একটি পা-ই সম্বল, তা দিয়েই দুরন্ত গোল! ফিফার মঞ্চে লড়াইয়ের মন্ত্র শেখালেন এই প্রতিবন্ধী ফুটবলার

Marcin Oleksy FIFA Puskas Award : মেসি-রোনাল্ডোদের ছাপিয়ে বিশ্বের প্রথম প্রতিবন্ধী ফুটবলার হিসেবে ২০২২ ফিফা পুসকাস পুরস্কার জিতে নেন তিনি।

মাঠে তিনিও ছুটে বেড়ান, ডিফেন্ডারদের ফাঁক দিয়ে গলে যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। বল এলেই সোজা এগিয়ে যাওয়া বিপক্ষের গোলের দিকে। তারপর জোরালো একটা শটে গোলকিপারকে পরাস্ত করে জালে বল জড়িয়ে দেওয়া। অন্যান্য স্ট্রাইকারদের মতোই মাঠে দাপিয়ে বেড়ান পোল্যান্ডের ফুটবলার মার্সিন ওলেক্সি (Marcin Oleksy)। কিন্তু অন্যান্যদের সঙ্গে একটা ব্যাপারেই তফাৎ থেকে যায়। মেসি-রোনাল্ডোদের মতো দুটো তেজিয়াল পা নেই তাঁর। একটাই মাত্র পা ভরসা ফুটবল মাঠে, সঙ্গী হিসেবে এক হাতে থাকে ক্রাচ।

আপাতদৃষ্টিতে দেখতে গেলে, প্রতিবন্ধী ফুটবলার। কিন্তু এই শব্দটি নিয়ে ঘোর আপত্তি মার্সিন ওলেক্সির। তিনিও তো ফুটবলার, তিনিও তো প্রতিদিন শরীরচর্চা করেন। মাঠে নিজেকে উজাড় করে দেন, বিপক্ষের রক্ষণ তছনছ করেন। কেবল একটা পা নেই বলেই তিনি প্রতিবন্ধী? সে তো শরীরের, মন তো সদাসর্বদা টগবগে। মার্সিন ওলেক্সির এই ভাবনাটাই উঠে এসেছে ফিফার মঞ্চে। ফিফার বর্ষসেরা গোলটি এসেছে তাঁর একমাত্র পা থেকেই। আর সেখানেই সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন পোল্যান্ডের এই অ্যাম্পুটি ফুটবলার। মেসি-রোনাল্ডোদের ছাপিয়ে ২০২২ ফিফা পুসকাস পুরস্কার (FIFA Puscas Award 2022) জিতে নেন তিনি। বিশ্বের প্রথম প্রতিবন্ধী ফুটবলার হিসেবে এই ইতিহাস তৈরি করলেন মার্সিন।

পুসকাস পুরস্কারের দৌড়ে কে ছিলেন? ব্রাজিলের রিচার্লিসন এবং ফ্রান্সের দিমিত্রি পায়েত। ২০২২ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের মঞ্চে রিচার্লিসনের চোখ ধাঁধাঁনো বাইসাইকেল কিক এবং গোল কেউ ভুলতে পারেননি। তবে এতকিছুর মধ্যেও ইতিহাস তৈরি করলেন পোল্যান্ডের মার্সিন ওলেক্সি। পোল্যান্ডের প্রতিবন্ধী ফুটবলেই চোখ ধাঁধাঁনো গোল করেন তিনি। বিপক্ষের অর্ধের বাঁ দিক থেকে আক্রমণে উঠছিলেন তিনি। সতীর্থ দাওয়িদ নোভাক ছোট্ট করে তাঁর দিকে একটি লব পাস বাড়ান। হাওয়ায় ভেসে আসা সেই বলটির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন মার্সিন। তারপরই ক্রাচে ভর দিয়ে গোটা শরীর ভাসিয়ে দিলেন শূন্যে। তারপরই একেবারে ছবির মতো নিখুঁত ও সুন্দর একটি বাইসাইকেল কিক। গোলকিপারের দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।

গোল করার পর ক্রাচ ফেলে দিয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়েছিলেন মার্সিন ওলেক্সি। নিজেও তখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না গোলটির কথা। সতীর্থরা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরার পর সম্বিত ফিরল। মার্সিনের সেই গোলটির ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার পরই রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেল। ফিফা, উয়েফা সহ তাবড় ফুটবল সংস্থা, ফুটবলাররা মার্সিনের প্রশংসা করতে শুরু করলেন। ঠিক একইভাবে গোল করেছিলেন রিচার্লিসনও। কিন্তু তিনি তো সুস্থ, তাঁর কোনও প্রতিবন্ধকতা ছিল না। মার্সিন ওলেক্সির লড়াইটা সবদিকেই কঠিন।

তবুও সেই কঠিন বাস্তবকে পরাস্ত করে এগিয়ে যেতে চান তিনি। ফিফার পুরস্কার মঞ্চে যখন মেসি, এমি মার্তিনেজরা সেরার পুরস্কার নিচ্ছেন, তখনও ভেতরে ভেতরে নিজেকে তৈরি করছিলেন এই পোলিশ ফুটবলার। ২০২২-র পুসকাস পুরস্কার জেতার পর মঞ্চেই তুলে ধরলেন মুষ্টিবদ্ধ হাত; হ্যাঁ, আমি পেরেছি! পোল্যান্ডের আরেক তারকা ফুটবলার রবার্ট লিওয়ানডস্কি সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন মার্সিনকে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, নেইমার, জলাটান ইব্রাহিমোভিচের সঙ্গে একই সারিতে বসে পড়লেন তিনি। বিশ্বের প্রথম প্রতিবন্ধী ফুটবলার হিসেবে। শরীরের প্রতিবন্ধকতা; আর মনের? কখনই নয়।

More Articles