এখনও নজর সুশান্ত মামলায়? কোন উত্তর খুঁজছে সিবিআই
Sushant Singh Rajput death case: সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে ডিলিট হওয়া সমস্ত চ্যাট, ই-মেইল এবং পোস্টের তথ্য চেয়ে আমেরিকার কাছে আবেদন সিবিআইয়ের।
অতিমারির দিনগুলোতে প্রতিদিন কোনও না কোনও মৃত্যু আমাদের নাড়া দিয়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে নেতা, মন্ত্রী, তারকা- অনেককেই হারিয়েছি আমরা। তবে অসময়ের মৃত্যু তো সবসময়েই কাঁপিয়ে দিয়ে যায়। তেমনই ছিল ২০২০ সালে তরুণ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের চলে যাওয়া। চলে যাওয়া নয়, বরং নিজেকে সরিয়ে নেওয়াই বলা চলে। সেই মৃত্যু নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। সুশান্তের আত্মহত্যা ঘিরে কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছিল বলিউড। থানা পুলিশ থেকে সিবিআই, সুশান্তের তৎকালীন প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আঙুল তোলা থেকে শুরু করে মাদক সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদে বারংবার বলিউডের তাবড় অভিনেতাদের তলব, এ সমস্ত কিছুই দেখা হয়ে গিয়েছে তদ্দিনে। কিন্তু শেষপর্যন্ত যা হয় তাই হয়েছে। সময়ের পলি জমেছে মানুষের মনে। আর কেসফাইলে ধুলো।
একের পর এক সিনেমায় সাফল্য, খেটে কাজ করা আর মিষ্টি একটা হাসিমুখ। ছোটপর্দা থেকে উঠে এসে খুব কম সময়েই বলিউডে জায়গা করে নিয়েছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। মহেন্দ্র সিং ধোনির আত্মজীবনীতে অভিনয় সেই জনপ্রিয়তাকে তুঙ্গে তুলেছিল। মহাকাশ দেখার শখ, ক্রিকেটের নেশা, সব মিলিয়ে সুশান্তকে একটু অন্যচোখেই দেখতে শুরু করেছিলেন ভক্তেরা। আর ঠিক সেসময়েই ইন্দ্রপতন। আসলে মৃত্য়ুর থেকেও বোধহয় আরও বেদনাদায়ক, সাফল্যের শীর্ষে থাকতে থাকতে মৃত্যু। দীর্ঘদিন ধরে অবসাদ, কাজ না-পাওয়া, বলিউডের নেপোটিজম প্রসঙ্গ থেকে মাদকের প্রভাব, নানা কথা, নানা অভিযোগ উঠে এসেছে বারবার। তবে সুশান্ত আত্মহত্যা রহস্যের কিনারা হয়নি আজও।
আরও শুনুন: সুশান্ত থেকে কে কে- আমাদের মৃত্যুশোক ভুলিয়ে দেয় মুহূর্তের প্রতিশোধ
এর মাঝখানে কেটে গিয়েছে তিন-তিনটে বছর। আর এতদিন বাদে ফের ধুলো ঝেড়ে সুশান্তের ফাইল তুলে এনেছে সিবিআই। আদৌ সুশান্তের মৃত্যু আত্মহত্যা না খুন, এ নিয়ে ধন্ধ কাটেনি আজও। এখনও পর্যন্ত কোনও অফিশিয়াল রিপোর্টে সুশান্তের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে সিলমোহর দেয়নি পুলিশ। সিবিআইয়ের তরফেও তেমন কোনও রিপোর্ট মেলেনি। ঘটনার পরেই সুশান্তের মোবাইল থেকে মেলা চ্যাট এবং কল রেকর্ড খতিয়ে দেখে সিবিআই। আর সেই বিশ্লেষণ এখনও শেষ হয়নি।
সুশান্ত মৃত্যু মামলায় যুক্তিগ্রাহ্য একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই সমস্ত টেকনিক্যাল তথ্যপ্রমাণ মার্কিন মুলুকে পাঠিয়েছে সিবিআই বিশ্লেষণের জন্য। সেখান থেকে রিপোর্ট পাওয়া গেলেই অনেক প্রশ্নেরই উত্তর পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২১ সালে ওই মামলার তদন্তে নেমে গুগল এবং ফেসবুকের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। এই দু'টি সংস্থারই সদর দফতর ক্যালিফর্নিয়ায়। সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে ডিলিট হওয়া সমস্ত চ্যাট, ই-মেইল এবং পোস্টের তথ্য চেয়ে টেক জায়েন্ট গুগল ও জুকেরবার্গের সংস্থা ফেসবুকের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন সিবিআই কর্তারা। মিউচুয়াল লিগাল অ্যাসিস্ট্যান্স চুক্তি (MLAT)-র আওতায় আভ্যন্তরীণ মামলার তদন্তে দু-দেশের তথ্যের সাহায্য নেওয়া যেতেই পারে। সেই চুক্তির জোরেই আমেরিকার দ্বারস্থ হয়েছে ভারত।
২০২০ সালের ১৪ জুন, আসলে ঠিক কী হয়েছিল? সত্যিই কি অবসাদের জেরেই আত্মহত্যা না এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে অন্য কোনও ষড়যন্ত্র? আর সেই সত্য খুঁজে আনতেই ফের উঠেপড়ে লেগেছে সিবিআই। মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীসও সিলমোহর দিয়েছেন সেই খবরে। তিনি জানিয়েছেন, তদন্ত এখনও চলছে। এতদিন কিছু রটনা, কিছু ঘটনাকে নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিলেন গোয়েন্দারা। তবে এবার তথ্যপ্রমাণ-সহ একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চাইছেন সিবিআই কর্তারা।
আরও পড়ুন: আড়াই বছর পার, এখনও অধরা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু রহস্য, ঠিক কী ঘটেছিল সেই দিন?
যদিও সুশান্তের পরিবারের তরফের আইনজীবী বিকাশ সিংহের দাবি, এ ব্যাপারে তাঁদেরকে কিছুই জানায়নি সিবিআই। তাঁর আরও অভিযোগ, মামলাটিকে অহেতুক দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দল। স্বাভাবিক ভাবেই এতদিন বাদে সুশান্ত মামলাকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসার ব্যাপারটি নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। আসছে বছর লোকসভা ভোট। আর ঠিক তার আগে সুশান্ত মামলাকে কবর থেকে তুলে আনার পিছনে রাজনৈতিক ছক দেখছেন অনেকেই। তবে আদৌ কি এত সব কিছুর পরেও হবে সুশান্ত-মামলার কিনারা। সিবিআইয়ের মতো তাকিয়ে আছেন ভক্তরাও।