ক্রমশ গলে যাচ্ছে অ্যান্টার্কটিকার দৈত্যাকার হিমবাহ, ধেয়ে আসছে বিপদ?
যে কোনও মুহূর্তে ভাঙবে অ্যান্টার্কটিকার দৈত্যাকার হিমবাহ! 'মহাপ্রলয়ের' আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের?
Antarctica Thwaites Glacier Melting : যদি এটা হয়, তাহলে পৃথিবীর অনেক বড় শহর, দেশ জলের তলায় চলে যাবে। সত্যিই কি মহাপ্রলয় আসন্ন?
অ্যান্টার্কটিকা মানে চারিদিকে ধু ধু সাদা বরফ আর হিমবাহ। সেইসঙ্গে মারণ ঠাণ্ডা। যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানী থেকে সাধারণ মানুষ, সবারই আকর্ষণের অন্যতম জায়গা এই অ্যান্টার্কটিকা। রহস্যের সন্ধানে, গবেষণার কাজে বিভিন্ন দেশ থেকে গবেষকরা সেখানে গিয়েছেন। তবে কেবল অ্যান্টার্কটিকার মূল ভূখণ্ডকে ধরলেই হবে না; চারিদিকে ভেসে আছে বিরাট বিরাট বরফের পাহাড়। ভেসে রয়েছে হিমবাহ। যেমন বিশাল তার আকার, তেমনই ভয়াল তার রূপ। জলের ওপরেই অত বড় অংশ আছে, তাহলে তলার অংশ তো আরও বড় হবে!
বিগত কয়েক বছর ধরে এই অ্যান্টার্কটিকার ওপরেই কড়া নজর রেখেছে বিজ্ঞানীদের দল। নজর রাখা হয়েছে হিমবাহগুলির ওপরও। তারপরই একের পর এক ভয়াবহ তথ্য উঠে আসছে। সম্প্রতি আরও একটি ভয়ংকর রিপোর্ট উঠে এল অ্যান্টার্কটিকাকে নিয়ে। যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে থোয়াইটস হিমবাহ (Thwaites Glacier)। গবেষকদের কাছে এই হিমবাহের আরেক নাম ‘ডুমসডে হিমবাহ’ (Doomsday Glacier)। ১,৯২,০০০ বর্গ কিলোমিটারের দৈত্যাকার এই হিমবাহের আরও একটি বিশেষত্ব আছে। এটি অ্যান্টার্কটিকার সবচেয়ে দ্রুতগতিতে চলা হিমবাহ। আপাতত এটি ঘিরেই আশঙ্কার মেঘ জমা হচ্ছে বিজ্ঞানীদের মনে। বড়সড় বিপদ ঘটতে পারে এর জন্য।
আরও পড়ুন : অল ইজ নট ওয়েল ইন লাদাখ! ১৮০০০ ফুট উচ্চতায়, -৪০ ডিগ্রিতে কেন অনশনে বসছেন ওয়াংচুক?
কেন? কারণ, দৈত্যাকার থোয়াইটস হিমবাহ ক্রমশ গলে যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, তার ভেতরের অবস্থা আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের মেরিন জিওফিজিসিস্ট রবার্ট লার্টার সম্প্রতি এমনই আশঙ্কার কথা বললেন। ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে থোয়াইটস হিমবাহ। সেটা জানার জন্য একটি বিশেষ পরীক্ষা করেছেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ব্রিটনি স্মিদ। এই গবেষণার জন্য ১৩ ফুট লম্বা পেনসিল আকৃতির একটি বিশেষ রোবট ‘আইসফিন’ তৈরি করেছেন তিনি। অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্রের তলায় গিয়ে এই রোবট গবেষণা চালাতে সক্ষম। তার মাধ্যমেই উঠে এসেছে বেশকিছু ভয়ংকর ছবি।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, থোয়াইটস হিমবাহের তলদেশ কার্যত খাদের ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে। খুব দ্রুত গলে যাচ্ছে এই হিমবাহ। আস্তে আস্তে বরফের আস্তরণ সরু হয়ে আসছে। এর প্রভাব পড়বে উপরিভাগেও। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দৈত্যাকার হিমবাহটির তলদেশ ব্যাপকহারে ক্ষতির মুখে পড়ায় ভেতরের দিকে বেশকিছু ফাটল তৈরি হয়েছে। এদিকে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে কেবল পৃথিবী গরম হচ্ছে তাই নয়; উষ্ণ হচ্ছে সমুদ্রের জলও। অ্যান্টার্কটিকাও তার অন্যথা নয়। সেই গরম জল হিমবাহের ফাটলের মধ্যে দিয়ে ভেতরে ঢুকছে। ফলে আরও গলে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : সমুদ্রের জলে হু হু করে বাড়ছে অ্যাসিডের মাত্রা! কোন বিপদ অপেক্ষায়
কী হবে এর ফলে? ‘ডুমসডে’ থোয়াইটস হিমবাহের আকার অত্যন্ত বড়। একবার যদি সেটি ভেঙে যায়, তাহলে সমূহ বিপদ। ‘ডুমসডে’ নামটিও সেই কারণেই এসেছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, যে দ্রুত গতিতে হিমবাহ গলছে, তাতে আগামী পাঁচ থেকে ৫০০ বছরের মধ্যে এটি একেবারে ভেঙে পড়বে। সমস্ত বরফ গলে সমুদ্রে মিশবে। তখনই শুরু হবে আসল সমস্যা। সমুদ্রের জলস্তর অন্তত তিন মিটার অবধি বেড়ে যাবে! যদি এটা হয়, তাহলে পৃথিবীর অনেক বড় শহর, দেশ জলের তলায় চলে যাবে। সত্যিই কি মহাপ্রলয় আসন্ন?
আপাতত তেমনটাই আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। অ্যান্টার্কটিকার দিকে ইতিমধ্যেই আরও কড়া নজর রাখা হয়েছে। প্রতি মুহূর্তের আপডেট নিয়ে কাজ চলছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ২০০০ সাল থেকে অ্যান্টার্কটিকায় যে হারে বরফ গলছে, তা কপালে ভাঁজ বাড়াচ্ছে বৈকি!