বন্যা বিপর্যস্ত সিকিমের পাশে ভারতীয় সেনা! মাত্র ৭২ ঘণ্টায় বেঁধে দিল ৭০ ফুট লম্বা সেতু

Indian Army: কিছুদিন ধরেই সিকিম এলাকায় হড়পা বান নেমেছে। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে তিস্তা। বন্যার কারণে বহু এলাকা একেবাারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সেখানে আটকা পড়েছেন মানুষ।

মানুষ চাইলে কী না পারে! পাটিগণিতের সব অঙ্ক মিথ্যে করে মাত্র বাহাত্তর ঘণ্টায় বেঁধে ফেলতে পারে পেল্লাই সেতু। সীতার কাছে পৌঁছনোর জন্য সমুদ্রে সেতুবন্ধন করেছিলেন রামচন্দ্র। কিন্তু এ গল্প মহাকাব্যের নয়। বরং এই গল্প রক্তমাংসের একদল মানুষের, যাঁরা বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন মানুষকে বাঁচাতে। সমস্ত বিপর্যয়ের মুখে দুয়ো দিয়ে বেঁধে ফেলেন সেতু, আর তা-ও মাত্র ৭২ ঘণ্টায়।

কিছুদিন ধরেই সিকিম এলাকায় হড়পা বান নেমেছে। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে তিস্তা। বন্যার কারণে বহু এলাকা একেবাারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সেখানে আটকা পড়েছেন মানুষ। অবিরাম বৃষ্টি, তার মধ্যে উদ্ধারকাজ চালানো সহজ কাজ নয়। তার উপর ধস নেমে জল বেড়ে বহু সড়ক যোগাযোগই বিচ্ছিন্ন। এই পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত মানুষকে উদ্ধারে নামলেন ত্রিশক্তি কর্পসের সেনা। কিন্তু উদ্ধার করতে লাগে রাস্তা। প্রয়োজন সেতুর। কিন্তু সেতু কি আর চাইলেই হয় নাকি!

আরও পড়ুন: সেতুর পর সেতু, বাড়িঘর ভাসিয়েও ফুঁসছে তিস্তা! কোন ভুলের মাশুল দিচ্ছে সিকিম?

তবে ক্রিশক্তি কর্পসের সেনা ইঞ্জিনিয়ারেরা প্রমাণ করে দিলেন, চাইলেই হয়। গ্যাংটকের ডিকচু-সাঙ্রলাং রাস্তায় তাঁরা হাত দিলেন ৭০ ফুট লম্বা ব্রেইলি ব্রিজ গড়ার কাজে। যেখানে একেকটা সেতু বানাতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর লেগে যায়, সেখানে মাত্র ৭২ ঘণ্টায় অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন তাঁরা। সঙ্গে হাত লাগাল বিআরও ও স্থানীয় প্রশাসন। আকাশ ভেঙে পড়ছে বৃষ্টিতে। এমন দুর্গম আবহাওয়ায় কাজ করা আরও কঠিন। কিন্তু 'মানুষ বড় কাঁদছে'। তাই তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টার ত্রুটি রাখলেন না তাঁরা।

 

পিআরও ডিফেন্স, গুয়াহাটির তরফে জানানো হয়েছে, ত্রিশক্তি কর্পসের ইঞ্জিনিয়ারেরা সেতু গড়ার কাজে হাত দিয়েছিলেন গত ২৩ জুন। তার পর সময় লেগেছে সর্বসাকুল্যে ৭২ ঘণ্টা। একটু একটু করে ওই ৭০ ফুট লম্বা বেইলি ব্রিজ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। যার মাধ্যমে মাঙ্গান জেলার বন্য়াদুর্গতদের কাছে গিয়েছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা। গত ১১ জুন থেকে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে সিকিম জুড়ে। জায়গায় জায়গায় নেমেছে ধ্বস। ভেঙে গিয়েছে একাধিক রাস্তা, সেতু। ডিকচু-সাঙ্কলাং-টুং, মাঙ্গান-সাঙ্কলাং, সিংথাম-রাংরাং এবং রংরাং-টুংয়ের মতো একাধিক জায়গা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বন্য়ার দাপটে।

আরও পড়ুন: বোমায় বিধ্বস্ত পা, নিজেই ছুরি দিয়ে কেটে বাদ দিলেন এই ভারতীয় সেনানায়ক

সেই বিপর্যয় থেকে মানুষকে বাঁচাতে প্রাণপন সব কিছু দিয়ে লড়াই করেছে এবং করছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক বার মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাঁরা। এর আগে সিকিমেই একটি ১৫০ ফুট লম্বা ঝুলন্ত সেতু রাতারাতি বানিয়ে দিয়েছিল ত্রিশক্তি কর্পস। মৃত্যুর মুখ থেকে জীবনের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছিল বিপর্যস্ত মানুষকে, মুখে ফুটিয়েছিল হাসি। ফের সেই কাজটাই আরও একবার করে দেখিয়ে দিল তারা। প্রমাণ করে দিল, মানুষ চাইলে তার দুঃসাধ্য কিচ্ছু নেই দুনিয়ায়।

More Articles