির মাটির তলায় সমাধির মতো কায়দায় গর্ত খুঁড়ে সেখানে থাকতেন।

খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারেও তিনি ছিলেন বিচিত্র। আমিষাশী ছিলেন আমু। একদিকে যেমন স্নান না করে জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন ঠিক তেমনই দিনে নিয়ম করে ৫ লিটার জল খেতেন। তাও যে সে জল নয় লোহার জং ধরা পাত্রে করে ড্রেনের জল খেতেন। আর দুপুরে খেতেন পাখির মাংস। তাই বলে তাজা মাংস নয়, পচা গলা মাংস। তার পছন্দের ছিল শজারুর মাংস। আর যেদিন খাওয়ার পেতেন না সেইদিন নর্দমা বা মানুষের পরিত্যক্ত খাওয়ার থেকে বেছে খেতেন।

 
amou haji
 
 

স্নান না করলে কি হবে সাজগোজের ব্যাপারে তিনি ছিলেন একদম টিপটপ। একচুল এদিক ওদিক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। কিছু বিষয় নিয়ে তিনি ভীষণ শৌখিন যেমন – একটি ভাঙা গাড়ির ব্যাক ভিউ মিরর তার নিত্যদিনের সঙ্গী। সেটা দিয়েই নিজেকে সারাদিন দেখতে থাকেন। সেই আয়নাতে দেখেই নিজের ছেঁড়া জামা কাপড় ঠিক করে নিতেন। আর যদি কখনও চুল দাঁড়ি বড় হয়ে যেত তখন তা আগুনে পুড়িয়ে মানানসই করে নিতেন। তার পছন্দের আরেকটি জিনিস হল তিনি ধূমপান করতে ভালোবাসতেন, তাই গ্রামের বাসিন্দারা মাঝে মাঝে তাকে সিগারেট কিনে দিয়ে যেতেন। এছাড়া ধূমপানের আরেকটি পন্থা তিনি বের করেছিলেন। একটি পাইপে পশু পাখির মল ভরে তা আগুনে পুড়িয়ে ধূমপান করতেন তিনি। আমার আপনার কাছে এই জীবন অস্বাস্থ্যকর মনে হলেও এইভাবেই জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কাটিয়েছেন।


কেন এমন অস্বাস্থ্যকর পথ বেছেছিলেন তিনি

এত সব কিছুর পরেও প্রশ্ন থেকেই যায়, কেন এমন অদ্ভুত আচরণ করতেন তিনি? স্থানীয় কিছু বৃদ্ধদের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৯৫৪ সালে একবার জ্বরে পড়েছিলেন তিনি। বলতে গেলে তারপর থেকেই স্নানের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করেন তিনি। আবার অনেকের মতে, প্রেমে প্রত্যাখ্যান পেয়েই নাকি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। সেই থেকেই এমন অবস্থা আমুর। ৯৪ বছর বয়সী আমুর নিজের বলতে কেউ নেই। আর থাকলেও তারা কেউ সর্বসমক্ষে আসেননি। শরীর ভরা নোংরা নিয়েই নিজের ভবঘুরে জীবন কাটাতেন তিনি। এহেন ব্যক্তি তাই সকলের কাছেই কৌতূহলের বিষয়। ২০১৩ সালে আমু হাজির অদ্ভুত জীবন কাহিনি নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘দ্য স্ট্রেঞ্জ লাইফ অফ আমু হাজি’ নামে এক ডকুমেন্টরি ফিল্ম।

আমু হাজি নামকরণ

নিজের নাম এবং পূর্ব জীবন কিছুই মনে ছিল না তাঁর। নিজের নাম অবধি জানতেন না। জানা যায়, স্থানীয় বাসিন্দারা এই ‘আমু হাজি’ নামটা দিয়েছিলেন। যার ফারসি অর্থ হল ‘দয়ালু বৃদ্ধ’। লোকের কাছে পাগল বলে গণ্য হলেও স্থানীয় লোকেদের মতে আমু কোনোদিন কারুর ক্ষতি করেনি। কেউ তাঁকে আক্রমণ করলেও না। তাই তাঁর এমন নামকরণ।

আমু হাজি আজ আর বেঁচে নেই। তিনি প্রয়াত। ইরানের দেজগায় তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকের মতে, দীর্ঘদিন স্নান করে থাকার পর হঠাৎ করে গায়ে জল দেওয়ায় সেই আঘাত নিতে পারেননি তিনি। ইরানের সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, মৃত্যুর কিছুদিন আগে দেজগার কিছু বাসিন্দা আমুর সবথেকে অপছন্দের কাজটি করে ফেলেন। তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে স্নান করিয়ে দেন। তারপর থেকেই নাকি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ২৩ অক্টোবর ২০২২ নিজের বাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর। হয়তো আমু ভাবতেও পারেননি যেই স্নানের থেকে তিনি আজীবন নিজেকে দূরে রেখেছেন সেই স্নানই তাঁর মৃত্যুদূত হয়ে হাজির হবে।

কিন্তু আমু হাজি একমাত্র ব্যক্তি নন যিনি সবথেকে নোংরা মানুষ বলে পরিচিতি পেয়েছেন। এর আগে ভারতের বারাণসীতে কৈলাস সিং বলে একজন ব্যক্তির ব্যাপারে জানা যায় যিনি জীবনের ৩০ বছর স্নান করেননি। প্রতি সন্ধ্যায় একপায়ে দাঁড়িয়ে শিবের কাছে প্রার্থনা করতেন। আর প্রচুর পরিমাণে গাঁজা খেতেন। আরও জানা যায় এমনি জল দিয়ে স্নান না করলেও তিনি নাকি অগ্নি স্নান করতেন। অর্থাৎ নিজের চারিদিকে সবসময় আগুন জ্বালিয়ে রাখতেন। তাঁর কথায়, শরীরে আগুনের তাপ লাগলে সমস্ত জীবাণু, এবং সংক্রমণ শেষ হয়ে যাবে।

More Articles