বাবুলাল সম্পর্কিত তালিকা : সাদিক হোসেন

Bangla Short Story: ভোররাতে মুততে উঠেছিল লেডিমিঞা। ফিরে এসে বাবুলালকে চাদরের ভেতরে টেনে নিল। লুঙ্গি উঠে গেল কোমরের উপর। পা উঠল পেটের উপর।

বাবুলাল কেলিয়ে কেষ্ট হয়ে গেল। তবু নীল হল না।

এই গল্পের শেষ লাইন হিসাবে উপরের বাক্য দু'টি আবার ফিরে আসবে। অর্থাৎ, আপনারা শুরুতেই বুঝতে পেরেছেন গল্পটি বাবুলাল সম্পর্কিত এবং বাবুলালের ‘কেলিয়ে কেষ্ট’ হয়ে উঠবার বিবরণ মাত্র। সুতরাং, আর দেরি না করে, আমরা বরঞ্চ সরাসরি গল্পে ঢুকে যাই। অবশ্য এটি নেহাতই বাবুলালের কাহিনি। গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। ফলত, গল্প লেখার পরিশ্রম না করে, আমরা কিছু লিস্টি দিয়েও কাজটি সেরে ফেলতে পারি।

হ্যাঁ, এটাতে দু-পক্ষেরই সময় বাঁচবে।

সো, গাইজ, নিচে সেই তালিকা দিতে থাকলাম:

১) পণ্ডিতদের মতে প্রতিটা মানুষই তার সময় দ্বারা নির্মিত। সময় বলতে অবশ্য এখানে শুধুমাত্র টাইম বলা হচ্ছে না। ম্যায় সময় হুঁ — এই টাইপের ব্যাপার আর কী। কিন্তু আসগারের মতে তার ছেলের কেলিয়ে পড়ার পেছনে রয়েছে একটা হিমালয়ান ব্লান্ডার। সে ছেলের নাম রাখতে চেয়েছিল — নজরুল। নজরুল মানে কবি নজরুল। যদিও আসগার নজরুল সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানত না। কবিতা লিখত গরম- গরম, মুসলমান… এসব জানতো। গান সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। বাবরি ছাঁট চুল পছন্দ না হলেও; নজরুল, যেহেতু, সে জেনেছে, হেবি মানুষ — ছেলের নাম সেটাই রাখবে ঠিক করে ফেলেছিল। এছাড়া একসময়ের বিখ্যাত পুলিশ অফিসারের নামও নজরুল। এঁকে আসগার টিভিতে দেখেছে। ফলে সে নিশ্চিত ছিল — বিসমিল্লায় গলত হতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু তুমি যাকে ভাবছ ফিটফাট, আসলে সে বাবুঘাট। এক্ষেত্রেও হলো তাই। টাকা জোগাড়ে দেরি হওয়ায় আঁকিকা পিছিয়ে যেতে লাগল। পিছোতে পিছোতে বাসের মানুষের মতো এগিয়ে গেল। আর, যে হতে পারত নজরুল, সে হয়ে গেল বাবুলাল।

২) বাবুলাল প্রথম থেকেই হারামি ছিল। স্কুলে গিয়ে মুতে ফেলেছিল চারবার। পঞ্চমবারে হিসু করল না, ব্ল্যাকবোর্ডে লিখল — B + R

৩) খেলার মাঠে, সবার সামনেই, বাবুলাল তার স্যান্ডো গেঞ্জির ভেতর দুটো মার্বেল এঁটে দাঁত কেলিয়ে রুক্সানাকে বলল — দেখ, তোর মতো মোরও বুক হইচে। তুই মোর লাভার হবি?

৪) রুক্সানা সেখানেই কেঁদে ফেলায় খবরের সঙ্গে ফেক নিউজও রটে যায়। B + R ছাড়াও তাদের নাকি গুলাব মিঞার নির্মীয়মাণ দোতলায় ‘ওই’ করতে দেখা গেছে — এইসবও রটে। কিন্তু ঘটে না। ঘটলে বাবুলালের মস্তি হতো।

৫) রুক্সানার মা এল মগরেব বাদ। বলল — হারামির বাচ্চা। আসগার তার সঙ্গে আগেই একমত হয়েছিল। আসগারের বউ বলল, শোগো। বাবুলাল এসব শুনে ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে ছিল। সুরো টানার মতো থুতু টানছিল। বুঝতে পেরেছিল হেবি ডিসিশন আসতে চলেছে।

৬) রাতের ডিসিশনে তাকে ভোরের ট্রেনে চলে যেতে হল ওস্তাগারের দলিজে। সঙ্গে চাস্ত দাদা রসুল।

৭) দোকনোরা মেটিয়াবুরুজে এসে খাপ খাইয়ে নেয়। রসুল তো সেলাইমেশিন চালাচ্ছে। কিন্তু বাবুলালকে দেখে আবু তালেব বলল — এই বাঁড়াটা শোন।

কী?

কাজ করতি পারবি?

হুম।

রাত্তিরে কাঁদবি না তো।

আবু তালেব ওস্তাগার। তার পাশেই বসেছিল কাটিং মাস্টার লেডিমিঞা। বাবুলালকে এবার আর উত্তর দেবার সুযোগ দেওয়া হল না। ওরা দু'জনাই হাসতে লাগল। দু'জনার গাল থেকেই গুটকার থুতু বাবুলালের গায়ে ছিটকে আসছিল। গুটকার গন্ধটা বাবুলালের ভালো লাগছিল। সে সুরুত করে থুতু টেনে নিল।

আরও পড়ুন- আয়না ভবন : সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়

৮) সেলাইয়ের কাজ দেওয়া হয় না বাবুলালকে। তাকে ঘরের কাজে ঢুকিয়ে দিল আবু তালেব। ছোট ছেলেটার বয়স তিন। তাকেই সামলায় বাবুলাল। দোকানে যায়। সকালে উঠে ডালপুরি কিনে আনে। আবু তালেব তাকে দিয়ে গা টেপায়। সারাদিন গুটকার থুতু ফেলে কোকাকোলার বোতলে। রাতের বেলা সেটা পরিষ্কার করে নিয়ে আসতে বলে। বাবুলাল টাইমকলের পানিতে থুতু ভর্তি বোতলটা ধোয়। থুতু সারা দিনে জমে গিয়েছে। সহজে বেরোতে চায় না। পানি দিয়ে নাড়িয়ে নাড়িয়ে সাফ করতে হয়। তবু কষের দাগ লেগেই থাকে।

৯) এসবে বাবুলালের তেমন অসুবিধা হয়নি। সে নিজেও গুটকা খাওয়া শিখে গিয়েছিল। তবে তার ব্র্যান্ড ছিল শিখর। আবু তালেব খেত রজনীগন্ধার সঙ্গে তুলসী প্যাক করে। সেটার দাম অনেক।

১০) সমস্যা অন্য জায়গায়। রোজ ডালপুরির সঙ্গে চা খেয়ে বাবুলালের হাগা এঁটে গিয়েছে। এদিকে একটাই পায়খানা। দর্জি ১২ জন। লেডিমিঞাকে নিয়ে ১৩। বরাদ্দ সময়ে কিছুই বেরোয় না। দরজায় ধাক্কা পড়ে। শুকনো পোঁদ ছুঁচিয়ে বেরিয়ে আসতে হয় বাবুলালকে। ওদিকে পেটে গ্যাস এমন, পাশে লাইটার জ্বালালেও আগুন ধরে যেতে পারে।

১১) নভেম্বরের শেষ। হালকা ঠান্ডা মারছে রাতে। বাবুলালের চাদর জোটেনি। ফাঁকা দলিজে সে কুঁকড়ে যায়।

১২) ভোররাতে মুততে উঠেছিল লেডিমিঞা। ফিরে এসে বাবুলালকে চাদরের ভেতরে টেনে নিল। লুঙ্গি উঠে গেল কোমরের উপর। পা উঠল পেটের উপর। বাবুলাল এতক্ষণে ঠান্ডা থেকে বাঁচছিল। এবার ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে লাথি খেল লেডিমিঞার থেকে। শালা চুদির ভাই চাদরের ভেতর পেদেছে।

বাবুলাল আবার চাদরের বাইরে চলে গেল।

১৩) প্রতি বুধবার হাপ্তা দেওয়া হয়। বাবুলাল পেয়েছে ১৫০ টাকা। এতদিনে তার কিছু দোস্ত জুটে গিয়েছিল। সে তাদের সঙ্গে বিড়ি ফুঁকল। স্কুটির পেছনে উঠে মেয়ে দেখল। শিক কাবাবের সঙ্গে চুটিয়ে পরোটা সেঁটে কোকাকোলা খেল। কোকাকোলা খেতে খেতে আবার হারামিগিরি তার মগজে আসায় পায়খানা পরিষ্কার করবার অ্যাসিড কিনল এক বোতল।

১৪) পরের দিন গুটকার থুতু ফেলা বোতলটা অ্যাসিডে সাফ করল সে। এবার কষগুলোও উঠে গেছে। সেই বোতলে লেডিমিঞাকে পানি ভরে অন্য বোতলে গুটকার থুতু ফেলার ব্যবস্থা করল। লেডিমিঞা গুটকার থুতুতে পানি খাচ্ছিল। বাবুলাল সুড়ুত করে থুতু টেনে দাঁত ক্যালাচ্ছিল। বাবুলাল কেন হাসছিল লেডিমিঞা বুঝতে পারছিল না। জিজ্ঞেস করল হাসিস ক্যান?

হাসতিও পারব না?

বাবুলালের উত্তর শুনে বাকিরাও হাসল। লেডিমিঞা আবার গলা ভেজাল বোতল থেকে।

১৫) আবু তালেবের বড় মেয়েটা ক্লাস নাইনে পড়ে। পানচিনি (পাকাদেখা) হয়ে গিয়েছে। কুরবানির ইদ-বাদ বিয়ে। এই ক'দিন মেয়েকে সামলে রাখতে হয়। পানচিনি হয়ে যাওয়া মানে সে শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি। অন্যের সম্পত্তিকে সামলিয়ে রাখা ভদ্দরলোকদের কাম। এই কারণে স্কুলে নাজিমার পিছু পিছু বাবুলালকে লাগানো হয়েছে। স্কুল ছুটির আগে সে স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। নাজিমা ব্যাগটা বাবুলালকে দিয়ে কানে ইয়ারফোন গুঁজে ঘরে ফেরে।

১৬) লেডিমিঞা বলল, বই দেখতি যাবি?

খাতুনমহলে পুরনো হিন্দি বই লাগে। সেদিন চলছিল — হেট স্টোরি ২। বাবুলালকে পাকড়ে সিনেমা দেখল লেডিমিঞা। বেরিয়ে এসে বাবুলাল বলল, ১০০টাকা দাও।

লেডিমিঞা ভেবলে গেছে। শালা আমি বই দেখাব। আবার তোকে টাকাও দেব। বাঁড়া ভাগ।

বাবুলাল সুড়ুত করে থুতু টেনে বলল, তুমি যে মোকে ঘাঁটাঘাঁটি করলে, টাকা দেবে না?

এরপর থেকে বাবুলাল নিয়মিত লেডিমিঞার থেকে টাকা গপচাতো। দোস্তরা ওর টাকায় মস্তি করত। সে দাঁত দিয়ে বিয়ারের ছিপি খুলতে শিখে গিয়েছিল। বাইক চালানো শিখছিল। কিন্তু বাইকের অভাবে তার এই বিদ্যাটা খানিক অধরা থেকে যাচ্ছিল।

১৭) স্কুলগেটের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল বাবুলাল। নাজিমা স্কুল থেকে বেরল না। সে এল একটা ছেলের বাইকে চেপে। ছেলেটা তাকে স্কুলে ছেড়ে আবার চলে গেল ধুলো উড়িয়ে। ধোঁয়া ছড়িয়ে। ছেলেটার চুল নীল রঙ দিয়ে হাইলাইট করা। বাবুলাল জিজ্ঞেল করল, বুবু, এইসব করো না। ওস্তাগার জানতি পারলি মোকে ক্যালাবে।

তুই জানালি জানবে।

বাবুলাল আবার হাসল। নাজিমা ব্যাগটা বাবুলালকে দিয়ে বলল, আবার হাস।

বাবুলাল আবার হাসল।

তুই হাসতি গেলি সুরো টানার মতো আবাজ করিস কেন?

বাবুলাল সুরো টানল।

১৮) সেলাই করতে গিয়ে আঙুলটা মেশিনের তলায় চলে এসেছিল রসুলের। সূচটা ভেঙে ভেতরে থেকে গিয়েছিল। ওষুধের দোকানে গিয়ে পেইনকিলার খেয়েছিল। ক'দিন পর দেখা গেল আঙুল থেকে পুঁজ বেরোচ্ছে। গোশের মতো উপরটা লাল। তখন কেটে ফেলা ছাড়া উপায় ছিল না। ওস্তাগার ৫০০ টাকা দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছিল। সেটা নিয়ে বাওয়াল দেওয়াতে সাঁটিয়ে চড় খেল। বাবুলাল চাস্তভাইকে ১০০০টাকা দিল। টাকাটা দিয়ে বলল, তুমি তো আর কাম করতি পারবে না। ফোন লিয়ে কী করবে?

এটার দাম ছ'হাজার।

মুই তোমাকে আরও ৫০০ দিচ্ছি। সেকেন্ডহ্যান্ড তো।

১৯) দলিজ থেকে মাঝে মাঝেই ডাক পড়ে বাবুলালের। বেশিরভাগ সময় আবু তালেব ডাকে। সেদিন ডাকল নাজিমা। বাবুলাল এলেই বলল, ওই, একবার সুরো টেনে দেখা।

বাবুলাল থুতুটা জিভের ডগায় এনে টেনে নিল গলায়। শিসের মতো আওয়াজ হল তাতে। হেসে গড়িয়ে পড়ছিল নাজিমা। বাবুলাল জিজ্ঞেস করল, তোমার ফটো নেব?

ফটো?

বাবুলাল তার পকেট থেকে রসুলের ফোনটা বের করল।

ফটো নিয়ে কী করবি?

এমনি।

এমনি কেন?

এমনি।

বাবুলাল এবার স্বভাবদোষেই সুরো টানল। শিসের শব্দে হাসতে হাসতে প্রায় শুয়ে পড়ল নাজিমা।

২০) লেডিমিঞা বলল, ১০০০ টাকা শোধ দিবি কবে?

বাবুলাল চুপ।

শোধ দিতি হবে না। তোকে মাফ করলুম।

লেডিমিঞা বাবুলালকে নিয়ে দলিজের পেছনে চলে গেল। প্যান্ট খুলে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল বাবুলাল। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো সেলাইমেশিন চলার শোঁ শোঁ আওয়াজ হচ্ছিল।

২১) স্কুল থেকে নাজিমাকে নিয়ে আসবার সময় সে জানাল, মুই বাইক চালাতি শিখে গিছি। তুমি মোর বাইকে বসবে?

নাজিমা বলল আব্বাকে বলে দোবো তুই আমার ফটো তুলেছিস।

বাবুলাল মাথা নিচু করে নিয়েছিল। নাজিমা, এই প্রথম খেয়াল করল, বাবুলাল ভয় পেলেও সুরো টানে। ভয়, হাসি, কান্না — সবেতেই বাবুলালের একই এক্সপ্রেশন। নাজিমা রাস্তা থেকে কুলফি কিনে খেতে খেতে ঘরে ফিরল।

২২) বুধবারে দোস্তের বাইক চালাল বাবুলাল।

২৩) লেডিমিঞার চ্যাট চুষল ভোরবেলা।

২৪) শিখরটা পুরো গিলে ফেলায় হেঁচকি তুলল আধঘণ্টা ধরে। লেডিমিঞা পানির বোতল এগিয়ে দিলে বমি করে ফেলল।

২৫) জ্বর এল তারপর।

২৬) লেডিমিঞা তাকে হাতুড়ের কাছে নিয়ে গেছিল।

২৭) দু-দিন পর সেরে উঠলে জানতে পারল আবু তালেব মেয়ের দিদিমণির সঙ্গে দিঘায় গিয়েছে।

২৮) আবু তালেবের ঘর থমথমে। নাজিমার মা কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, এসব জানতি পারলি মেয়েটার কী বে' হবে! আল্লা গো।

নাজিমা গান শুনছিল। এরপর থেকে তার স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল।

২৯) কুরবানির ইদে দুটো গরু দিল আবু তালেব। একটা ঠ্যাঙ পাঠাল মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। বাবুলাল বাইক করে বিভিন্ন জায়গায় গোশ দিয়ে আসছিল। রসুল এসেছে গোশ সংগ্রহ করতে। বাবুলাল তার ভাগের গোশ রসুলের হাতে ঘরে পাঠাল। রসুল বলল, এসব ছাড়। মোর সাথে রঙের কাজ করবি চল। সামনের হাপ্তায় কেরালায় যাচ্ছি।

বাবুলাল রসুলের হাতের দিকে চেয়েছিল। তর্জনীটা দ্বিতীয় গাঁট থেকে কাটা পড়েছে। সে ভাবছিল, এই হাত নিয়ে রসুল রঙের ব্রাশ ধরে কীভাবে?

৩০) লেডিমিঞা আবু তালেবের কাছের লোক। আবার ডাকলে বাবুলাল শর্ত দিল, বাইকের চাবিটা তাকে দিতে হবে।

৩১) ইদের বাজারে দাম বেশি নিচ্ছিল। ইদের পর ৩০০ টাকা খরচ করে সে চুলের সামনেটা নীল করে নিল।

৩২) বাবুলালের ডাক পড়েছিল ভেতর ঘরে। সে ঘরে গিয়ে দেখল পায়ের উপর পা তুলে নাজিমা কানে ইয়ারফোন গুঁজে গান শুনছে। পায়ের চেটোটা তালে তালে নাচাচ্ছে। হাঁটু অব্ধি পায়ের লোম দেখা যাচ্ছিল। নাজিমা বলল, কুলফি নিয়ে আয়।

বাবুলাল দাঁড়িয়েই থাকে।

কীরে!

বাবুলাল সুরো টানল।

চুলে তো রঙ করেছিস। কুলফি কেনার টাকা নেই?

বাবুলাল দৌড় লাগাল।

৩৩) রাতের বেলা পায়খানায় গিয়েছিল বাবুলাল। সন্দেহ হওয়ায় লেডিমিঞা তার পিছু নিল। দেয়ালের একজায়গায় ফুটো। সেটায় চোখ রেখে সে দেখল বাবুলাল খিঁচছে!

হাঁটুর উপর লুঙ্গিটা তুলে বাবুলালের অপেক্ষা করেছিল সে। বাবুলাল দরজা খুলে বেরোলে উঠে দাঁড়াল। তাকে দলিজের পেছনে যেতে বলল। বাবুলাল টাকা চাইলে লেডিমিঞা খুকখুক করে কাঁদতে শুরু করে দিল। আর গেল না। বলল, মোর বালিশের তলা থেকে নিয়ে নে।

৩৪) সামনের সপ্তাহে নাজিমার বিয়ে। ২০০০ জন লোক খাবে। মার্কেটিং শুরু হয়ে গিয়েছিল। দলিজের পেছনটা সাফ করে বাঁশ পোঁতা হচ্ছে। সেখানে রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৩৫) রাতে ডবকা চাঁদ উঠেছিল। ইন্সটাতে নাজিমার ফটো দেখছিল বাবুলাল। নতুন ফটোটা হাতের মেহেন্দির। তার আগেরটা ছিল নদীর ধারের। সেলফি নয়। অন্য কেউ তুলেছিল। বাবুলাল সন্দেহ করে, সেই বাইকের ছেলেটাকে। এছাড়া নদীর ধারে নাজিমা যাবেই বা কীভাবে! সে মেসেঞ্জারে গেল। সেখানে নাজিমার ছবির পাশে সবুজ ফুটকি। পাশ ফিরে সেই ফুটকিটার উপর হাত বোলাচ্ছিল সে। হাত বোলাতে বোলাতে কখন যে কোথায় চাপ লেগে ফোন করে ফেলেছে খেয়াল করেনি। নাজিমা ফোনটা কেটে দিল। ভয়ে ঘাম দিচ্ছিল বাবুলালের। সুরো টানছিল। এবার দেখল নাজিমা টাইপ করছে। নাজিমা কি গাল দেবে? নাজিমার মুখে গাল শোনেনি কোনওদিন। সে ফোনটা উল্টে বুকের উপর রাখল। একবার ভাইব্রেট হতেই তুলে দেখল নাজিমা লিখেছে, বাইকটা চুপ করে বের কর। আব্বা জানতি পারলি তোকে খুব মারবে।

আরও পড়ুন- কার্টুন: সাদিক হোসেন

৩৬) লক খুলে বাইকটাকে ঠেলে ঠেলে সে রাস্তার উপর নিয়ে এল। রাস্তায় ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে রয়েছে নাজিমা। সে পেছনে উঠে বলল, হেবি জোরে চালাবি।

৩৭) চাঁদটা তাদের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের গতির সঙ্গে চাঁদটা দৌড়চ্ছিল। নাজিমার উরুর খানিকটা ছুঁয়ে যাচ্ছিল বাবুলালের কোমরে। তারপর তীব্র আলোয় সব ঝলসে গেল।

৩৮) নাজিমার চোখের নীচটা ছলে গিয়েছে। সেটা থেকে চুঁইয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। বাবুলালের গোড়ালির চামড়াটা পুরো উঠে গিয়েছে। নাজিমা কাঁদছিল। আব্বা তোকে খুব মারবে।

বাবুলাল বাইকটাকে কোনওমতে খাড়া করে বলল, বুবু আয়নায় তাকাও। বেশি কিছু হয়নি। ঘরে গে' বলবে পোকা কামড়েছে।

পোকা কামড়ালি এরম হয়?

তো কী বলবে?

বলব তুই মোকে ফেলে দিছিস।

বুবু...

তাড়াতাড়ি চল। যাবার সময় আবার ফেলে দিবি না যেন।

বুবু...

আর সুরো টানতি হবে না। তোর লেগে কেস দোবো না।

৩৯) সাবধানে বাইকটাকে রেখে শুয়ে পড়েছিল বাবুলাল। গোড়ালির যন্ত্রণায় ঘুম আসছিল না। ভোরে যখন ঘুম এল সে নাজিমার উরু দেখল। তাতে লোম রয়েছে। বাবুলালকে দেখল লেডিমিঞা।

৪০) আবু তালেব যখন পেতলের কাঁচিটা নিয়ে বাবুলালের উপর ঝুঁকে আছে তখনও বাবুলাল স্বপ্নে বিভোর। আবু তালেব ভেবেছিল মালটাকে কেলিয়ে এলাকা ছাড়া করতে হবে এখনই। কিন্তু বাবুলাল বিড়বিড় করছিল। আবু তালেব বুঝতে পারছিল না সে কী বলছে। লেডিমিঞাকে ইশারা করতে লেডিমিঞা কান পাতল। আবু তালেব জিজ্ঞেস করল, কী?

লেডিমিঞা ওস্তাগারের কানে ফিসফিস করে বলল, গুদ... গুদ... বলতেছে।

ঠিক শুনেছ?

লেডিমিঞা আবার কান পাতল। তারপর ওস্তাগারের দিকে চেয়ে ঘাড় ঝোঁকাল।

৪১) আসগারকে খবর দেওয়া হয়েছিল। এল দুপুরবেলা। এসে দেখল বাবুলাল শুয়ে আছে দলিজে। চোখদুটো ফুলে গিয়েছে। ঠোঁট কাটা। বাকি শরীর চাদরে ঢাকা ছিল। একটা হাত বেরিয়ে ছিল চাদর থেকে। সেটার ভঙ্গি ক্যালেন্ডারে দেখেছে আসগার। নৃত্যরত নিমাই। তবে গলার কাছটা ফাঁকা। ওখানে কোনও রঙ নেই।

৪২) বাবুলাল কেলিয়ে কেষ্ট হয়ে গেল। তবু নীল হল না।

এখানেই তালিকাটি শেষ করলাম। বাকিটা যা রইল তা হল — টেম্পু করে তার বাড়ি ফেরা। টেম্পুর ভাড়া আবু তালেব দিয়ে দিয়েছে। এছাড়া নগদ ১০০০০-ও।

বাবুলালের মা রান্নাঘর থেকে দেখছিল, বাবুলালকে নাবানো হচ্ছে। সে নিথর। আসগার কিংবা তার বউ — কেউ-ই জানত না কবি নজরুল জীবিত অবস্থাতেই মূক ও বধির হয়ে গিয়েছিলেন।

এই তথ্যটি আসগারের বাপ জানলে - তালিকার প্রথম পয়েন্টটাকেই বাদ দেওয়া যেত।

More Articles