বাংলাদেশ শাটডাউন, হাসিনার পুলিশের নিশানায় সেই বিএনপি

Bangladesh job quota protest: এদিকে শাসক দল এই বিশৃঙ্খলার দায় চাপিয়েছে বিরোধী দল বিএনপির উপরেই। প্রশাসনের তরফে দাবি, শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে স্থানীয় বিএনপি এবং জামাত-ই-ইসলামির কর্মীরা হামলার পরিস্থিতি তৈরি ক...

দু'দিন আগেই ছাত্রবিক্ষোভ চলাকালীন ভয়াবহ বিক্ষোভে প্রাণ গিয়েছে ৬ কলেজ পড়ুয়ার। গত কয়েকদিন ধরেই কোটা বিরোধী বিক্ষোভে তোলপাড় বাংলাদেশ। গত বৃহস্পতিবার থেকেই সেই আন্দোলন চরমে ওঠে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ছাত্রছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীরা। বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থায় সংস্কার চান তাঁরা। কিন্তু সেই আন্দোলনকে ঘিরে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখল বাংলাদেশ, তা কার্যত নজিরবিহীন।

বুধবার সন্ধেবেলা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, দোষীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার। ইতিমধ্যেই অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ-সহ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জায়গায় জায়গায় বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সংরক্ষণবিরোধী ছাত্রযুবদের এই সর্বাত্মক অবরোধে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকা তো বটেই, গোটা দেশের বিভিন্ন শহরেই বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের আকার নিয়েছে। খোলা বলতে শুধু হাসপাতাল, সংবাদমাধ্যমের মতো জরুরি পরিষেবা। তা বাদ দিয়ে সমস্ত বেসরকারি দফতর থেকে শুরু করে দোকান-বাজার সমস্ত বন্ধ।

আরও পড়ুন: বন্ধ স্কুল-কলেজ, বিকল ইন্টারনেট! যে অন্ধকারের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ

মঙ্গলবারের ঘটনার প্রতিবাদে কার্যত গর্জে উঠেছে গোটা দেশ। সংরক্ষণবিরোধী পড়ুয়াদের শান্তিপূর্ণ জমায়েতে যেভাবে গুলি চালিয়েছে পুলিশ ও আধাসেনা, যেভাবে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের উপর ছোড়া হয়েছে পাথর, তা দেখে নিন্দায় সরব গোটা বিশ্ব। এই পরিস্থিতিতে নিরপরাধ পড়ুয়াদের মৃত্যুর প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থা শেষ করার দাবি তুলে বৃহস্পতিবার সর্বাত্মক অবরোধ পালনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

যার প্রভাবে বাংলাদেশের গণপরিবহন কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। জাতীয় সড়কে আটকে রয়েছে হাজার হাজার যানবাহন। এমনকী ঢাকার মতো ব্যস্ত রাস্তাতেও পুলিশের গাড়ি আর অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া অন্য যানবাহন চোখে না পড়ার মতোই। তার উপরেই চলছে অবরোধ। সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনকারীদের যৌথমঞ্চ, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়কারী আসিফ মাহমুদ বুধবার রাতে পুলিশি নিপীড়ন এবং শাসকদলের হামলার প্রতিবাদে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর ডাক দিয়েছিলেন। সেই ডাকে সাড়া মিলেছে গোটা দেশের তরফেই।

Bangladesh job quota protesters call for nationwide shutdown

দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবারই জানিয়েছিলেন, এই সন্ত্রাস দমনে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে সরকার। পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে আন্দোলনকারীদের দমনেই বেশি সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে প্রশাসনের মধ্যে। বুধবারই বিরোধী দল বিএনপি-র ঢাকার কার্যালয়ে তালা ঝুলতে দেখা গিয়েছিল। জানা যায়, সোমবারই সেই অফিসে তল্লাশি অভিযানও চালিয়েছিল পুলিশ। সেখান থেকে দেশি-বিদেশি অস্ত্র, পাঁচশোর কাছাকাছি লাঠিসোঁটা, কয়েক বোতল পেট্রোল ও ককটেল উদ্ধার হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

 

সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের সংঘর্ষে মঙ্গলবার ছ’জনের মৃত্যু হয়েছিল বাংলাদেশের তিন শহর— ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং রংপুরে। তার পরেই বুধবার সমস্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ‘অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ’ ঘোষণা করে পড়ুয়াদের ক্যাম্পাস ও হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খালি করতে গিয়ে বুধবার প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর জোর করে খালি করতে গেলে বিক্ষোভের মুখ পড়ে পুলিশ। আখড়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। কাছেই একটি উড়ালপুলের টোল প্লাজ়া এবং পুলিশ কিয়স্কেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। চলে ভাঙচুর, এমনকি পথচলতি যানবাহনেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তখনই বলপ্রয়োগে বাধ্য হয় তারা। কাঁদানে গ্যাস, লাঠি, সাউন্ড গ্রেনেডের পাশাপাশি ছররা গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ।

এদিকে শাসক দল এই বিশৃঙ্খলার দায় চাপিয়েছে বিরোধী দল বিএনপির উপরেই। প্রশাসনের তরফে দাবি, শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে স্থানীয় বিএনপি এবং জামাত-ই-ইসলামির কর্মীরা। হামলার পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বুধবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণেও সেই সন্ত্রাসীদের কথাই বারবার উঠে এসেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের হাতে ঘেরাও উপাচার্যকে মুক্ত করতে গিয়েও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন পুলিশকর্মীরা। হাসিনা বুধবার ছ’জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁক কথায়, ‘‘আমি দ্ব্যর্থহীন ভাবে ঘোষণা করছি, যারা হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তারা যে-ই হোক না কেন, তারা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ যদিও নিহত ৬ জনের মধ্যে আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি রয়েছেন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের এক কর্মীও।

আরও পড়ুন:বাংলাদেশের কোটা ব্যবস্থা ঠিক কী? কেন এর বিরোধিতায় প্রাণ হারালেন পড়ুয়ারা?

মুখে আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার কথা বললেও এই কোটা সংস্কার সংক্রান্ত বিষয়টি আদালতের উপরেই ছাড়তে চাইছে শেখ হাসিনা সরকার। বিক্ষোভকারীদের মদত জোগাচ্ছে বিরোধীদল বিএনপি এমন অভিযোগও শোনা গিয়েছে শাসক দল আওয়ামী লিগের তরফ থেকে। বুধবারেই ঢাকায় দলের একটি সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের করেন, এখন কোটা আন্দোলন সাধারণ পড়ুয়াদের আন্দোলন নয়। বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ দিতে চাইছে বলেও মন্তব্য করেন করেন তিনি। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদও দাবি করেছেন, বিএনপি-জামায়াত কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢুকে কর্মসূচি ঠিক করে দিচ্ছে এবং পড়ুয়ারা না বুঝেই বিক্ষোভ করছে। সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি। যদিও এই আন্দোলনে তাঁদের নৈতিক সমর্থন আছে বলেই জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে এই আন্দোলনে তাঁরা সরাসরি জড়িত নন বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

এই পরিস্থিতিতে ইচ্ছা করেই শাসকদল আওয়ামি লিগের নির্দেশে বিরোধী দল বিএনপিকে নিশানা করছে পুলিশ ও প্রশাসন, এমনটাই মনে করছেন বিএনপি নেতানেত্রীরা। সব মিলিয়ে ক্রমশ পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে বাংলাদেশে। কোটা বিরোধী এই আন্দোলনে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এখনও পর্যন্ত। জখম প্রায় চারশো। অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্ধকার পড়ুয়াদের ভবিষ্যত। সব মিলিয়ে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে গোটা দেশ।

More Articles