এআই দাপটে সবচেয়ে বিপদে সাংবাদিকরা? ভয়ঙ্কর তথ্য সমীক্ষায়...

Artificial Intelligence: লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক'স জার্নালিজম এআই ইনিশিয়েটিভের উপরে একটি সমীক্ষা করেছিল। যেখানে গত এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে অন্তত ৪৬টি দেশের শতাধিক সংবাদ সংস্থার উপরে এই সমীক্ষাটি করে। জরিপ চালানো হয় সেই...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আধুনিক পৃথিবীর পক্ষে তা আশীর্বাদ না অভিশাপ, এই সব নিয়ে তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। ২০২২ সাল ও প্রযুক্তির দুনিয়া, একই সঙ্গে দুটোকেই কাঁপিয়ে ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছিল চ্যাটজিপিটি। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল একগুচ্ছ সম্ভবনা ও ঝুঁকি। বিশেষজ্ঞেরা আশঙ্কা করেছিলেন, ভবিষ্যতে অসংখ্য চাকরি খেতে চলছে এইসব এআই চ্যাটবট। তবে সেই অসংখ্য চাকরির মধ্যে কি রয়েছে সাংবাদিকতার চাকরিও। শিক্ষক কিংবা ডাক্তারদের মতোই সমাজের প্রতি একধরনের দায়িত্ব রয়েছে এই পেশাটিরও। তবে তার সবচেয়ে বড় দায়বদ্ধতা বোধহয় সত্যের কাছে। যদিও বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকালে সে নিয়ে সন্দেহ হয় বৈকি! সে যাই হোক, সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যেমন অনেক দরজা খুলে দিচ্ছে, তেমন ভাবেই বাড়াচ্ছে ঝুঁকিও।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক'স জার্নালিজম এআই ইনিশিয়েটিভের উপরে একটি সমীক্ষা করেছিল। যেখানে গত এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে অন্তত ৪৬টি দেশের শতাধিক সংবাদ সংস্থার উপরে এই সমীক্ষাটি করে। রীতিমতো জরিপ চালানো হয় সেই সব সংবাদসংস্থা ও তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের উপরে। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সবসময়েই একটা নৈতিক বোধের ব্যাপার থাকে। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেই নৈতিকতার দিকটায় নজর দিতে পারবে তো আদৌ! সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৬০ শতাংশই সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন। যে কোনও তথ্যের সত্য হয়ে ওঠার পিছনে যে নির্ভুলতা, সততা এবং স্বচ্ছতার প্রয়োজন, তা কি এআই দিতে পারবে কখনও? নাহ, সে ব্যপারে নিঃসংশয় হতে পারেনি বড় অংশই।

আরও পড়ুন: সুতোয় ঝুলছে চাকরি, ChatGPT-এআইয়ের ধাক্কায় কাজ হারিয়ে পথে বসতে পারেন আপনিও!

সত্যি কথা বলতে, সাংবাদিকতার আদল বদলাচ্ছে ক্রমশ। বদলাচ্ছে নীতিবোধও। কিছুদিন আগেই দেশকে উত্তাল হয়ে উঠতে দেখেছি এক পরিচিত সাংবাদিক-সঞ্চালকের বিভ্রান্তকর খবর করাকে কেন্দ্র করে। এমনকী তার নামে দায়ের হয় এফআইআর। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এদিকে, সাংবাদিকতার প্রধান শর্তই নাকি নিরপেক্ষতা। আর সেই প্রাথমিক শর্তই ধাক্কা খাচ্ছে আজকের দিনে। কোনও না কোনও রাজনৈতিক দল বা তাদের বিশ্বাসের ধামাধারী হয়ে উঠছে সংবাদমাধ্যমগুলি। এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই দেশ জুড়ে। এমনকী বিরোধী-জোট ইন্ডিয়া সাম্প্রতিক সময়ে বয়কট করেছে অন্তত চোদ্দ জন সংবাদ-সঞ্চালককে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই সব সঞ্চালকের অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি পাঠাবে না বিরোধী জোট ইন্ডিয়া। সেই তালিকায় রয়েছে সুধীর চৌধুরী, অর্ণব গোস্বামী-সহ একাধিক হোমড়া-চোমড়া সাংবাদিক। সেই ঘটনা তো বটেই, গত এক বছরে একাধিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট ও ছবি বুঝিয়ে দিয়েছে, সাংবাদিকতার ধরন অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে আজকের বিশ্বাসে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দলদাস হওয়ার প্রবণতা।

Artificial Intelligence "Exciting, Scary" Threat And Opportunity For Journalists say Study

এই ধরনের প্রচেষ্টা সাংবাদিকতার ইতিহাসকে তো কালিমালিপ্ত করছেই। তার পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সংবাদমাধ্যমের প্রযুক্তিগত দিকেও বহু বদল এনেছে। যার মধ্যে অনেকগুলি সম্ভাব্য ভয় খুঁজে পেয়েছেন সমীক্ষাকারীরা। তবে পুরোটাই যে ভয়, তেমনটা নয়। সাংবাদিকতায় এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একদিক থেকে দারুণ কাজেরও হয়ে উঠতে পারে। তবে তার জন্য জানতে হবে ব্যবহার। আদতে এআই-কে কাজের বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার না-করে একে কাজের যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে শেখা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, বহু কাজকেই অনেকাংশে সহজ করে দিচ্ছে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যেমন ধরুন, ইন্টারভিউয়ের ট্রান্সক্রিপশন করবেন, এআইয়ের মাধ্যমে খুব সহজে তা করে ফেলা সম্ভব। সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত বহু কর্মীই এই সুবিধাটিকে খুবই কাজের বলে মনে করছেন। তবে এআই জেনারেটেড লেখা যে নির্ভুল নয়, তা তো এতদিনে সকলেরই জানা হয়ে গিয়েছে। ফলে এআই ব্যবহার করলেও সেই ভুল শনাক্ত করার জন্য মানুষের প্রয়োজন থাকবেই।

Artificial Intelligence "Exciting, Scary" Threat And Opportunity For Journalists say Study

এআই চ্যাটবটগুলিকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যেই গেল গেল রব ওঠে। অনেকেই মনে করেন, এর ফলে সৃষ্টিশীলতা কমবে। ভাবনা চিন্তার পরিসর কমবে। এমনকী সংবাদমাধ্যমে খবর সম্পাদনার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নিতে পারে এআই। তাতে সম্পাদকদের চাকরি লাটে উঠবে। কিন্তু ব্যাপারটা এতখানিও সহজ নয়। এই সমস্ত চ্যাটবটগুলির সিংহভাগ কাজ করে ইংরেজি ভাষায়। আঞ্চলিক কয়েকটি ভাষাতেও তা ব্যবহার সম্ভব, তবে সেখান থেকে উৎপাদিত কাজের মান খুবই নিচের দিকে। এশিয়ার বেশিরভাগ ভাষাতেই খুব একটা স্বচ্ছ্বল নয় চ্যাটজিপিটি বা বোর্ডের মতো চ্যাটবটগুলি। আর এই সব ভাষাতে দক্ষ হতে গেলে এআই সিস্টেমগুলির অনেকটা পথ হাঁটা বাকি। ফলে বাংলা বা অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার সংংবাদ মাধ্যমে এআইয়ের বড় হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে ক্ষীণ।

আরও পড়ুন: জনপ্রিয়তায় ছেদ! ইটালি-সহ একাধিক দেশে কেন নিষিদ্ধ চ্যাটজিপিটি?

তবে এইআই টুলকে ব্যবহার করে সংবাদমাধ্যমের কাজে গতি যে আনা সম্ভব, সে কথা কিন্তু মিথ্যে নয়। ফলে সবার আগে আমাদের জানতে হবে, এআইয়ের ব্যবহার। কারণ গবেষণার কাজে কিন্তু আমাদের দুর্দান্ত সঙ্গী হতেই পারে এই ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আসলে যন্ত্রের কাজ আমাদের কাজকে আরও সহজ করে তোলা। মানুষের বিকল্প হয়ে ওঠা নয়। ফলে যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণের জন্য মানুষের প্রয়োজন বরাবর ছিল, আছে এবং থাকবে। ফলে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এআই যে একাধিক মানবিক চাকরি খাওয়ার জন্য হাঁ করে বসে আছে, সেই ভাবনা ভুল, তেমনটাই মনে করছে সমীক্ষা। তবে তা হয়ে উঠতেই পারে সাংবাদিকদের বন্ধু, দারুণ কাজের একটা জিনিস চাইলেই।

More Articles