অণ্ডকোষ থেকে হার্টের সমস্যা, অনুব্রতর অসুখ আর সারে না
সিবিআই-এর তলবে হাজিরা দিতে নিউটাউনের ফ্ল্যাট থেকে রওনা হয়েছিলেন তিনি, কিন্তু নিজাম প্যালেসের পরিবর্তে চলে যান এসএসকেএম হাসপাতালে। তারপর থেকে এসএসকেএমের উডবার্ন ব্লকই হয়ে উঠেছিল তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের অস্থায়ী ঠিকানা। তাঁর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন এপিডিডিমাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। দ্রুত চিকিৎসার ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতিও হচ্ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বুকের ব্যথায় ফের কাহিল হয়ে পড়লেন কেষ্ট।
গত ২০ এপ্রিল সিটি অ্যানজিও করার উদ্দেশ্যে অনুব্রতকে উডবার্ন ব্লক থেকে এসএসকেএম--এর অ্যানেক্স রামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর চিকিৎসকদের মতে অনুব্রতর বুকের ব্যথা কিছুতেই কমছে না, সেই কারণেই তাঁকে সিটি অ্যানজিও করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাজনীতির ময়দানে তাঁর দাপট দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও অসুখ যেন অনুব্রতর পিছু ছাড়ছে না। কোন কোন রোগ বাসা বেধেছে তাঁর শরীরে, দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকে।
ইতিপূর্বে অনুব্রতর চিকিৎসদের মারফৎ জানা গেছে, সিওপিডি রোগে আক্রান্ত তিনি। এ ছাড়াও আছে হার্টের সমস্যা। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা হঠাৎ পড়ে যাওয়ায় কৃত্রিম পদ্ধতিতে অক্সিজেন দিতে হয়েছে তাঁকে। অনুব্রতর শরীরে সুগারের মাত্রাও নেহাত কম নয়। ডাক্তারের পরামর্শে প্রতিদিনই তাঁকে ইনসুলিন নিতে হয়। ঘুম থেকে উঠেই হার্ট এবং সুগারের জন্যে তাঁকে খেতে হয় চার থেকে পাঁচ রকমের ওষুধ।
আরও পড়ুন-তৃতীয় জয়ের এক বছরেই নড়বড়ে তৃণমূল? দল কি ভাঙছে আড়াআড়ি?
ডাক্তারের নির্দেশে খাদ্যরসিক অনুব্রতর খাবারের তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে বহু পদ। কড়া রুটিনের বাইরে বেরোনোর উপায় নেই তাঁর। এক সাক্ষাৎকারে কেষ্ট নিজেই জানিয়েছেন একসময় তিনি একাই খেতে পারতেন দেড় কেজি মাংস। কিন্তু ইদানিং শারীরিক অসুস্থতার ফলে মাংস খাওয়ায় রাশ টানতে হয়েছে তাঁকে। বীরভূমের এই বর্ষীয়ান নেতার সকাল শুরু হয় দুধ আর হাতে গড়া রুটি দিয়ে। দুপুরে তাঁর খাবারের পাতে ভাতের সঙ্গে সাধারণত নিম বেগুন আর ঝিঙে পোস্ত থাকে। কেষ্টর রাতের আহারও পরিমিত। চল্লিশ গ্রাম চালের ভাত আর সোনা মুগের ডাল দিয়েই তিনি রাতের খাওয়া সারেন।
একেই নানান রোগে জর্জরিত ছিলেন অনুব্রত, তার উপর ২০২০ সালে মৃত্যু হয় তাঁর স্ত্রী ছবি মণ্ডলের। ক্যান্সাক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসার সবরকম চেষ্টাই করেছিলেন তিনি। তাঁকে ভর্তি করেছিলেন কলকাতার টাটা ক্যান্সার হাসপাতালে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ২০২০ সালের ২৪ জানুয়ারি মৃত্যু হয় ছবির। স্ত্রী বিয়োগের ফলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন অনুব্রত।
তাঁকে নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন কেষ্টর মাথায় যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন না পৌঁছনোর ফলেই মাঝে মধ্যে বেফাঁস কথা বলে ফেলেন তিনি। সেই নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয় মমতাকে। নানান বিতর্কিত কার্যকলাপের জন্যে বিভিন্ন সময়ে কেষ্টর নাম উঠে এসেছে সংবাদপত্রের শিরোনামে। তা সত্ত্বেও কার্যত একা হাতে বীরভূমে তৃণমূলের মসনদ আগলে রেখেছেন তিনি। কিন্তু এ যাত্রা অসুস্থতার কারণেই যেন খানিক ব্যাকফুটে যেতে হয়েছে তাঁকে। সাম্প্রতিককালে অনুব্রতর ডাক্তাররা জানিয়েছেন তাঁর দুটো অণ্ডকোষের অবস্থাও উদ্বেগজনক। তবে তাঁরা এও জানিয়েছেন যে এই মুহূর্তে অস্ত্রপ্রচারের প্রয়োজন নেই।
নিন্দুকরা বলেন, অসুখের সঙ্গে সঙ্গে অনুব্রতর ‘হিসাব-বহির্ভূত’ সম্পত্তিও যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গত বছর এই ‘হিসাব-বহির্ভূত’ সম্পত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়ে তাঁকে নোটিশ পাঠিয়েছিল আয়কর দপ্তর। তাঁর চার আত্মীয়কেও পাঠানো হয়েছিল এই নোটিশ। এ ছাড়াও সাম্প্রতিককালে গরু পাচার কাণ্ডেও অভিযোগের আঙুল উঠেছে তাঁর দিকে। ফলত, অসুখ-বিসুখের সঙ্গে আইনি জটিলতাও ইদানিং কাহিল করেছে তৃণমূলের এই হেভিওয়েট নেতাকে।
তর্ক বিতর্ক চলবে নিজের পথে। কেষ্ট কি আদৌ দোষী, নাকি ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে তাঁকে, যথাসময়ে মিলবে সে প্রশ্নের উত্তর। তবে, তিনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ফের রাজনীতির ময়দানে ফিরতে পারেন। আপাতত এই কামনাটুকুই থাকবে।