বন্ধ স্কুল-কলেজ, বিকল ইন্টারনেট! যে অন্ধকারের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ
Bangladesh quota protest: ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলতে দেখা যায় এ দিন সকাল থেকেই। এমনকী সেই অফিসের মূল ফটকের সামনে ক্রাইম সিন লিখে সিলও করে দিয়েছে পুলিশ।
ছাত্রবিক্ষোভে দিন কয়েক ধরেই উত্তাল বাংলাদেশ। সেখানকার ছাত্রছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীরা চান কোটা ব্যবস্থায় সংস্কার। শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন এক সমাজ গড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে পথে নেমেছেন বাংলাদেশের হাজার হাজার পড়ুয়া। আর সেই আন্দোলন এমনই বিশাল রূপ নিয়েছে, যে তাতে কার্যত কেঁপে উঠেছে গোটা বাংলাদেশ। শুধু একটি বা দু'টি জায়গায় নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতেই আকার নিয়েছে ছাত্র আন্দোলন। চট্টোগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা বিভিন্ন জায়গায় ঢেউ উঠেছে বিক্ষোভের। রাস্তা অবরোধ থেকে শুরু করে ট্রেন লাইন বন্ধ করে বিক্ষোভ, কী হয়নি সেখানে। মঙ্গলবার বিকেলে সেই বিক্ষোভের আগুন চরমে পৌঁছয়, যখন আন্দোলনরত পড়ুয়াদের উপর গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে ছাত্রলিগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় অন্তত ৫ পড়ুয়ার প্রাণ গিয়েছে। আহত শতাধিক। এরই মধ্যে রাস্তায় পিটিয়ে মারা হয় আরও এক আন্দোলনকারীকে।
ছাত্রবিক্ষোভ সামাল দিতে কার্যত হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবারই শিক্ষামন্ত্রকের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশের সমস্ত স্কুল কলেজ বন্ধ রাখার কথা। তাতে হিংসা, বিক্ষোভের আগুন খানিকটা হলেও প্রশমিত করা যাবে বলে দাবি সরকারের। ইতিমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় ফোর-জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ওই এলাকা সম্পূর্ণ ভাবে ইন্টারনেটবিচ্ছিন্ন। এরই মধ্যে বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালে এ নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য। তিনি প্রশ্ন তোলেন বিক্ষোভকারীদের স্লোগান নিয়ে। পাশাপাশি এই কোটা সংস্কারের ব্যপারে সরকারের করণীয় কিছুই নেই বলেও দায়িত্ব এড়ান তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের কোটা ব্যবস্থা ঠিক কী? কেন এর বিরোধিতায় প্রাণ হারালেন পড়ুয়ারা?
এর মধ্যেই আরও উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ। গত বৃহস্পতিবার থেকেই দফায় দফায় অশান্ত হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা। সোমবার সেই বিক্ষোভ বাড়তে থাকে। যা চরমে পৌঁছয় মঙ্গলবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবার থেকেই বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। অনেক পড়ুয়াই অভিযোগ করেছেন, মধ্যরাত থেকেই তাঁরা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না। এমনকী নিজেদের মোবাইল থেকে সরাসরি ফোনটুকুও করতে পারছেন না তাঁরা। অপারেটর সূত্রে খবর, তারা প্রশাসনিক নির্দেশ পেয়েছেন, যাতে পরবর্তী নির্দেশ আসা না পর্যন্ত ফোর-জি নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হয়। এমনকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না সংবাদমাধ্যমকেও। কেন এই নিষেধাজ্ঞা? বিক্ষোভ-হিংসার খবর যাতে বাইরে না আসতে পারে, তার জন্যই কি এই ব্যবস্থা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ঘুরছে বহু পোস্ট। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের দমন করা হচ্ছে সেই সুযোগ নিয়ে।
মঙ্গলবারের বিক্ষোভে শামিল হওয়া পড়ুয়াদের লক্ষ্য করে ছাত্রলিগের জমায়েত থেকে ছোড়া হয়েছিল পাথর। ছোড়া হয় গুলিও। তাতে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা সকলেই পড়ুয়া। ওই দিন মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশও। তাতেও বহু বিক্ষোভকারী জখম হন। ওই ঘটনার পর বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা আসতে থাকে একের পর এক। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিকেল চারটার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ছাত্রদের এবং বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। মঙ্গলবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারের কাছ থেকে আসে সেই নোটিস। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও। সেই সঙ্গে বন্ধ থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি আবাসিক হল। বুধবার বিকেলে পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলা হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যে ছেলেদের হল ছাড়তে হবে। আর আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে হল ছাড়তে হবে মেয়েদের। বন্ধ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও। একই পরিস্থিতি নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও।
আরও পড়ুন: গুলি, রক্ত, মৃত্যু! কোটা আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশে শহিদ ৬ জন কারা?
এদিকে বুধবার তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বিএনপি-র অফিসেও। ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলতে দেখা যায় এ দিন সকাল থেকেই। এমনকী সেই অফিসের মূল ফটকের সামনে ক্রাইম সিন লিখে সিলও করে দিয়েছে পুলিশ। প্রহরা বসানো হয়েছে বিএনপি অফিসের আশপাশে। এদিন সকাল থেকেই ওই অফিসে কোনও নেতাকর্মী বা কর্মচারীদের আসতে দেখা যায়নি। এদিকে বুধবার দুপুরেই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করা হয় বিএনপি-সহ ৩৯টি রাজনৈতিক দলের তরফে। সূত্রের খবর, ওই অফিসে ইতিমধ্যেই তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশের বিশেষ দল। সেখান থেকে দেশি-বিদেশি অস্ক্র, পাঁচশোর কাছাকাছি লাঠিসোঁটা, কয়েক বোতল পেট্রোল ও ককটেল উদ্ধার হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে এত বড় ছাত্রআন্দোলন সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ দেখেছে কিনা সন্দেহ। মঙ্গলবার যে ভয়ানক হিংসার সাক্ষী থাকল দেশ, তার কড়া নিন্দা করেছেন দেশের বহু বিখ্যাত ব্যক্তিরাই। জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিব খান থেকে শুরু করে চঞ্চল চৌধুরী, হিংসার নিন্দায় সোশ্য়াল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন বহু তারকাই। কোথায় গিয়ে থামবে এই আন্দোলনের জোয়ার? আর কত মায়ের বুক খালি হবে? সেটাই ভাবাচ্ছে বিশ্বকে।