পৃথিবী আবার শান্ত হবে! গাজায় যুদ্ধবিধ্বস্ত কিশোরীদের স্বপ্ন দেখায় বক্সিং

Palestinian Girls Boxing: ইজরায়েলি সেনা ভেঙে দিয়েছে তাঁদের প্রশিক্ষণের জায়গাটি। একদিন যে বক্সিং ক্লাব তাঁদের হাতে গ্লাভস গলিয়ে নিতে শিখিয়েছিল, শিখিয়েছিল উঠে দাঁড়ানোর মন্ত্র, সেই ক্লাব আজ ধ্বংসস্তূপ।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা। ইজরায়েলের হামলায় হামলায় শেষ হয়ে যাওয়া শহরটা আস্ত একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। চারদিকে যুদ্ধের চিহ্ন, ঘর বাড়ি ধর্মস্থান থেকে শুরু করে স্কুল, হাসপাতাল সব কিছু গুড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। গণকবরে উপচে পড়ছে মৃতদেহের ভিড়। যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরটাকে বাসিন্দাদের সঙ্গী বলতে এই নৈরাশ্যের পাহাড় আর মৃত্যুভয়। তবু তো মানুষ স্বপ্ন দেখে, সুযোগ পেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর। সমস্ত যুদ্ধবাজদের এক নিমেষে রুখে দিয়ে শান্তির পায়রা উড়িয়ে দেওয়ার। ঠিক যেমন ভাবে স্বপ্ন দেখেন ফিলিস্তিনি কোচ ওসামা আইয়ুব। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার শরণার্থী শিবিরে দাঁড়িয়েই ফিলিস্তিনি মেয়েদের বক্সিং শিখিয়ে যান তিনি।

ইজরায়েলি সেনা ভেঙে দিয়েছে তাঁদের প্রশিক্ষণের জায়গাটি। একদিন যে বক্সিং ক্লাব তাঁদের হাতে গ্লাভস গলিয়ে নিতে শিখিয়েছিল, শিখিয়েছিল উঠে দাঁড়ানোর মন্ত্র, বন্ধুত্ব করতে শিখিয়েছিল, সেই ক্লাব আজ ধ্বংসস্তূপ। কিন্তু সেই ক্লাবে একদিন যে হার না মানার শিক্ষা পেয়েছিল খুদে খুদে মেয়েরা, সেই মনোবলকে সম্বল করেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। গাজায় কোনও রকম খেলাধুলোর সুযোগসুবিধা বা সরঞ্জামই বেঁচে নেই ইজরায়েলি আগ্রাসনের মুখে। তাতে কী? মাথার উপর দিগন্ত বিস্তৃক আকাশ রয়েছে, পায়ের তলায় রয়েছে মাটি। সেইটুকুকে সম্বল করেই শরণার্থী শিবিরে জোরদার প্রশিক্ষণ চালিয়ে যান ওসামা। না, সুরক্ষার সরঞ্জাম নেই। বক্সিংয়ের রি বা পাঞ্চ ব্যাগ কোনওটাই নেই। সেসব ছাড়াই অভ্যাসের লড়াই লড়ে যান বক্সিং যোদ্ধারা।

আরও পড়ুন: গাজার শরণার্থী শিবিরে ভয়ঙ্কর হামলা! ফের নিরপরাধ মানুষের রক্তে ভিজল নেতানিয়াহুর হাত

প্রথম প্রথম যুদ্ধের ভয় কাটাতে সময় লেগেছিল ওসামারও। তার পর বক্সিংকে কেন্দ্র করেই হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে আসতে থাকে। ফের রাস্তায় বেরনো শুরু করেন তাঁরা। কোনও অংশেই যে কম যান না তাঁরাও, তা যেন বুঝিয়ে দিচ্ছিল ওই বক্সিংয়ের গ্লাভস দু'টোই। এখন ওসামার প্রশিক্ষণ শিবিরে চোখ রাখলেই দেখা যায়, কিশোরীদের দল খালি হাতে ঘুষি মারছে হাওয়ায়। কখনও আবার কাল্পনিক প্রত্যাঘাত এড়াতে সরিয়ে নিচ্ছে মুখ। প্রতিটা পদক্ষেপ, সমস্ত কৌশল দ্রোণাচার্যের মতোই শিখিয়ে যাচ্ছেন ওসামা।

 

একদিন যে বক্সিং ওইসব কিশোরীদের স্বপ্ন দেখিয়েছিল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার, সেই বক্সিংয়ের হাত ধরেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে গাজার ওই সব মেয়েরা। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে লাগাতার যুদ্ধ চলছে গাজায়। ইজরায়েলের একের পর এক হামলায় ছাড়খার হয়ে গিয়েছে গোটা শহর। সেই যুদ্ধ ভিতর থেকে নিষ্প্রভ করে দিয়েছিল এই সব খুদে বক্সারদের। সেই বক্সিংই যে তাঁদের পুরনো আমিকে ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁদের কাছে। আর সেটাই বড় তৃপ্তি দেয় কোচ ওসামাকে।

গাজা যেন এখন আস্ত একটা বধ্যভূমি। গাজাবাসীর জন্য যেখানে বেঁচে থাকাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ, খেলাধুলার স্বপ্ন সেখানে বিলাসিতা। অথচ এই খেলাই তো মানুষকে জোট বাঁধতে শেখায়, একসঙ্গে লড়ে যেতে শেখায়। কিন্তু সেখানে এখন খেলাধুলার আয়োজন করাও খুব ঝুঁকির কাজ। গত মঙ্গলবারই ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন আঘাত হেনেছিল ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র। অন্তত ২৯ জনের মৃত্যু হয় সেই ঘটনায়।

আরও পড়ুন:পাঁচ মাসে ১৭ হাজার মৃতদেহ দাফন! গাজার মৃত্যুমিছিল ঘুমোতে দেয় না বৃদ্ধ জাফরকে

গাজায় এখন ৯০ শতাংশ মানুষই বাস্তুচ্যুত। কোনও রকমে শরণার্থী শিবিরে পশুর মতো দিন কাটছে তাঁদের। তার উপর দেশে দুর্ভীক্ষের পরিস্থিতি। নেই চিকিৎসার সুযোগ। রোজ রোজ মানুষ মরে যাচ্ছে। তা-ও মানুষের স্বপ্ন মরে না। বেঁচে যাওয়া প্রতিটি মানুষ প্রায় প্রতিটি মুহূর্তে স্বপ্ন দেখে একটা যুদ্ধহীন অশান্তিহীন নতুন দিনের। আর সেই নতুন দিনের সূর্য আনার পথে ছোট ছোট মেয়েদের কয়েক পা এগিয়ে দেন ওসামা আইয়ুব। বক্সিংয়ের হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে যুদ্ধক্লান্ত এক দল ফিলিস্তিনি কিশোরী।

More Articles