কোটি টাকার সম্পত্তি, লাখ টাকার বন্দুক! আদিত্যনাথের সম্পদের বিবরণ চমকে দেবে

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বিধানসভা ভোটে গোরখপুর আসনের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা করেছেন যোগী আদিত্যনাথ। সেইদিনই সকালে গোরখনাথ মন্দিরে পূজা সেরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরে অমিত শাহ এবং তাঁর নেতৃত্বে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে একটি মিছিলের আয়োজন করা হয়। মিছিলটি কালেক্টোরেট অফিস পর্যন্ত যায়। প্রসঙ্গত, এর আগে কখনও বিধানসভা নির্বাচনে লড়েননি। যদিও লোকসভা নির্বাচনে পরপর পাঁচবার গোরখপুর থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছেন এবং জিতেছেন তিনি। তবে গোরখপুর থেকে নির্বাচনে লড়া এই প্রথম তাঁর। সমগ্র নির্বাচন হচ্ছে বেশ কয়েক দফায়। প্রথম দুই দফার ভোট হয়ে গিয়েছে। ১৪, ২০, ২৩, ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং ৩ ও ৭ মার্চ--আরো ছটি দফা বাকি। উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ পর্বে গোরখপুর সিটটিতে ভোট হবে মার্চের ৩ তারিখে।

ইতিমধ্যেই নিজের সম্পত্তির হিসেব দিয়েছেন আদিত্যনাথ। হলফনামা অনুযায়ী নগদ ও ব্যাঙ্কের জমা খাতা মিলিয়ে তা ১ কোটি ৫৪ লক্ষ ৯৪ হাজার ৫৪ টাকা।

সেখানেই বলা হয়েছে যোগীর একটি সোনার বালি রয়েছে। ২০ গ্রাম ওজনের এই বালির মূল্য ৪৯ হাজার টাকা। এছাড়া একটি রুদ্রাক্ষের একটি সোনার সুতোয় গাঁথা মালা রয়েছে। এটির ওজন দশ গ্রাম। মূল্য ২০ হাজার টাকা। যোগীর একটি স্যামসাঙের স্মার্টফোনও রয়েছে, যার মূল্য ১২ হাজার টাকা।

হলফনামায় আরও বলা হয়েছে যোগী আদিত্যনাথের এক লক্ষ টাকা দামের একটি রিভলবার রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে একটি আশি হাজার টাকা দামের রাইফেল। নিজের নামে তাঁর কোনও গাড়ি নেই বলেই জানিয়েছেন তিনি।

গত পাঁচ বছরের আয়ের হিসাব দেওয়ার প্রসঙ্গে সেই হলফনামায় যোগী জানিয়েছেন, ২০২০-২১ সালে তার রোজগার ১৩ লক্ষ ২০ হাজার ৬৫৩ টাকা, ২০১৯-২০ সালে তা ছিল ১৫ লক্ষ ৬৮ হাজার ৭৯৯ টাকা, ২০১৮-১৯ সালে ১৮ লক্ষ ২৭ হাজার ৬৩৯ টাকা, ২০১৭-১৮ সালে ১৪ লক্ষ ৩৮ হাজার ৬৭০ টাকা এবং ২০১৬-১৭ সালের নিরিখে তা ছিল ৮ লক্ষ ৪০ হাজার ৯৯৮ টাকা।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর কোনো কৃষিজমি বা অন্যান্য কাজের জন্য নির্ধারিত জমিসম্পত্তি নেই বলেই জানানো হয়েছে এই হলফনামায়।

মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার পর যোগী আদিত্যনাথ মীরাট, গাজিয়াবাদ, হাপুর ও নয়ডার ভোটারদের উদ্দেশ্যে একটি ভার্চুয়াল ‘জন চৌপল’-এ ভাষণ দেন। এই সভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। ভাষণে যোগী জানান বিজেপি নির্বাচন লড়ছে জাতীয়তাবাদের জন্য, বিকাশের জন্য এবং সুষ্ঠু সরকার পরিচালনার জন্য। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখ বিজেপি তাদের ইস্তেহার ঘোষণা করবে। “আমরা ২১২ টি কথা দিয়েছিলাম ২০১৭ তে। গত পাঁচ বছরে আমারা মহিলা এবং কৃষকদের নিরাপত্তা ও আত্মশক্তি নির্ভর করতে পেরেছি। বেকারদের, গরীবদের চাকরি দিতে পেরেছি। আজ মানুষ বিজেপিকে আশীর্বাদ করছে।” জানান যোগী। তিনি আরও বলেন, “এর আগে উত্তর প্রদেশের প্রশাসন গুণ্ডা ও মাফিয়ারাজের অঙ্গুলি হেলনে উঠত বসত। আজ আর সে অবস্থা নেই। মহিলারা নিরাপদভাবে যাতায়াত করতে পারেন। বিনিয়োগ বাড়ছে। মাফিয়াদের চক্করে দেশত্যাগী ব্যবসায়ী ও যুবকদের সংখ্যা কমে গিয়েছে অনেকটাই। বরং এখন মাফিয়া আর দুষ্কৃতীরা পালাতে পথ পাচ্ছে না।”

২০১৭-র রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩১২ টি আসনে বিপুলভাবে জিতেছিল। ৪০৩ টি আসনের বিধানসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল মোট ভোটের ৩৯.৬৭ শতাংশ লব্ধ ভোটের নিরিখে। সমাজবাদী পার্টি পেয়েছিল ৪৭টি আসন, বি এস পি পেয়েছিল ১৯টি আসন, তবে কংগ্রেস ৭ টি আসনের বেশি পায়নি। সমাজবাদী পার্টি এইবার এই আসনে যোগীর বিরুদ্ধে শুভাবতী শুক্লাকে দাঁড় করিয়েছে। রাইট টু রিকল পার্টির তরফ থেকে দাঁড়িয়েছেন রাম দাবন মোরিয়া, এ এস পির তরফ থেকে চন্দ্রশেখর আজাদও রয়েছেন।

যদিও রাধামোহন দাসকে নিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে ইদানিং যোগীর সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয় বলে মনে করছেন অনেকেই। গোরখপুরের ব্রাহ্মণদের ভোটে এতে প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়াও হাথরসের ঘটনাসহ তফশিলি নারীদের নির্যাতনের ঘটনায় ইউ পি দেশের অন্যান্য রাজ্য গুলির মধ্যে এগিয়ে রয়েছে। ন্যশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্ট অনুসারে রেপকেসেও ভারতে সর্বোচ্চর রেকর্ড করেছে উত্তরপ্রদেশ। ফলত নারীদের নিরাপত্তা সেখানে ঠিক কতটা সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কৃষি বিল নিয়ে আন্দোলনও প্রভাব ফেলবে নির্বাচনে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রয়েছে চন্দ্রশেখরের মতো তফশিলি নেতাও। যোগীর কোটি টাকার সম্পত্তির বিপরীতে তার যাবতীয় সম্পত্তি মাত্র আড়াই লাখের কাছাকাছি, নগদ মাত্র আঠের হাজারটি টাকা। এ নজিরও রয়েছে। কাজেই গতবার রাধামোহন দাসের মাধ্যমে যতটা সহজে জিতেছিল বিজেপি, এইবার তার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করা হচ্ছে।

এমনকী কর্ণাটকের হিজাব বিতর্ককেও যোগেন্দ্র যাদব নির্বাচনকে সামনে রেখেই বিজেপির চাল বলে ব্যাখ্যা করেছেন আজ। তাঁর মতে, বেকার সমস্যা, কৃষি সমস্যা, নারীদের সমস্যা প্রভৃতি যাবতীয় সমস্যার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়ার জন্যই হিন্দু-মুসলমান বিতর্ককে প্রতিবারই ব্যবহার করে নিজেপি। এও তার ব্যতিক্রম নয়।

More Articles