মেসিকে পাত্তাই দিচ্ছে না নেদারল্যান্ড! আজ হতাশ হবেন আর্জেন্টিনা ভক্তকূল?
Argentina Vs Netherlands Match: আর্জেন্টিনার যেমন আক্রমণভাগ অনেক বেশি শক্তিশালী, তেমনই নেদারল্যান্ডের রক্ষণ ভীষণ শক্তিশালী। তাই লড়াই বুনো ওলের সঙ্গে বাঘা তেঁতুলের।
৩৬ বছরের বিশ্বকাপ শিরোপা খরা কাটাতে ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর কাতার বিশ্বকাপে অবতীর্ণ হয়েছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে ২-০ ব্যবধানে পরাজিত হতে হলেও, বেশ সফলভাবেই বাকি ম্যাচগুলিতে জয়লাভ করে কোয়ার্টার ফাইনাল অব্দি পৌঁছেছে আর্জেন্টিনা। আর এখানে আলবিসেলেস্তেদের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ড। তবে শুধু এই প্রথম নয়, এর আগেও বিশ্বকাপের ময়দানে এই দু'টি দল একাধিক বার মুখোমুখি হয়েছে।
১৯৭৪ সালে প্রথমবার সাক্ষাতে আর্জেন্টিনাকে ৪-১ গোলে পরাস্ত করেছিল নেদারল্যান্ড। আর সেই বছরই বিশ্বকাপের ময়দানে আরও একবার দেখা হয় দুই দলের। এবারের ম্যাচেও জয় পায় নেদারল্যান্ড, তাও আবার ৪-০ ব্যবধানে। এরপর ১৯৭৮ এবং ১৯৭৯ সালে পরপর দু'বার জয়লাভ করে আর্জেন্টিনা।
১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে আরও একবার মুখোমুখি হয় এই দু'টি দল। তবে সেবার জয় পেয়েছিল নেদারল্যান্ড। ১৯৯৯ ও ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হয় এই দুই দলের মধ্যে। প্রথমটি ড্র হলেও পরের ম্যাচে জয়লাভ করে নেদারল্যান্ড। ২০০৬ সালে আরও একবার বিশ্বকাপের ময়দানে দেখা হয় দুই দলের। তবে সেই ম্যাচ হয়েছিল গোলশূন্য ড্র। ২০১৪-র বিশ্বকাপ ছিল নেদারল্যান্ডের জন্য সবথেকে 'ড্রামাটিক'। সেমিফাইনালে ম্যাচে ৪-২ ব্যবধানের ডাচদের পরাস্ত হতে হয় আর্জেন্টিনার কাছে।
এতদিন পর্যন্ত ৯টি ম্যাচে ডাচরা জয় পায় ৪টি ম্যাচে, ৪টি ম্যাচ শেষ হয় অমীমাংসিতভাবে এবং ৩ বার হারতে হয় আর্জেন্টিনার কাছে। তবে বিশ্বকাপের ময়দানে দুই দলের পরিসংখ্যান একেবারে সমান। এতদিন পর্যন্ত পাঁচবার সাক্ষাৎ হয়েছে এই দুই দলের এবং দু'টি দল জিতেছে দু'টি করে ম্যাচ। একটি ম্যাচ শেষ হয়েছে অমীমাংসিতভাবে। তাই ২০২২ বিশ্বকাপের এই ম্যাচটি দু'টি দলের জন্যই যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নতুন করে বলার কিছু নেই।
আরও পড়ুন- মেসি বনাম ভ্যান ডিক, ভয়ংকর ‘খেলা হবে’, পাল্লা ভারী কোন দিকে
মেসিকে নিয়ে কী ভাবনাচিন্তা ডাচদের?
২০২২ বিশ্বকাপের লড়াই একেবারে জমে উঠেছে। এই মুহূর্তে সোনালি ট্রফির বেশ অনেকটাই কাছে রয়েছে আটটি দল। কোন দলই একে অপরের থেকে কম শক্তিশালী নয়। হয়তো ফেভারিটের তালিকায় ব্রাজিল এবছরে এগিয়ে থাকলেও, অন্যান্য দলগুলি যে একেবারেই প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে, সেটা বলা যায় না।
ফাটাফাটি লড়াইয়ের শুরুটা ব্রাজিল এবং ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে ম্যাচ থেকে শুরু হলেও, নেদারল্যান্ডস এবং আর্জেন্টিনার মধ্যকার ম্যাচটি দুই দলের জন্যই সম্মানের লড়াই। নেদারল্যান্ডস এই টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত অপরাজিত দল। তাদের রক্ষণের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশই। তবে শুধুমাত্র রক্ষণের জন্য নয়, তাদের আক্রমণও ছন্দ খুঁজে পেয়েছে প্রতি ম্যাচে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা টুর্নামেন্টের শুরুতেই শিকার হয়েছে অঘটনের। এরপর রীতিমতো তারা বাউন্স ব্যাক করেছে। আর তাতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন আর্জেন্টিনা তথা বিশ্ব ফুটবলের মেগাস্টার লিওনেল মেসি।
তাই নেদারল্যান্ডের পক্ষে এই ম্যাচটা মোটেও সহজ হবে না। ক্লাব ফুটবল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ফুটবল, সবদিকেই কাজ করে 'মেসি ভীতি'। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগছে মেসিকে দমনের কী পরিকল্পনা নিতে চলেছে নেদারল্যান্ড?
এই প্রশ্নের জবাবে নেদারল্যান্ডের অন্যতম সেনা নাথান আকে জানিয়েছেন, নেদারল্যান্ড নাকি মেসিকে নিয়ে কোনও অতিরিক্ত পরিকল্পনাই করেনি! সেটাও কি সম্ভব? তিনি বলছেন, "বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম একজন তারকা হলেন লিওনেল মেসি। তাকে আটকানোটা বেশ কষ্টসাধ্য একটি কাজ। তবে আমরা সে বিষয়ে এখনও কোনও আলোচনা করিনি। মেসি ছাড়াও দলে বেশ কিছু বিশ্বমানের খেলোয়াড় রয়েছে এবং আর্জেন্টিনার বিপক্ষে লড়াইটা আমাদের পক্ষে খুব একটা সহজ হবে না বলাই বাহুল্য।"
আকের মন্তব্য থেকে এমনটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তারা শুধুমাত্র মেসিকে নিয়ে চিন্তিত নন, বরং গোটা আর্জেন্টিনা দলেরই ভালো-খারাপ দিক পর্যালোচনা করছে নেদারল্যান্ড। নেদারল্যান্ডের পরিকল্পনা শুধুমাত্র মেসি নির্ভর নয়। বহুমুখী পরিকল্পনা করে নামতে পারে নেদারল্যান্ড। লুইস ফন হাল এতক্ষণে হয়তো একটি নিশ্চিদ্র রক্ষণের পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেছেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে তিনি বেশ সিদ্ধহস্ত। তার পাশাপাশি লিওনেল স্কালনীও বেশ দক্ষ একজন প্রশিক্ষক। সাইডলাইন থেকে এই দুইজনের বুদ্ধির লড়াই দেখা যাবে আজকের বিশ্বকাপের ময়দানে।
আর্জেন্টিনার সামনে ডাচ দুর্গ ভাঙার চ্যালেঞ্জ
তিন তিনবার ফাইনাল খেলার পরেও কখনও বিশ্বকাপ জেতা হয়নি নেদারল্যান্ডের। তাই এবারের বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডের লড়াই একেবারে মরিয়া। শেষ ষোলোর ম্যাচে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হতে চলেছে নেদারল্যান্ড। অপরদিকে অস্ট্রেলিয়াকে পরাস্ত করে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। তবে সে যাই হোক, দু'টি দলই একে অপরের থেকে সমীহ অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন- ফুটবলের ছন্দ নষ্ট করছে অফসাইড! প্রযুক্তির জাঁতাকলে কতটা ক্ষতি হচ্ছে খেলার
পরিকল্পনা প্রকাশ না করলেও নেদারল্যান্ডের রক্ষণভাগ যে এই মোকাবিলায় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য। নেদারল্যান্ডের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা মেসিকে নিয়ে ভীত নন। প্রস্তুত রয়েছেন নেদারল্যান্ডের গোলকিপারও। চারটি ম্যাচে প্রতিপক্ষের ১৭ টি শটের মাত্র ২টি জালে ঢুকতে দেওয়া ডাচ গোলকিপার আন্দ্রিয়াস নোপার্ট বলছেন, "মেসিও আমাদের মতোনই একজন খেলোয়াড়"। অন্যদিকে, মেসি খুব ভালো করেই জানেন, তাঁর প্রতিপক্ষরা মূলত তাঁর উপরে ফোকাস করেই দলের রক্ষণ সাজিয়ে থাকে। তাই বলতে গেলে মেসির সামনে এখন চ্যালেঞ্জ একটাই, ডাচ দুর্গে আঘাত হানা।
আর্জেন্টিনার সম্ভাবনা
এইবারের বিশ্বকাপে যে কয়টি দলের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত আর্জেন্টিনা খেলে এসেছে, সেগুলি ধারে-ভারে আর্জেন্টিনার মতো সুপার পাওয়ারের কাছাকাছিও যেতে পারে না। তবে নেদারল্যান্ড আগের দলগুলির মতো নয়। অন্যান্য সমস্ত দলের তুলনায় অনেক শক্ত প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ড। বিপরীতে নেদারল্যান্ডও কিন্তু এই বিশ্বকাপে তাদের সমকক্ষ প্রতিপক্ষ হিসেবে এই প্রথম আর্জেন্টিনাকে পাচ্ছে। তাই দু'টি দলের পক্ষেই জয় খুব একটা সহজ বিষয় নয়। আর্জেন্টিনার যেমন আক্রমণভাগ অনেক বেশি শক্তিশালী, তেমনই নেদারল্যান্ডের রক্ষণ ভীষণ শক্তিশালী। তাই লড়াই বুনো ওলের সঙ্গে বাঘা তেঁতুলের।
আর্জেন্টিনা যদি এই ম্যাচে জয়লাভ করে তাহলে তারা সরাসরি পৌঁছে যাবে সেমিফাইনালে। ব্রাজিল এবং ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচে যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার সঙ্গে মোকাবিলা হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের। তবে যদি আর্জেন্টিনা এই ম্যাচে পরাস্ত হয়, তাহলে ২০১৪ বিশ্বকাপে নিজেদের পরাজয়ের মধুর প্রতিশোধ নিতে পারবে নেদারল্যান্ডস। এবার ফল কোন দিকে গড়ায় সেটাই দেখার অপেক্ষায় আজ রাত জাগবে গোটা বিশ্ব।