মধ্যরাতে ফুটবল ম্যাজিক, মেসির ৮০০তম গোল, বিশ্বজয়ের মুহূর্তই যেন ফিরে এল আর্জেন্টিনায়
Argentina Win against Panama : ততক্ষণে সতীর্থদের সঙ্গে সাইডলাইনে গোল উদযাপন করছেন তিনি। লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।
ম্যাচের তখন ৮৮ মিনিট। বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের বেশ কিছুটা বাইরে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। বল হাতে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলটি রাখলেন নির্দিষ্ট জায়গায়। বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই চকিত শট। হালকা ডানদিকে বাঁক নিয়ে, গোলকিপারকে পরাস্ত করে বলটি ঢুকে গেল গোলের ভেতর। এই মুহূর্তটির অপেক্ষাতেই যেন ছিল বুয়েনস আইরেসের গোটা স্টেডিয়াম। চিৎকার, গান, আনন্দ সব একসঙ্গে ভিড় করে এল। ততক্ষণে সতীর্থদের সঙ্গে সাইডলাইনে গোল উদযাপন করছেন তিনি। লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। জীবনের ৮০০ তম গোলটি এভাবেই ঘরের মাঠে, বিশ্বকাপ জয়ের পর চলে আসবে, এমনটাই ভেবেছিলেন সমর্থকরা। হতাশ করেননি তিনি।
আর্জেন্টিনা বনাম পানামা ম্যাচ কেবল এই ছবিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং একসঙ্গে অনেকগুলো মুহূর্ত ধরা দিল এল মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে। ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২। কাতারের মাটিতে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের সেই সোনালি মুহূর্ত এখন যেন ফিকে হয়নি। আর্জেন্টিনা আরও একবার উন্মাদনায়, স্বপ্নে ভেসে উঠেছিল। বুকের মধ্যে ধরা ছিল দিয়েগো মারাদোনার ছবি। তারপর ফিফার সেরা খেলোয়াড়, গোলকিপার আর কোচের পুরস্কার পেলেন তিন আর্জেন্টিনীয়। লিওনেল মেসি, এমি মার্তিনেজ এবং লিওনেল স্কালোনি। তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জেতার পর শুক্রবারই ছিল প্রথম ম্যাচ। বিশ্বজয়ী হিসেবে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ। বিপক্ষে পানামা। যতই হোক আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি, এখন মেসি-স্কালোনিদের কাছে সব ম্যাচেরই গুরুত্ব আছে।
ফুটবলের কথা খানিক পরে আনা যাক। বিশ্বজয়ী হিসেবে প্রথম ম্যাচ, তাও আবার ঘরের মাঠে। ১৮ ডিসেম্বরের আরও একটা ঝলক থাকবে না, তা কি হয়! মাঠের মধ্যে চলে এল সোনালি বিশ্বকাপ। মেসিদের নতুন জার্সি, সেখানে দুইয়ের জায়গায় তিনটে তারা। সেইসঙ্গে জার্সিতে লেখা ‘২০২২ বিশ্বকাপের বিজয়ী দল’। ম্যাচ শুরুর আগেই আবহাওয়া তৈরি হয়ে গিয়েছিল। গোটা স্টেডিয়াম যেন আরও একবার সেই বিশ্বজয়ের মুহূর্তে ফিরে গেল। জাতীয় সঙ্গীত বাজার সময় লাইন দিয়ে দাঁড়ালেন ফুটবলাররা। তাঁদের চোখে জল। জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে অঝোরে কেঁদে চলেছেন এমি মার্তিনেজ। সেই এমি, যাকে নিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালের পর কম বিতর্ক হয়নি। কিন্তু দেশের প্রতি আবেগ যে অক্ষুণ্ণ, সেখানে কেউ আঁচড় কাটতে পারবে না, তা বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা।
আরও পড়ুন : আঠা দিয়ে ফাটা জুতো মেরামত করে ফুটবল খেলা, দি মারিয়ার গল্প হার মানাবে রূপকথাকেও
প্রতিপক্ষ হিসেবে দুই নম্বরে থাকা আর্জেন্টিনার থেকে বেশ দুর্বল পানামা। তবুও লড়াই চলল সেয়ানে সেয়ানে। শুরু থেকেই কোনওরকম ফাঁক বা পরীক্ষা নিরীক্ষার রাস্তা রাখেননি স্কালোনি। একেবারে দক্ষ, প্রথম দলই নামিয়েছিলেন। প্রথমার্ধ গোলশূন্য হওয়ার পর এক এক করে নামেন পরিবর্তরা। লাউতারো মার্তিনেজ, লিসান্দ্রো মার্তিনেজ ও থিয়াগো আলমাদাকে নামান তিনি। পরে নামান পারাডেস ও পাওলো ডিবালাকে। এরপরই আক্রমণের ঝাঁঝ আরও কয়েকগুণ বাড়ান মেসিরা। গোটা ম্যাচে মোট ২৬টি গোলমুখী শট মারেন লা আলবিসেলেস্তেরা। পানামার খাতায় মাত্র দুটি। ৭৮ মিনিটে ফ্রি-কিক পাওয়ার পর মেসি শট নেন। কিন্তু সেটা বারপোস্টে লাগে। তবে সতর্ক ছিলেন আলমাদা। সেই ফিরতি বলই জালে জড়িয়ে গোলযাত্রা শুরু করেন।
এরপর আসে ৮৮ মিনিটের সেই ম্যাজিক। ফ্রি-কিক থেকে মেসির গোল যেন শেষপাতে নরম রসগোল্লার মতো ছিল। সেইসঙ্গে ক্লাব ও আন্তর্জাতিক কেরিয়ার মিলিয়ে ৮০০ গোল সম্পূর্ণ করলেন মেসি। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে ৯৯টি গোল। সামনে ৮৩০টি গোল করে বসে আসেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। মেসি কি পারবেন চির প্রতিদ্বন্দ্বীকে ছাপিয়ে যেতে? আপাতত সেসব ভাবনা দূরে সরিয়ে রেখে এই সোনালি মুহূর্ত উপভোগ করতে চাইছেন আর্জেন্টিনার বাসিন্দারা। হাজার হোক, তিনি তো মেসি। তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখা যায়।