'ছোটো' টিমের কাছে হেরে ভূত মেসির আর্জেন্টিনা! এই বিশ্বকাপেও ট্র্যাজিক পরিণতি?
Argentina vs Saudi Arabia: বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই অপেক্ষাকৃত অনেক সহজ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হারতে হলো লাতিন আমেরিকান পাওয়ারহাউজ আর্জেন্টিনাকে।
সৌদি আরবের ফিফা র্যাঙ্কিং ৫১! জয়ের ধর্তব্যেই আসেনি এই নাম। অন্যদিকে কাতার বিশ্বকাপের পরে খেলাটা না ছাড়লেও এবারের বিশ্বকাপটা হতে চলেছে মেসির শেষ বিশ্বকাপ। খোদ মেসি নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন বিষয়টা। তাই বিশ্বকাপের দিনগুলো যত তাড়াতাড়ি শেষ হবে, ততই ফুরোবে ফুটবলের বিশ্বময়দানে ক্ষুদে জাদুকরের জাদু দেখানোর দিন। তাই এবছরের বিশ্বকাপে মেসির উচ্ছ্বাস স্বভাবতই অনুমেয়। সর্বকালের সেরা দল নিয়ে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু শুরুটা যেমন চেয়েছিলেন, তেমনটা হল না। টানা ৩ বছর কোনও ম্যাচ হারেনি লিওনেল স্কালোনির দল। কিন্তু, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই অপেক্ষাকৃত অনেক সহজ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হারতে হলো লাতিন আমেরিকান পাওয়ারহাউজ আর্জেন্টিনাকে। মেসির পেনাল্টি থেকে করা স্ট্রেট শট হলো ব্যর্থ।
লজ্জার হার আর্জেন্টিনার
এবছরের বিশ্বকাপটা মেসির জন্য খুবই 'স্পেশাল'। গত বছরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জিতে ২৮ বছরের শিরোপার খরা কাটিয়েছিল দলটি। কোপা আমেরিকার সেই টুর্নামেন্ট মেসির জন্যেও ছিল বেশ স্বস্তির। ফুটবলের রাজপুত্রের পরেই আর্জেন্টিনা মানে যার নাম, তার হাতে এত দিন ছিলনা দেশের জন্য কোনও শিরোপা। তাই কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলকে হারানোর থেকেও বড় বিষয় ছিল, জাতীয় দলের হয়ে ট্রফি না জেতার অপবাদ যে ঘুচে গিয়েছিল সেবারই।
আরও পড়ুন- সম্প্রচারে তুমুল বেনিয়ম! ফুটবল বিশ্বকাপের শুরুতেই কেন আশাহত ভারতীয় দর্শকরা
তাই সেবারের বিশ্বকাপে ফাইনালে জয়ের পরে মারাকানার মাটিতে মেসির আনন্দাশ্রু বাঁধ মানেনি। কিন্তু, এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে যেখানে সবাই মনে করেছিল আর্জেন্টিনা এগিয়ে যাবে অনেকটাই, সেরকমটা ঠিক হলো না। মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় মেসি পেনাল্টিতে আর্জেন্টিনা এগিয়ে গেলেও, সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি । যদিও ম্যাচের মাত্র দু' মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা। মার্টিনেজের ব্যাক হিল ধরে বাঁ পায়ে শটে সোজা বল জালে জড়িয়ে দিতে পারতেন মেসি। কিন্তু, মেসি ম্যাজিকটা তখন দেখা যায়নি।
এরপর মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় ভার প্রযুক্তির মাধ্যমে পেনাল্টি পেয়ে সৌদি আরবের গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে খেলার ব্যবধান বাড়িয়ে দেন সেই লিওনেল মেসি। ২২ মিনিটের মাথায় আরও একবার বল জালে জড়ান মেসি। কিন্তু সেই সময় অফসাইডের ফাঁদে পড়ে যান তিনি। আসলে যখন মেসির উদ্দেশ্যে বল ভাসানো হয়েছিল, সেই সময় তিনি অল্পের জন্য অফসাইড হয়ে যান। তাই, সেই গোল বাতিল করেন লাইনস ম্যান এবং রেফারি।
আরও পড়ুন- এই বিশ্বকাপটা মেসির চাই-ই, কিন্তু…
মাত্র পাঁচ মিনিটের মাথায় আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এবার গোল করেছিলেন লাউতারো মার্টিনেজ। কিন্তু সেবারেও ভার প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখা যায় তিনি অফসাইড। দু'বার অফ সাইডের ফাঁদে পড়ায় অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। তাই এবার গা-জোয়ারি ফুটবল খেলতে শুরু করে সৌদি আরব। লিওনেল মেসিকে সরাসরি মার্কিং করে তাঁর পায়ে বল আসতে দিচ্ছিলেনই না সৌদি আরবের খেলোয়াড়রা। তাই বারবার জায়গা বদল করে খেলতে হয়েছিল মেসিকে। সেটা আর কতক্ষণ!
৩৪ মিনিটের মাথায় আরও একবার বল জালে জড়ান মার্টিনেজ, কিন্তু সে বারের গোলও বাতিল হলো সেই অফসাইডের সমস্যায় পড়ে। তারপর থেকেই আর্জেন্টিনা ডিফেন্স একেবারে খেই হারিয়ে ফেলল। আর সেই সুযোগ নিতে ছাড়লো না সৌদি আরব। প্রথমার্ধে আর কোনও গোল না হলেও, দ্বিতীয়ার্ধ ছিল চরম নাটকীয়তায় ভরা।
আর্জেন্টিনার রক্ষণের ভুলে ৪৮ মিনিটের মাথায় সমতা ফেরান সালে আল শাহেরি। আর এই ঘটনার ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায় আবারও পিছিয়ে পড়ল আর্জেন্টিনা। বক্সের বাইরে বল পেয়ে ডান পায়ের শটে গোল করলেন সালেম আলদাওশারি। ১-২ গোলে পিছিয়ে পড়লেন মেসিরা। ২-১ গোলে এগিয়ে গিয়ে আরও বেশি জোনাল মার্কিং ফুটবল খেলতে শুরু করলেন সৌদি আরবের ডিফেন্ডাররা। ফলে সৌদি আরবের গোলের দিকে বল আসা তো দূরের কথা, ঠিকঠাক পাস পর্যন্ত দিতে পারলেন না আর্জেন্টিনার তাবড় তাবড় খেলোয়াড়রা। তাই মেসি ম্যাজিক দেখা গেলেও হার মানতে হলো আর্জেন্টিনাকে।