করমণ্ডলের পর ফের বড়সড় রেলদুর্ঘটনা বিহারে! ঠিক কত হাজার মরলে টনক নড়বে কেন্দ্রের?
Bihar Train Derailment: দুর্ঘটনাগ্রস্তদের মধ্যে এ রাজ্যের বাসিন্দাদের থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নিহতদের পরিবার প্রতি ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। ওড়িশার বালাসোরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল অন্তত ৩০০ জনের। ভয়াবহ সেই ঘটনার মাস কয়েক কাটতে না কাটতে ফের বড়সড় ট্রেন দুর্ঘটনার মুখে ভারত। এবার বিহার। বুধবার মধ্য রাতে লাইনচ্যুত হয় নর্থ ইস্ট এক্সপ্রেসের অন্তত ২১টি কামরা।
দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের বক্সার জেলার রঘুনাথপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে। লাইনচ্যুত হয় ১২৫০৬ আনন্দ-বিহার কামাক্ষ্যা নর্থ ইস্ট এক্সপ্রেস। মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত পাঁচ। অন্তত ৭০ জন জখম। দিল্লির আনন্দ বিহার থেকে ২৩ বগির ওই ট্রেনটি বুধবার ছেড়েছিল ভোর ৭.৪০ নাগাদ। যাওয়ার কথা ছিল আসামের তিনসুকিয়া পর্যন্ত। রঘুনাথপুর রেলস্টেশনের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে রাত ৯.৫৩ নাগাদ।
যে সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে, তখন অনেকেই নৈশাহার সেরে শুয়ে পড়েছেন। সেসময় হঠাৎ করে লাইনচ্যূত হয়ে যায় ট্রেনটির প্রায় ২১টি বগি। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই জানিয়েছেন, হঠাৎই ভয়ঙ্কর শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা ট্রেন। ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায় ট্রেনটির বিভিন্ন অংশ থেকে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় এসি কোচগুলির। খবর পেয়েই দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিল দানাপুর ডিভিশনের একটি কুইক রেসপন্স দল। পাঠানো হয় অ্যাম্বুল্যান্সও। অন্ধকার হওয়ায় উদ্ধারকাজ চালানো আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। জখমদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় পাটনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, নালন্দা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং ইন্দিরা গান্ধী ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে। মৃতদের ইতিমধ্যেই শনাক্ত করা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: দামী টিকিট, রক্তঘাম করা টাকায় দেওয়া আয়কর; ভারতীয় রেলে কোথায় যাত্রীসুরক্ষা?
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি দুর্ঘটনার পূর্ণ তদন্তেরও আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী। ইতিমধ্যেই যাত্রীদের জন্য চালু করা হয়েছে একাধিক হেল্পলাইন নম্বরও। এই নর্থ ইস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাংলার উপর দিয়েও যায়। ফলে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের মধ্যে এ রাজ্যের বাসিন্দাদের থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নিহতদের পরিবার প্রতি ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
এই দুর্ঘটনার জেরে বাতিল হয়েছে একাধিক ট্রেন। ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে ২১টি ট্রেনের পথ। কাশি-পাটনা জনশতাব্দী এক্সপ্রেস (১৫১২৫), পটনা-কাশী জনশতাব্দী এক্সপ্রেস (১৫১২৬)-র মতো একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের কাছে যথাযথ সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আগেই দিয়েছিলেন বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। স্বাভাবিক ভাবেই বিহারের এই দুর্ঘটনায় ফের উস্কে উঠেছে মাস কয়েক আগের করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা। যেখানে কম করে হলেও প্রাণ গিয়েছিল ৩০০ যাত্রীর। বারবার বিতর্ক, এত কথাবার্তা, তা সত্ত্বেও কেন রোখা যাচ্ছে না এই রেল দুর্ঘটনার ইতিহাস। সেই প্রশ্নটা ফের ঘুরতে শুরু করেছে বাতাসে। এ নিয়ে রেলমন্ত্রক ও কেন্দ্র সরকারের গাফিলতির দিকেই আঙুল তুলেছেন একাংশ।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দিক থেকে সমস্ত আঙুল সরিয়ে দিতে বাংলার বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের অবশ্য দাবি, একটা আধটা অমন দুর্ঘটনা ঘটে বইকি। দিলীপবাবুর মতে, বেশ কয়েকটি পুরনো রেললাইন রয়েছে। সেখানেই বারবার দুর্ঘটনা। তাছাড়া দেশে লক্ষ লক্ষ ট্রেন চলে। তার মধ্যে একটা আধটা দুর্ঘটনা হতেই পারে।
তবে বালেশ্বরে করোমণ্ডল এক্সপ্রেসে যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই মাপের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে বিহারের এই ট্রেন দুর্ঘটনায়। বিশেষজ্ঞদের মত, এই দুর্ঘটনায় থেকে দু-তিনটি AC থ্রি টায়ার বগি উল্টে গিয়েছে বটে, তবে বাকি বগিগুলি অক্ষত থাকায় বড় মাপের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে। শুধুমাত্র ট্রেনটি লাইটচ্য়ূত হওয়ায় কিছুটা হলেও এ যাত্রায় রক্ষা পাওয়া গিয়েছে। তবে ট্রেনটি একেবারে স্বাভাবিক গতিতেই ছিল বলে দাবি করেছেন রেলকর্তারা।
আরও পড়ুন:বন্দে ভারতের স্লিপার কোচ কেমন দেখতে? ভারতে এমন চোখ ধাঁধানো ট্রেনও সম্ভব!
ঠিক কী কারণে এই দুর্ঘটনা, তা এখনও জানা যায়নি। ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে দুর্ঘটনার মাত্রা যাই হোক না, কেন, ঘনঘন রেলদুর্ঘটনার কারণটা আসলে কী, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে হইচই। এরই মধ্যে বন্দে ভারতের একাধিক রেক চালু করতে চলেছে কেন্দ্র সরকার। এদিকে দেশে ইতিমধ্যেই যেসব ট্রেন চলছে তার নিরাপত্তার দিকে নজর নেই কারওর। স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপারটি নিয়ে উঠেগিয়েছে বড়সড় প্রশ্ন। পুরনো লাইনের অজুহাত দিয়ে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা, তবু সেসব পুরনো লাইনের মেরামত হচ্ছে না কেন! সেই প্রশ্নটাও কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না একেবারেই।