বোধন নয়, ইছামতির বিসর্জনে শুরু হয় হুল্লোড়! ৩৮৭ বছরে এটাই ঐতিহ্য বসু বাড়ির পুজোর

Durga Puja 2022: বাংলা চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য কৌতুক অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর বাড়ির পুজো বলেও পরিচিত এটি। এই পুজোতে বলি প্রথারও একটি অভিনব রীতি রয়েছে।

শেষ থেকেই শুরু। বা বলা যেতে পারে বিদায় বেলায় উৎসবের পালা। একথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য বসিরহাটের বাদুড়িয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আড়বেলিয়ার বসু বাড়ির দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে। এখানে দেবী প্রতিমার বিদায় বেলায় বিষাদের মধ‍্যেও এক অন্য উৎসবের চেহারা নেয় সমস্ত এলাকা। দুর্গা পুজোয় ষষ্ঠীর বোধন থেকে শুরু করে দশমীর যাত্রামঙ্গল পর্যন্তই সাধারণত বাঙালিরা পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে অভ্যস্ত। কিন্তু এই বসু বাড়ির বেলায় উৎসবের আনন্দের আঙ্গিকটা একটু ভিন্ন।

এখানে ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত বাড়ির পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা আনন্দে মেতে উঠলেও আসল উৎসবের চেহারা টের পাওয়া যায় দশমীর দিন, বিজয়ার আসরে। রীতি অনুযায়ী, এই বসু বাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জন না হওয়া পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী ধান্যকুড়িয়া, তারাগুনিয়া ও জগন্নাথপুরের মতো একাধিক গ্রামের জমিদার বাড়ির পুজোর প্রতিমা দালান থেকে নামানোই হয় না। প্রথমে বসু বাড়ির প্রতিমার নিরঞ্জন হবে, তারপর একে একে অন্যান্য বাড়ি তথা ক্লাব, সংগঠনের প্রতিমা বিসর্জনের পথে বেরোবে।

আরও পড়ুন- পুজোতেও খালি হাতে ফেরাবে না শান্তিনিকেতন! আপনার অপেক্ষায় সুরুল, হেতমপুর

একদিকে যেমন স্থানীয় মহিলারা বিজয়ার দিন যাত্রা মঙ্গলের পর থেকে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন, অন্যদিকে ৩০ জন বেহারার কাঁধে চেপে তারাগুনিয়ায় ইছামতি নদীর দিকে প্রস্থান করে দেবীর প্রতিমা। যা দেখতে সারি সারি মানুষ রাস্তার ধারে ভিড় জমান। প্রচুর মানুষ এই বিসর্জনের শোভাযাত্রায় সামিল হন। সব মিলিয়ে এক অনন্য উৎসবের চেহারা নেয় আড়বেলিয়া। ৩৮৭ বছরে পদার্পণ করল বাদুড়িয়ার আড়বেলিয়ার বসু বাড়ির পুজো। বাংলা চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য কৌতুক অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর বাড়ির পুজো বলেও পরিচিত এটি। এই পুজোতে বলি প্রথারও একটি অভিনব রীতি রয়েছে।

প্রথমে সপ্তমীতে বলি হয় ছাগল, অষ্টমী তিথিতে বলি দেওয়া হয় হয় ভেড়া এবং অবশেষে নবমীতে কুমড়ো বলির মধ্য দিয়ে বলি পর্বের ইতি টানা হয়। বংশ পরম্পরায় এই বসু বাড়ির পুজো করে আসছে পার্শ্ববর্তী ভট্টাচার্য্য পরিবার। যখন থেকে এই পুজোর শুরু তখন থেকেই ভট্টাচার্য্য পরিবারের পূর্বপুরুষরা এই পুজোকে মহীরূহের আকার ধারণ করিয়ে রেখেছেন। বাংলার অন্যান্য জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোয় যখন মানুষ মেতে ওঠেন ষষ্ঠী থেকে নবমীতে। অথচ এই বসু বাড়িতে দশমীর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা‌। কারণ বসু বাড়ির বিদায় বেলা আসলে উৎসবের অন্য নাম। প্রস্থানের পথে শোভাযাত্রায় যে এক অনন্য উৎসবের চেহারা মানুষ দেখেন, তা ভাষায় প্রকাশ করাই কঠিন।

More Articles