যাদবপুরে সততা বনাম দুর্নীতি! সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে কতটা শক্তিশালী সৃজন ভট্টাচার্য?
Srijan Bhattacharyya: যাদবপুরে এবার সৃজন বনাম সায়নী, সততা বনাম দুর্নীতির লড়াই।
জটিল আসন। যাদবপুর আসনে একসময় জিতেছিলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন অবশ্য তিনি কংগ্রেসে। এই আসনে একাধিকবার জিতেছেন বাম নেতারা, তবে ২০১৯ সালের পর থেকে একচেটিয়াভাবে এই আসনে জিতছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০০৯ সালে জিতেছিলেন কবীর সুমন, তারপর সুগত বসু, তারপর মিমি চক্রবর্তী। তৃণমূলের সাংসদ মিমি অবশ্য পদত্যাগ করেছেন। এবার তৃণমূলের প্রার্থী সায়নী ঘোষ। আর তাঁর বিরুদ্ধে যাদবপুর কেন্দ্রে এবার বামেদের মুখ প্রাক্তন ছাত্রনেতা সৃজন ভট্টাচার্য। দীর্ঘদিন ধরে এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদকের পদ সামলে আসা সৃজন এর আগে, বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন সিঙ্গুর থেকে। বামেদের নতুন মুখ যারা ছিলেন, লোকসভা নির্বাচনেও তাঁদের অনেকের উপরই আস্থা রাখছে সিপিআইএম। অর্থাৎ যাদবপুরে এবার সৃজন বনাম সায়নী, সততা বনাম দুর্নীতির লড়াই।
১৯৭৭ সালে যাদবপুর আসনে জিতেছিলেন বামনেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসন ছিনিয়ে নিলেও ১৯৮৯ সালে আবার এই আসনে জেতেন বাম প্রার্থী মালিনী ভট্টাচার্য। তারপর তিন দফায় তৃণমূলের হয়ে জিতেছিলেন কৃষ্ণা বসু। ২০০৪ সালে তাঁর থেকে এই আসন ছিনিয়ে নেন সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। কিন্তু ২০০৯ সালে এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হন কবীর সুমন। তারপর থেকে তৃণমূলকে সরাতে পারেননি কেউ। নতুন প্রার্থী মিমি চক্রবর্তীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের মতো দুঁদে নেতা। এবার যাদবপুরের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ আসনে বামেদের ভরসা 'ঘরের ছেলে' সৃজন ভট্টাচার্য। ২০১৯ সালের লোকসভায় যাদবপুর আসনে তৃতীয় হয়েছিল সিপিআইএম। বিকাশ রঞ্জন ভট্টচার্য পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ২ হাজার ২৬৪ টি ভোট। মিমি পেয়েছিলেন ৬ লক্ষ ৮৮ হাজার ৪৭২ টি ভোট। ২০১৪ আর ২০০৯ সালে এই আসনে দ্বিতীয় হয়েছিল বামেরা। ২০১৪ সালে বাম নেতা ডঃ সুজন চক্রবর্তী পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪১ টি ভোট। আর ২০০৯ সালে সুজন পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ ভোট।
আরও পড়ুন- ভোটে হেরেও ছিলেন মমতার বিশ্বস্ত! অভিনয় থেকে দুর্নীতিতে যেভাবে নাম জড়াল সায়নী ঘোষের
বিজেপির হয়ে এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন ডাঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। বিজেপির বুদ্ধিজীবী মহলে অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় অত্যন্ত পরিচিত নাম। আরএসএসের ভরসার পাত্র তিনি। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অনির্বাণ নিজে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও ছিলেন। যাদবপুরের ছাত্র সৃজনও। যাদবপুর আসনের মধ্যে পড়ে বারুইপুর পূর্ব ও পশ্চিম, সোনারপুর উত্তর ও দক্ষিণ, যাদবপুর, টালিগঞ্জ আর ভাঙড়। এর মধ্যে যাদবপুর আর টালিগঞ্জে বামেদের কিঞ্চিৎ দখল আছে। ভাঙড়ে দাপট আইএসএফের। কোনও জোটেই এবার যায়নি সিপিআইএম। এমন অবস্থায় ভাঙড়ে কতখানি সুবিধা করতে পারবেন সৃজন, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তবে এই অঞ্চলে মুসলিম ভোটের পরিমাণ নেহাত কম নয়। সায়নী তৃণমূলের হয়ে সেই ভোট ব্যবহার করতে পারেন ঠিকই কিন্তু নিঃসন্দেহে তাতে তাঁর মাথায় ঝুলে থাকা দুর্নীতির খাঁড়া সরে যায় না।
আরও পড়ুন- টিকিট পাননি, পাঁচ বছরে যাদবপুরের জন্য কী করলেন মিমি চক্রবর্তী?
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম রয়েছে তাঁর। শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছিল তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের। কুন্তলের সঙ্গে সায়নীর যোগাযোগ ও প্রতিপত্তি ক্রমেই বাড়তে থাকার বিষয়টি তাই ইডির রাডারে আসে। ইডির দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন সায়নী। আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে গত বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন সায়নী। হেরে যান সামান্য ভোটে। যুব সমাজে তাঁর দাপট রয়েছে, তাঁর গ্রহণযোগ্যতাও আছে। কিন্তু যাদবপুর কেন্দ্রে আছে কি? যাদবপুর অঞ্চলে বেড়ে ওঠা সৃজন ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংগঠন সামলেছেন। ফলে ছাত্রযুবদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা নেহাত কম নয়। এবার প্রশ্ন দুর্নীতি না সততার লড়াই, কাজের দাবিতে লড়াই- যাদবপুর আসনে বামেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারক হবে কোন ইস্যু?